আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দলের বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ গতকাল শনিবার ঢাকা এসে পৌঁছেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে (বিজি-০৮৯) তার মরদেহ ঢাকার হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। মরদেহের সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সদস্যরাও দেশে ফিরেছেন। বরেণ্য রাজনীতিক সৈয়দ আশরাফ মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা সৈয়দ নজরুল ইসলামের সুযোগ্য সন্তান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের প্রবীণ ও জ্যেষ্ঠ নেতারা বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল আশরাফের মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় সেখানে এক হূদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে দলের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ওবায়দুল কাদের। এ সময় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ ও এনামুল হক শামীম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সন্ধ্যায় জানানো হয়, বিমানবন্দর থেকে সন্ধ্যা ৭টায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ ঢাকার ২১ বেইলি রোডের তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি তার বাসভবনে এসে পৌঁছায়। এ সময় তার পরিবারের সদস্য, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে গত রাতে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার প্রথম জানাজা হবে। এ সময় তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানাজায় সর্বস্তরের জনগণকে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এরপর হেলিকপ্টারযোগে মরদেহ কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় জানাজা দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। অতঃপর বাদ আছর ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ আশরাফ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি এক কন্যাসহ রাজনৈতিক সহকর্মী, বহু আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী ও নেতাকর্মী রেখে গেছেন। ফুসফুসে ইনফেকশনে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফকে গত ৩ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে না থেকেও কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন সৈয়দ আশরাফ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন গত বৃহস্পতিবার। তবে শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে বৃহস্পতিবারই স্পিকারের কাছে জমা দেওয়া হয় সৈয়দ আশরাফের চিঠি। কিন্তু সে সময় আর পেলেন না তিনি।
