• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
আর্থসামাজিক সূচকে পিছিয়ে ছিটমহলবাসী

আর্থসামাজিক সূচকে পিছিয়ে ছিটমহলবাসী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

পরিসংখ্যান ব্যুরোর শুমারি

আর্থসামাজিক সূচকে পিছিয়ে ছিটমহলবাসী

১১১ ছিটে অধিবাসী ৪৫ হাজার ৪৭১

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভারতের সাবেক ১১১ ছিটমহলে বাস করছেন ৪৫ হাজার ৪৭১ মানুষ। আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের অধিবাসীদের চেয়ে পিছিয়ে আছে এ জনগোষ্ঠী। সাবেক ছিটের মাত্র ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহারের সুযোগ পায়। জাতীয় পর্যায়ে স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহারের হার ৭৫ শতাংশ। ছিটমহলের ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ কাঁচা পায়খানা ব্যবহার করে। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করে প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ। তবে নিরাপদ পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহারে ছিটমহলের অধিবাসীরা যথেষ্ট এগিয়ে আছে। সাবেক ছিটমহল নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাবেক ছিটমহলের গণশুমারি ২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে সাবেক ১১১ ছিটমহলে শুমারিটি পরিচালনা করা হয়। ২০১৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তির আওতায় একই বছরের নভেম্বরের মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তর শেষ হয়। এর ফলে বাংলাদেশ ১৭ হাজার ১১০ একর জমি পায়। এসব ছিটের মানুষের আথসামাজিক বিভিন্ন সূচকে সার্বিক পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা মানুষের একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হবে। এ তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে ছিটমহলের মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) পক্ষ থেকে উন্নয়ন কর্মসূচি নিতে পারবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বিবিএস।

শুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১১ সাবেক ছিটমহলে ১০ হাজার ৪৬৭ পরিবারে বাস করছেন ৪৫ হাজার ৪৭১ জন মানুষ। প্রতি পরিবারে সদস্যসংখ্যা গড়ে ৪ দশমিক ৩৪ জন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ছিটমহলের ৯৩ দশমিক ৬০ শতাংশ পরিবারের বসতঘর কাঁচা। ইট ও সিমেন্টের মেঝে রয়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ পরিবারে। সারা দেশের ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ পরিবারের বসতঘর ইট সিমেন্টের তৈরি। সারা দেশের ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবার ইট সিমেন্টে তৈরি দেয়ালের ঘরে থাকলেও ছিটমহলে এর হার মাত্র ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। ছিটমহলে  পাকা ছাদের ঘরে থাকার সুযোগ পায় ১ শতাংশের কম মানুষ। সারা দেশে এর হার ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।

সারা দেশের সঙ্গে ছিটমহলের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকায় ছিটমহলের মানুষ পিছিয়ে আছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা অত্যাবশ্যকীয় সেবা থেকেও বঞ্চিত ছিটমহলের মানুষ। দেশের সামষ্টিক উন্নয়নের জন্য ছিটমহল এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মূলমন্ত্র দেশের সবাইকে উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসা। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অনেক দিন ধরে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বাড়তি সুযোগ দিতে হবে। ছিটমহল এলাকার উন্নয়নে সরকারের ইতোমধ্যে নেওয়া উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ছিটমহলে শিক্ষার অভাবের বিষয়টিও ফুটে উঠেছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সাত বছরের বেশি বয়সী মানুষের শিক্ষার হার ছিটমহল এলাকায় ৫৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এভিআরএস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সারা দেশে এর হার ৭১ শতাংশ। তিন বছরের বেশি বয়সী ৬৭ দশমিক ৬০ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার বাইরে আছে। নারীদের ক্ষেত্রে এর হার ৬৯ দশমিক ১০ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ছিটমহল এলাকায় বাল্যবিয়ের প্রকোপ ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। ছিটমহল এলাকায় নারীদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ১৬ দশমিক ৪০ বছর। আর ছিট এলাকায় প্রথম বিয়েতে পুরুষের গড় বয়স ২১ দশমিক ১০ বছর। জাতীয় পর্যায়ে নারীদের গড়ে ১৮ দশমিক ৪০ বছর ও পুরুষের গড়ে ২৫ দশমিক ২০ বছরে বিয়ে হয়ে থাকে।

তবে জ্বালানির উৎস হিসেবে ছিটমহলের ৯৩ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সারা দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ। সারা দেশে আলোর উৎস হিসেবে ১৩ শতাংশ মানুষ কেরোসিন তেল ব্যবহারে বাধ্য হলেও ছিটমহলে এর হার ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সারা দেশের তুলনায় ছিটমহলের মানুষ বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। তা ছাড়া ছিটমহলের ৯৯ শতাংশ মানুষ নলকূপের পানি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। জাতীয় পর্যায়ে এর হার আরো অনেক কম।

অবশ্য ছিটমহলের অধিবাসীদের জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে ১৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর কাজ শেষ হলে অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। কৃষি ও অকৃষি পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ সহজতর হবে। কৃষক তার কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads