• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
অদম্য সাহসিকতার গল্প

অগ্নিকাণ্ডে হাসপাতাল ছাড়ছে সোহরাওয়ার্দীর রোগীরা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সোহরাওয়ার্দীর অগ্নিকাণ্ড

অদম্য সাহসিকতার গল্প

তদন্ত প্রতিবেদন আজ

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই আগুন লাগে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে তৈরি হয় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিচলিত হয়ে পড়েন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এমন দুর্যোগময় মুহূর্তে এক হাজারেরও বেশি রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেদিন হাসপাতালকর্মীদের অদম্য সাহসিকতার গল্প এখন রোগীদের মুখে মুখে।

গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা নৈরাজ্য খবর পাওয়া যায়। কিন্তু সেদিন তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। জীবন বাজি রেখে সেদিন রোগীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে যারপরনাই চেষ্টা ছিল তাদের। যে যেভাবে পেরেছেন রোগীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছেন। এমনকি হাসপাতালের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের লোকজনও সেদিন দয়ার দু’হাত প্রসার করে দিয়েছিলেন। মানবিকতার এমন অনন্য নজিরও রয়েছে। যা হার মানায় উপন্যাস কিংবা সিনেমাকেও। কখনো কখনো চিকিৎসকদের আমরা কসাই বলেও সম্বোধন করি। সেই তারাই সেদিন ফিরেছিলেন স্বরূপে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ। হাসপাতালে যখন আগুন লাগে তখন গুরুতর এক রোগীর অস্ত্রোপচার করছিলেন তিনি। আগুনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও থামাননি অস্ত্রোপচার। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে দক্ষতার সঙ্গে শেষ করেন অপারেশন। তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্রেচার না পেয়ে জ্ঞানহীন রোগীকে নিজেই কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নিরাপদ আশ্রয়ে। চিকিৎসক দেবাশীষ বলেন, যে মুহূর্তে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায় ওই মুহূর্তে আমরা অপারেশনের একদম শেষ পর্যায়ে ছিলাম, আমরা শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলাম যে এখানে কোনো ব্লিডিং আছে কি না। তখন আমাদের যে সহযোগী ডাক্তার ছিলেন, তিনি মোবাইল দিয়ে আলো জ্বালান এবং সেই আলোতে আমরা ব্যান্ডেজটা কমপ্লিট করি।এমন আরো গল্প সেদিন ছড়িয়ে ছিল সোহরাওয়ার্দীর প্রতিটি কোনায় কোনায়। হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় আইসিইউ’র অক্সিজেন সরবরাহ। মাত্র তিন মিনিটেই যেখানে রোগীর জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে- এমন চ্যালেঞ্জে স্টোর রুমের দরজা ভেঙে বের করে আনেন অক্সিজেন সিলেন্ডার। ডাক্তাররা জানান, তিন মিনিট একটা রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি সঙ্কটকালীন মুহূর্ত। এই তিন মিনিট রোগীটাকে যদি অক্সিজেন বা বাতাস সাপ্লাই করতে না পারি তাহলে সে মানুষটা বাঁচতে পারবে না। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে স্টোর রুমের দরজা ভেঙে যদি যন্ত্রপাতিগুলো না বের করা হতো। তাহলে আমার মনে হয় সব রোগী মারা যেত।

ঘটনার দিন প্রায় ১২ শতাধিক রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। রোগীদের শুধু নিরাপদে সরিয়ে এনেই দায়িত্ব শেষ করেননি চিকিৎসকরা। অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত খোলা মাঠে সেবা দিয়েছেন সাধ্যমতো। সেদিনের বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পেশাদারির পাশাপাশি মানবিকতার এই নজির প্রেরণা জোগাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আগুনের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা রয়েছে আজ রোববার। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ওয়ার্ডটি চালু করা হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, এরই মধ্যে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এ জন্য হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আগুন লাগার পর বিভিন্ন হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া রোগীদের বেশির ভাগই ফিরেছেন বলেও তিনি জানান। তিনি আরো জানান, হাসপাতালে প্রায় ৮৫০ জন রোগী ভর্তি আছে। এখন সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। শুধু শিশু ওয়ার্ডটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি আমরা দু-এক দিনের মধ্যে চালু করব। তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক জানান, আমরা আশা করছি আগামী কালের (আজ) মধ্যে তাদের রিপোর্ট সম্পন্ন হলেই, আমরা পরিপূর্ণ একটা রিপোর্ট আপনাদের জানাতে পারব।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট রাত সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ধারণা করা হয়, হাসপাতালে স্টোর রুম থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার পর আইসিইউ ও মুমূর্ষু রোগীদের আশপাশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্থানান্তরিত করা হয়। সাধারণ রোগীদেরও বের করে আনা হয় হাসপাতালের সামনের মাঠে। হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিকিৎসাধীন রোগীদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। এ ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads