• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
নদীর জীবন্ত সত্তার দাবি

নদীকে জীবন্ত মানবিক সত্তার দাবিতে নোঙর এর ভাসমান সেমিনার

জাতীয়

নদীর জীবন্ত সত্তার দাবি

  • পটুয়াখালী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নদী নিয়ে কাজ করা দেশি ও আন্তর্জাতিক গবেষক এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। তাদের বক্তব্য, নদীর অনুভূতিকে আমরা আমলে নেই না বলেই অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দখল, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন করে নদী মেরে ফেলছি। নদীর যে একটা নিজস্ব সত্তা আছে সেটিও আমরা ভাবি না। গতকাল মঙ্গলবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ‘রিভার : এ লিভিং বিয়িং’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন কথা উঠে আসে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জীবন বাঁচাতে পানি দরকার; জীবনের জন্য পানি দরকার। সেই পানিই যদি না থাকে তবে আমরা থাকতে পারব না। বাস্তবতা হলো আমরা নদীগুলো মেরে ফেলছি। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ আমরা করতে পারি না। যারা প্রয়োগ করবেন তারা তা করেন না বা করতে পারেন না। নদীর মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র নদীর সত্তাকে বাঁচাতে আইন করেছে। তবে পরিকল্পনায় অনেক গলদ আছে। আছে সমন্বয়ের অভাব।

তিনি বলেন, পানি ও নদী নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন নদীকে তার মতো থাকার অধিকার দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রগুলো যখন এটি না মানে তখন তার প্রভাব ভাটির দেশে বেশি পড়ে। আমরা তার উদাহরণ। নদীর অধিকার রক্ষায় সব দেশকে একটি প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। দু’দিনের আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের প্রথম দিন অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদী মরে যাওয়ার প্রভাব পড়ে আমাদের জীবন-জীবিকায়। নদীকে নদীর মতো থাকতে দেওয়ার বিকল্প নেই। নদীর জীবনকে মানুষের মূল্যায়ন করতে হবে। এছাড়া নদী বাঁচানো যাবে না।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, নদীকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদীকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। নদী একটি জীবন্ত সত্তা। আমাদের এই জীবন্ত সত্তাকে বুঝতে হবে। নদীর অনুভূতিকে বুঝতে হবে। এসব অনুধাবনের পর নদীবিষয়ক প্রকল্প হাতে নিতে হবে। নদীর যে সত্তা আছে সেটি বুঝা যায় যখন নদী মরে গেলে মানুষের ওপর তার প্রভাব পড়ে। নদী যখন খারাপ থাকে তখন মানুষের জীবনেও খারাপ প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নদীকেন্দ্রিক এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে।

আলোচনায় আরো উঠে আসে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মূল বিষয়গুলো। এক্ষেত্রে পানির অধিকার এবং সাধারণের সুরক্ষা, পানি গণতন্ত্র, পানিবিষয়ক উদ্ভাবন এমন বিভিন্ন ধ্যান-ধারণার বিনিময় এবং সংলাপকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। সম্মেলনে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নদীর সত্তাকে বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে। পানি, শক্তি, জীববৈচিত্র্য ও নদীবাহিত পলি- এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নদীর বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেন আলোচকরা।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ নদী জীবন্ত সত্তা থেকে মৃত সত্তায় পরিণত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নদী নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কেউ নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে বিবেচনা করছে না।

দু’দিনের এই সম্মেলনের প্রথম দিন পানি ও শক্তি এবং জীববৈচিত্র্য ও নদীবাহিত পলিবিষয়ক মোট ছয়টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেশি ও আন্তর্জাতিক গবেষকরা। এছাড়া ‘নদী ও জলের ছবি’বিষয়ক ভিন্নধর্মী ছবি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় সম্মেলনে। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের শেষ দিন জলবায়ু ন্যায্যতা এবং আন্তঃসীমান্ত নদী ও নদীর অধিকার রক্ষায় সাধারণ মানুষের উদ্যোগবিষয়ক মোট নয়টি প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads