• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
স্বপ্নের আকাশে কালো মেঘ

বিমান চলাচলে দেশকে ট্রানজিট হাব হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নের আকাশে কালো মেঘ

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

ট্রানজিট হাব

স্বপ্নের আকাশে কালো মেঘ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বিমান চলাচলে দেশকে ট্রানজিট হাব হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নের আকাশে এবার কালো মেঘ দেখা দিল। এর ফলে হোঁচট খাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অভিপ্রায় ও স্বপ্ন। বিমান চলাচলে ট্রানজিট হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও সেবার মান দুটোই জরুরি।   

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা দেশে ও বিদেশে ভাবমূর্তি সঙ্কট তৈরি করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রম। বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন ইতিহাসে খারাপভাবে সামনে এলো। যেমনটি হলি আর্টিজান ঘটনার পর হয়েছিল। ওই ঘটনার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকেই বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অবস্থান করা অনেক বিদেশি নাগরিক ফিরে যান নিজেদের দেশে।

আকাশপথে চলাচলে বাংলাদেশকে ট্রানজিট হাব হিসেবে গড়তে চায় সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় এসে ২০১৪ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে এ ব্যাপারে কার্যক্রম হাতে নিতে নির্দেশ দেয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মে মাসের ৮ তারিখে বেসামরিক পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি তৎকালীন মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন।

জানা গেছে, এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরগুলো আধুনিকায়নের মাধ্যমে এদেশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতু হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ যাতে অ্যাভিয়েশন ক্ষেত্রে রিজিয়ন হাব হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা করার নির্দেশনাও দেন। 

সরকারের সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে অ্যাভিয়েশন খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নততর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য ইতোমধ্যে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় বড় অঙ্কের ব্যয়ে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পের অনুকূলে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এখনো ঠিকাদার চূড়ান্ত হয়নি। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে ৫টি রুটে বিমান চলাচল করছে। সেগুলো কক্সবাজার বিমানবন্দর, রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দর। এছাড়া আরো দুটি বিমানবন্দর এক সময় চালু থাকলেও আপাতত বন্ধ রয়েছে। সেগুলো হলো কুমিল্লা বিমানবন্দর ও বরিশাল বিমানবন্দর।

সরকারের তথ্য বলছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ চলছে। এরই মধ্যে এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করা হবে সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজও চলছে।

এছাড়া জাতির পিতার নামে একটি বড় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। দেশের অর্থনীতি, পর্যটন তথা বিমান চলাচলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বিমানবন্দরটি।

সরকারের সূত্রগুলো বলছে, দুবাই বিমানবন্দর চলাচলে একটি বড় ট্রানজিট। এর মাধ্যমে ব্যাপক আয় করছে দুবাই। সরকার চায় দেশের বিমানবন্দর ব্যবস্থার উন্নয়ন করে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে। এজন্য বিমানবন্দরের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো ঘিরেও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঢাকার যানজট থেকে বিদেশিদের রেহাই দিতে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব মুহিবুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশকে ট্রানজিট হাব গড়তে বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়নের কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তিনি বলেন, ট্রানজিট হাব হিসেবে এগিয়ে যেতে ৯টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ চলছে।

জানা যায়, ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১৪৭ ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয় আকাশে ওড়ার পর গত রোববার। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পাইলট বিমানটি জরুরি অবতরণ করান চট্টগ্রামে। আর কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইয়ের চেষ্টায় থাকা পলাশ আহমেদ মাহাদি নিহত হয়। এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন।

জানা গেছে, যাত্রী নিরাপত্তায় অসতর্কতা ও অবহেলা প্রায় নিয়মিতই ঘটছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের ফ্লাইটে জরুরি অবতরণসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে। নিরাপত্তা অবহেলা ও অসতর্কতা থেকে বাদ পড়ছে না খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ভিআইপি ফ্লাইটও।

বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় অ্যাভিয়েশন-সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন, একজন ছিনতাইকারী অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে কীভাবে তল্লাশি পেরিয়ে বিমানে উঠল। এতে বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কেউ জড়িত থাকতে পারে। অথবা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলায় এমনটি ঘটেছে। 

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এনামুল হক জানান, বিমানের নিরাপত্তাহীনতায় যাত্রীরা উদ্বিগ্ন। সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ স্বর্ণ চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। তাছাড়া বিদেশিরা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিমানবন্দরে। এভাবে চললে বিদেশি যাত্রীদের কাছে ভাবমূর্তি থাকবে কীভাবে? ট্রানজিট হাব হিসেবে যেসব বিমানবন্দর ব্যবহার হচ্ছে, সেসব দেশে কোনো যাত্রীর হাতঘড়ি হারালেও সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক হাব করতে চাইলে কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে হবে না। সেবার মান বাড়াতে হবে বিমানবন্দরগুলোতে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলামও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিমানবন্দরগুলোতে বিদেশিদের হয়রানি করা হয়।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads