• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
স্বভাব বদলায়নি পুলিশের

লোগো বাংলাদেশ পুলিশ

জাতীয়

স্বভাব বদলায়নি পুলিশের

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০১৯

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আহ্বান-নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারছে না পুলিশ। ঘুষ আর নানা দুর্নীতির বৃত্তের বাইরে আসতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এই বাহিনী। যদিও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, এই বাহিনীতে ঘুষ-দুর্নীতির দৌরাত্ম্যসহ নানা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য অনেকাংশেই কমেছে; কিন্তু মাঠপর্যায়ের পুলিশের বিরুদ্ধে এখনো বিস্তর অভিযোগ মানুষের। এখনো থানায় গিয়ে সাধারণ মানুষ সহজে মামলা করতে পারে না। থানার ওসিদের মর্জিমাফিক মামলা হয়। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এখনো প্রকাশ্যে ঘুষ নিতে দেখা যায়। এসব কারণে জনমনে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে আরো নেতিবাচক ধারণা জন্মাচ্ছে। পুলিশের পলিসি লেভেল থেকে বার বার চেষ্টার পরও কোনো সুফল আসছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে নানা উদ্যোগ নিলেও মাঠপর্যায়ে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিফলন বা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভেস্তে যাচ্ছে সেসব উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ট্রাফিক পুলিশের একাংশ রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কষ্টসাধ্য ডিউটি করছে, আবার অনেকেই আছেন ট্রাক, বাস, প্রাইভেটকার মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল থামিয়ে প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন। সার্জেন্টদের চেয়ে এক্ষেত্রে কনস্টেবলরা এগিয়ে। রাস্তার মোড়ে লেগুনা স্ট্যান্ড, অটোরিকশা-বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে তারা নির্ধারিত হারে নিয়মিত নগদ অর্থ আদায় করে। নগরজুড়ে দিনের পর দিন চলছে এ নৈরাজ্য। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় রাতে এই কনস্টেবলদের আয় বেশি হয়। তারা ট্রান্সপোর্টের হাজার হাজার ট্রাক থেকে নগদ অর্থ আদায় করে থাকে।

অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে কর্মরত থানা পুলিশ এখন জিডি গ্রহণ করতে টাকা দাবি না করলেও মামলা নিতে গড়িমসি করে নগদ অর্থ আদায় করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। এমনকি মামলা না নিয়ে ওসিরা থানায় সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে আইনগত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি মামলা না নিয়ে থানায় পুলিশের বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, মামলা না নিয়ে থানার ওসিরা কোনো সাহসে নিজেরাই বিচার বসায়, সমঝোতার চেষ্টা করে? ওসিরা সব জায়গায় রাতে কোর্ট বসায় কীভাবে? সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় একটি মামলার ঘটনায় ওসির মধ্যস্থতা করার অভিযোগে করা এক রিট শুনানিতে গত ২৬ মার্চ হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, পুলিশ থানায় বসে মামলার আগেই অভিযোগের সমঝোতা করে ফেলছে। এতে দুই পক্ষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে না। গোটা পুলিশ বিভাগের বদনাম হচ্ছে তাতে। আদালত বলেন, থানা পুলিশ সুবিধামতো মামলা দেয়। এছাড়া টাকা ছাড়া জিডিও হয় না বলে মন্তব্য করেন আদালত। আদালত আরো বলেন, অনেক পুলিশ কষ্ট করে দিনযাপন করে আর অনেকে চার থেকে পাঁচটা বাড়িও করে ফেলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি একটি ঘটনায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসি মামলা নিতে গড়িমসি করেন। পরে জেলা পুলিশ সুপার তদন্তপূর্বক মামলা নিতে নির্দেশ দিলেও ওসি মামলা নেননি। ওই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগীরা হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। ওসি মামলা না নেওয়ায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ওসি তো সেখানে দায়িত্বে আছেন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। মামলাটা হচ্ছে সেটারই একটা অংশ। কেউ মামলা দিতে গেলে মামলা কেন নিতে চাইবে না এটা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, কেউ মিথ্যে মামলা দিলে সেটা তদন্ত করে মিথ্যে মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। সেটা প্রয়োগ হবে বাদীর বিরুদ্ধে। তাহলে মামলা নিতে অসুবিধা কোথায়?

তিনি আরো বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নানা সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান করেছি। থানায় গিয়ে যাতে সাধারণ মানুষকে হতাশ হয়ে ফিরতে না হয় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশ সুপারদের মাধ্যমে সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অবস্থার অনেকটা উন্নতিও হয়েছে। তারপরও কেউ যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, কেউ যদি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ববোধ ভুলে গিয়ে থানায় আসা আইনি সহায়তাপ্রার্থীর সঙ্গে অন্যায় আরচরণ করে সে রেহাই পাবে না।

তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে, পুলিশ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। পুলিশ সদর দফতর থেকে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে বিভিন্ন সময় নিয়েছে নানা উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’, পুলিশ জনগণের বন্ধুসহ নানা স্লোগান সাঁটানো হয়েছে দেশের সব থানার দেয়ালে দেয়ালে। পাশপাশি পুলিশের ভাবমূর্তি ফেরাতে থানায় আইনগত সহায়তা চাইতে আসা মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিছুটা কাজ হয়েছে। এখন থানায় কেউ জিডি করতে গেলে পুলিশ টাকা দাবি করে না। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিযোগ আছে বিস্তর। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে সেটা আশানুরূপ নয়। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি দমনে পুলিশ প্রশংনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এতে জনমনে পুলিশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পুলিশ সদর দফতর চেষ্টা করছে এ ধারা অব্যাহত রাখতে। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক অসাধু সদস্যের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে সব উদ্যোগ।

প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘স্বার্থ নয়, সেবার মানসিকতা নিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে হবে’— পুলিশ সদস্যদের প্রতি এমন আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads