• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
কর্মনিষ্ঠ ছিলেন শাহ আলমগীর : তথ্যমন্ত্রী

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল ডিইউজের সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীরের স্মরণসভায় তথ্যমন্ত্রীসহ অতিথিরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

কর্মনিষ্ঠ ছিলেন শাহ আলমগীর : তথ্যমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, একজন মানুষের মধ্যে যত গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, সবই ছিল শাহ আলমগীরের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘তিনি (শাহ আলমগীর) বেশি কথা বলতেন না। অল্পভাষী ও কর্মনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবে আমি তাকে যতটুকু দেখেছি, সেই জায়গা থেকে এসব কথা বললাম। পিআইবিতে যত কাজ হয়েছে, তিনি মহাপরিচালক হওয়ার পরে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন নিরহঙ্কার একজন মানুষ। আমি কখনো ভাবিনি, তিনি এত অল্প সময়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। মানুষ অসুস্থ হওয়ার পর কিছুটা হলেও সময় পায়। কিন্তু তিনি কোনো সময় আমাদের দেননি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তার চিকিৎসার জন্য সব নির্দেশনা ছিল। তিনি বলেন, বর্তমানে মিডিয়ার বিস্তৃতি ঘটেছে। দ্রুত বিস্তৃতি ঘটলে সেখানে মান রক্ষা করা সবসময় সহজ হয় না। যেখানে লেখনীর মান, সংবাদ পরিবেশনের মান, দায়িত্বশীলতার মান- এ নিয়ে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এসব নিয়ে কাজ করছিলেন শাহ আলমগীর, জানান হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বলব।

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীর সম্পর্কে তার ভাই এসএম আজম বলেন, তিনি কত কষ্ট করে কোথা থেকে এসেছেন, তা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। আমার বাবা ছোট একটা সরকারি চাকরি করতেন। আমাদের ১১ ভাই-বোনের সংসার। বড় সংসারে বড় সন্তানের ওপর বাবা-মার আশা-ভরসা একটু বেশিই থাকে। বাবা আশা করতেন, বড় ভাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবেন। ছোট ভাইবোনদের ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হবেন। কিন্তু আমার ভাই সে ধরনের মানুষ ছিলেন না। আমি দেখেছি, তিনি লেখালেখির জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন।

গতকাল সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে স্মরণসভার আয়োজন করে। এই আয়োজনে বড় ভাই সম্পর্কে এসব কথা বলেন এসএম আজম। এ সময় অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

স্মরণসভায় আজম বলেন, ‘দাদা (শাহ আলমগীর) একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত সাংবাদিক ছিলেন। মধ্যবিত্ত বলা চলে না। আমি নিজেও সংবাদপত্রে জড়িত ছিলাম ছয় বছর। আমি এই লাইন থেকে সরে গেছি। শুধু আমার বড় ভাইকে সহায়তা করার জন্য। দাদা ছোটবেলা থেকেই এত বেশি লেখালেখির ওপর আসক্ত ছিলেন, যেদিন আমি বুঝতে শিখেছি, সেদিন থেকেই দেখেছি। আগে গ্রামে, মহল্লায় দেয়ালিকা লেখা হতো। এর মধ্য দিয়ে লেখার সূত্রপাত হতো ছোট শিশুদের। আমার ভাই দেয়ালিকা লিখতেন। তার লেখা একদম মুক্তার মতো ছিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এখন আর দেয়ালিকা লেখা হয় না। আগে যে লেখা হতো, সেগুলো দাদার হাতে ছিল। ছোট একটা গল্প বলি, তা হলো আপনারা দাদাকে বুঝতে পারবেন। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পরের কথা ছিল, দাদা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন। আমরা জানতাম দাদা তাই করেছেন। দুই বছর পরে জানতে পারি, উনি মেডিকেলে ভর্তি হননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তখন বাবার অত সময় ছিল না খোঁজখবর নেওয়ার। মামা ঢাকায় থাকতেন। মামা গিয়ে দুই বছর পর বাবাকে বলেন, দাদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। বাবা এটা জানার পর আশাহত হন।’

শাহ আলমগীরের ভাই বলেন, ‘আব্বার স্বপ্ন ছিল, ছেলে (শাহ আলমগীর) ডাক্তার হবে। কিন্তু তা হয়নি। এরপর বাবা ভেবেছিলেন, ছেলে হয়তো সরকারি বড় কর্মকর্তা হবেন। দাদা বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে যোগদানও করেছিলেন, তারপর তা ছেড়ে দেন। দাদার এই লেখালেখির জন্য আমাদের সংসারে...।’

তিনি বলেন, ‘আব্বার চাকরির সূত্রে দাদার উচ্চ মাধ্যমিক কাটে ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে। দাদা কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন পত্রিকা, জার্নাল, সংগঠন করতেন। সেগুলোতে আমাকেও সম্পৃক্ত করতেন। ঢাকায় আসার পরও তার এগুলো অব্যাহত রইল।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সর্বশেষ প্রেস ক্লাব নির্বাচনে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু সেটা তিনি কাউকে জানতে দেননি। অথচ নির্বাচন করাটা ছিল খুব কঠিন। অসুস্থ শরীর নিয়েই তিনি সব দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেছেন। এটা আমরা পরে জানতে পেরেছিলাম।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি আবু জাফর সূর্যের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী,  কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শাহ আলমগীর। তিনি লিউকেমিয়া ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads