• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
উৎসবে কাঙ্ক্ষিত ভোট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

উৎসবে কাঙ্ক্ষিত ভোট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ মার্চ ২০১৯

দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম ও আইনি লড়াইয়ের পর্ব পার হয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোট নিয়ে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো নির্বাচনটি। নির্বাচন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের ভোট প্রদান করে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। উদ্যমী ছাত্রছাত্রীরা উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ভোট প্রদান করে। তারা যেভাবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করি। যতগুলো ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করলাম, অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।’  সুশৃঙ্খলভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের তিনি ধন্যবাদ জানান।

দীর্ঘ ২৮ বছর বছর অনুষ্ঠিত ডাকসুর ভোটে ‘অনিয়মের’ অভিযোগে নির্বাচনের একপর্যায়ে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল, বামজোট ও স্বতন্ত্রসহ সাতটি প্যানেল। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই ‘কারচুপির’ অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ বাদে অন্য প্রায় সব প্যানেলের প্রার্থীরা। ভোট বর্জনকারীরা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিক্ষোভেরও ডাক দিয়েছেন।

হলগুলোতে ভোটগণনা চলার মধ্যে বিকাল ৫টায় ঢাবি উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেন বাম সংগঠনগুলোর প্যানেলের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল, স্বতন্ত্র জোটের প্যানেল, স্বতন্ত্র অন্য প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিরাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তারা পুনঃভোটের দাবিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকেও বসেন।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল পূর্বনির্ধারিত সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ১৬টিতেই ভোট নেওয়া শুরু হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার এ নির্বাচনে ভোট দিতে বিভিন্ন হল কেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থীরা লম্বা সারিতে দাঁড়ান সকাল ৭টা থেকেই। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট নেওয়ার পূর্ব ঘোষণা থাকলেও কয়েকটি হলে ভোটারদের দীর্ঘ সারি থাকার কারণে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও ভোট নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন হলে ভোটারদের লম্বা সারি থাকায় কেউ কেউ ওই দফায় ভোট না দিয়ে চলে যান।

ঢাবির কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তায় ভরা ভোটের চিহ্ন দেওয়া ব্যালট পেপার পাওয়ার ঘটনায় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। আর রোকেয়া হলে ব্যালট বাক্স সিলগালা করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রভোস্টের বাদানুবাদের কারণে ভোট শুরু হয় সকাল ৯টায়। প্রভোস্ট পরিবর্তন করে ৩ ঘণ্টা দেরিতে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ভোট শুরু হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে কুয়েত মৈত্রী হলে শুরু হওয়া ভোট চলে বিকাল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত।

বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ভোটের অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের কুয়েত মৈত্রী হলে ঘটেছিল। যেই মুহূর্তে আমি জেনেছি তাৎক্ষণিকভাবেই শক্ত অবস্থান নিয়েছি। একই সঙ্গে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি খতিয়ে দেখবে এ ঘটনায় কারা জড়িত ছিল। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, নীতিবহির্ভূত এরকম অনৈতিক কাজ কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এ ব্যাপারে আমরা কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই বাক্সভর্তি ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার পাওয়ার অভিযোগে কুয়েত মৈত্রী হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট শবনম জাহানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এই অনিয়মের ব্যাপারে উপউপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রলীগ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী গোলাম রাব্বানী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কীভাবে ব্যালট হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, পুরো জাতি আজ তা দেখেছে। দরজা ভেঙে আমাদের শিক্ষিকাদের লাঞ্ছিত করে তারা সেটি বাইরে নিয়ে গেছে। এই ব্যালটগুলো ভুয়া, মূল ব্যালটের সঙ্গে এর মিল নেই।’

নির্বাচনে নানা অভিযোগের বিষয়ে রাব্বানী বলেন, ‘কোন হলে কাকে বাধা দেওয়া হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। আমরা শতভাগ ভোট কাস্ট হোক, সেটা চেয়েছি। সবাই যেন ভোট দিতে পারে, সেজন্য আমরা আন্তরিক ছিলাম। যেখানেই অভিযোগ শুনেছি, আমরা ছুটে গিয়েছি এবং সমাধানের চেষ্টা করেছি।’

গতকাল বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী চারটি প্যানেলের পক্ষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে একই ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। এরপর থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য ও রোকেয়া পরিষদ। ছাত্র ফেডারেশন স্বতন্ত্র জোটসহ বিভিন্ন পদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়ে তা আদায় না হওয়া পযন্ত ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads