বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ১০ কোটি রুপির চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাছে এই চেক হস্তান্তর করেন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। এ সময় দূতাবাসের তিন কর্মকর্তা বিএম জামাল হোসেন, মনসুর আহমদ বিপ্লব, মোফাকখারুল ইকবাল উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক অনুদানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নভূমি শান্তিনিকেতনের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ভবন। ভারত সরকার এই ভবনের জন্য জমি দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে গত বছর ২৫ মে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন। ওই ভবনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আরো ১০ কোটি রুপি অনুদান দেওয়া হয় গতকাল। এ ব্যাপারে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ এই ১০ কোটি রুপি দেওয়া হয়েছে। মূল অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদের রুপি দিয়েই ভবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম করা হবে।
বাংলাদেশ ভবনের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানান, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম, ব্যয়ভারসহ সব কাজ ঠিকঠাকভাবে চলতে পারে- সেদিকে লক্ষ রেখেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন ১০ কোটি রুপি অর্থ মঞ্জুর করেছিল। সেই মতোই এদিন ওই অর্থমূল্যের চেকটি তুলে দেওয়া হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও খুব শ্রদ্ধা ও সানন্দের সঙ্গে এই অর্থ গ্রহণ করেছি। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর স্মারক হিসেবে নির্মিত এই ভবনটিকে যথাযথভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে এই মূল অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদের রুপি ব্যয় করা হবে।
নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’ তৈরি হয়েছে ৪১০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে। সেখানে রয়েছে দুটি সেমিনার হল। রয়েছে একটি গ্রন্থাগার, একটি জাদুঘর, একটি শিক্ষাকেন্দ্র, একটি ক্যাফেটারিয়া এবং ৪৫৩ আসনবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক মিলনায়তন। লাইব্রেরিতে রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সম্পর্কিত বহু গ্রন্থ স্থান পেয়েছে সেই গ্রন্থাগারে। জাদুঘর আবার চার ভাগে বিভক্ত আছে। শুরু হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ বছরের পুরনো সভ্যতার নিদর্শন দিয়ে, আর শেষ হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত সংগ্রহ দিয়ে। আর মাঝের অনেকটা সময় জুড়ে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গও স্থান পেয়েছে সেখানে। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। যেমন রয়েছে, তেমনই আছে অতি দুর্লভ কিছু ছবি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অনুকৃতি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন আছে, তেমনই আছে ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের পোড়ামাটির কাজ, ১৬শ শতকের নকশাখচিত ইট প্রভৃতি। স্থান পেয়েছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের নানা নিদর্শন, দেবদেবীর মূর্তিও। কোনোটি পোড়ামাটির, কোনোটি ধাতব। মাঝখানে সুলতানি এবং ব্রিটিশ শাসনামলও এসেছে জাদুঘরটিতে রাখা নানা প্যানেলে।