• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় হিজবুত তাহরীর

লোগো হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ

জাতীয়

সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় হিজবুত তাহরীর

# জাকারিয়ার খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী # বিশ্বে সদস্য ১০ লক্ষাধিক # ৫০ দেশে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর থাকার সুযোগে তারা সক্রিয় হচ্ছে- এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠনের মদতপুষ্ট এই জঙ্গি সংগঠনটি যেকোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হওয়া জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর তাদের কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে হিজবুত তাহরীরকে দেখা গেছে রাজধানীর কাকরাইল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা, নীলক্ষেত মোড় ও মোহাম্মদপুরে ঝটিকা মিছিল বের করতে। তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে অস্বস্তিতে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সংগঠনটির সমন্বয়ক মাওলানা মুহিউদ্দিন ২০১০ সালে গ্রেফতার হন। এরপর সংগঠনটির দায়িত্ব পান জাকারিয়া। তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আজো গ্রেফতার করতে পারেনি। তিনি আত্মগোপনে থেকে সদস্য সংগ্রহ এবং সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর র্যাবের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর ঝিগাতলা থেকে হিজবুতের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মোহাম্মদপুর থানার ইকবাল রোড থেকে গ্রেফতার হয় মাহমুদুল হাসান রবিন নামে হিজবুত তাহরীরের এক সক্রিয় কর্মী। এ ব্যাপারে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ বাংলাদেশের খবরকে জানান, আটকের পর মাহমুদুল জানায়, ২০০৯ সালে নটরডেম কলেজে পড়ার সময় আগের ব্যাচের ছাত্র জাকারিয়ার সান্নিধ্যে আসে এবং ধীরে ধীরে ধর্মীয় উগ্রপন্থার সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে। একপর্যায়ে সে হিযবুত তাহরীর সদস্যপদ লাভ করে। পরে সে সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য নিজ এলাকায় চলে যায়। এ ছাড়া জাকারিয়ার নির্দেশে বিভিন্ন সময় ঢাকায় এসে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কাজে অংশ নিত।

২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাকারিয়া ফোনে তাকে ঢাকায় আসতে বলে। পরদিন মাহমাদুল ঢাকায় আসে এবং একটি মসজিদে রাত কাটায়। ৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণের সময় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ রাজধানীর হাজারীবাগ থানার বছিলার একটি বাসা থেকে হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এরা হচ্ছে মো. রিয়াদ  হোসেন (২৪), মো. জিহাদুল ইসলাম (১৯) ও শরীফ হোসেন (২৩)।

তাদের কাছ থেকে জিহাদি বই, ৪০টি লিফলেট, একটি ল্যাপটপ ও চারটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এরাও সমন্বয়কারী হিসেবে জাকারিয়ার নাম জানায়। তবে তারা কেউই জাকারিয়ার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানে না বলে দাবি করে। জাকারিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০ জনের একটি দল গোপনে সক্রিয় রয়েছে। এরা আত্মগোপনে থেকে হিজবুত তাহরীরকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছে। এরপর থেকে র্যাব ও র্যাবের বিশেষায়িত ইউনিটসহ একাধিক টিম তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

কোণঠাসা হিজবুত তাহরীর ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। রাজধানী ও উপকণ্ঠ এলাকা সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তাদের উপস্থিতি রয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জঙ্গিরা যেখানেই থাক আমরা টের পেয়ে যাই। তারা যেখানেই যাই করার চেষ্টা করুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেটওয়ার্কে চলে আসে। ঘাপটি মেরে কিছু কিছু জঙ্গি বিভিন্ন এলাকায় থাকতে পারে। কিন্তু তারা কোথাও বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম বলে আমরা মনে করি না।

২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মওলানা মহিউদ্দিন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। নাশকতামূলক তৎপরতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল ৫ সহযোগীসহ প্রধান সমন্বয়কারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা হচ্ছে- সাইদুর রহমান ওরফে রাজীব, কাজী মোরশেদুল হক ওরফে প্লাবন, এমএ ইউসুফ, তানভীর আহমেদ ও তৌহিদুল আলম চঞ্চল। এর মধ্যে তৌহিদুল আলম জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত এ দলটির সদর দফতর লন্ডনে। মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫০টি দেশে এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ইন্দোনেশিয়ায় এদের শক্ত ভীত রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংগঠনটির ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। কট্টর ইসলামপন্থায় বিশ্বাসী শিক্ষিত তরুণদের দলে আনতে তৎপর তারা। সারাবিশ্বে হিজবুতের সদস্যসংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করলে সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জেএমবি ও মাওলানা মুহিউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

 

 

 

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads