• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
বিপর্যয়ের পরেও ভালো দাম থাকায় আশাবাদী তরমুজ চাষীরা

লঞ্চে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর তরমুজ। উপজেলার খলগোড়া লঞ্চঘাট থেকে তোলা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

তরমুজের নগরী রাঙ্গাবালী উপজেলা

বিপর্যয়ের পরেও আশাবাদী তরমুজ চাষীরা

  • রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০১৯

তরমুজের নগরী খ্যাত উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী। এ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলাই হয় তরমুজের আবাদ। বিগত বছরগুলোতে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার তরমুজ সুনাম কুড়িয়েছে সারা দেশে। উপকূলীয় এ এলাকার মাটি উপযোগী হওয়ায় ফলও হয় সুস্বাদু। তাই সারাদেশের মানুষের কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে রাঙ্গাবালীর এই রাঙানো তরমুজের। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হয় এখানকার তরমুজ। কিন্তু এবছর চিত্র বরাবরের তুলনায় একটু ভিন্ন। মৌসুমের শুরুর দিকে টানা বৃষ্টির কারণে নিন্ম ভূমির ক্ষেতগুলো জলবদ্ধ হয়ে পরে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় চাষীরা। তবে বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন চাষীরা। জলাবদ্ধতা থেকে যেসব ক্ষেতগুলো রক্ষা পেয়েছে সেগুলোকে দিনরাত পরিশ্রম করে পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফলনের উপযোগী করে তুলেছেন তারা। অকাল বর্ষণে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ পরিবারের সবাই মিলে ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তাতে অনেক কৃষকেরই লোকসান কমবে বলে জানিয়েছন স্থানীয় চাষীরা।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ আবাদ লক্ষমাত্রা ছাড়িয়েছে। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দুই হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ বেশি হয়েছিল। তরমুজ মৌসুমের শুরুর দিকে চলতি বছরের ২ মার্চ হতে ৯ মার্চ পর্যন্ত টানা এক সপ্তাহ থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এতে জলাবদ্ধ হয়ে পরে তরমুজ ক্ষেত। সেঁচের মাধ্যমে পানি অধিকাংশ ক্ষেতের অপসারণ করা গেলেও অনেক গাছই রক্ষা করা যায়নি। তারপর হঠাৎ রোদে গাছগুলো মরতে শুরু করে। এতে ৩০ শতাংশ জমির তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাকি ৭০ শতাংশ তরমুজ এখনো ক্ষেতে রয়েছে। যা বাজারজাত করার জন্য চাষীরা দিন রাত পরিশ্রম করছেন। বাজারে দাম ভালো থাকায় এখনও লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

তারা জানান, অসময় বৃষ্টি না হলে এবছর তরমুজের ফলন খুব ভালো হতো এবং বাজার দর ভালো থাকায় লাভের সংখ্যাও থাকতো অধিক। যা ক্ষতি হয়েছে তাতো হয়েছেই, এখন যে পরিমাণ তরমুজ ক্ষেতে আছে দাম এভাবে ভালো থাকলে তা দিয়েও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন আনেক চাষী। এছাড়াও এবছর ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির হার অনেকটা কমায় স্বস্তি পাচ্ছেন তরমুজ চাষীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর, বড়বাইশদিয়া, ছোটবাইশদিয়া, চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া, কাছিয়াবুনিয়া, কাউখালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্রলার, কার্গো, ও লঞ্চযোগে রাঙ্গাবালী উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তরমুজ বাজারজাত করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পার করে তরমুজ চাষীরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে স্থানীয় আরতদার এবং সৃজনশীল ব্যবসায়ীরাও।

রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের শফিক মিয়া বলেন, ‘এ বছর আমি ৩ একর জমিতে তরমুজের চাষ করছি। এতে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা। ফসল মোটামুটি ভালো হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে প্রায় দেড় একর ক্ষেতে পানি জমে যায়। বৃষ্টির পর আবার হঠাৎ করে কড়া রোদ ওঠে। রোদের তাপে অনেক গাছ মরে যায়। যার কারণে এবছর লোকসানের পথে আছি। তারপরে এখন ক্ষেতে যে পরিমাণ তরমুজ আছে দাম ভালো পেলে অন্তত লোকসান হবে না।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা নেতাবাজার এলাকার তরমুজ চাষী মো.মুসা বলেন, আমি ৫লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছি। এর মধ্যে বৃষ্টিতে প্রায় ৫ একর জমির তরমুজ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ১০ একর জমিতে তরমুজ আছে। ফলন একেবারে খারাপ হয়নাই, মোটামুটি ভালো হয়েছে। এপর্যন্ত তিন লাখ টাকার তরমুজ বাজারজাত করতে পারছি। আরও তিন লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো আশা করি।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, মার্চের শুরুর দিকের বৃষ্টিতে তরমুজের কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে যে গাছ গুলো ছিল তাতে ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজার দর অনেকটা ভালো থাকায় কৃষকদের লোকসান হবে না। অনেকেই আবার ভালো দাম পাবেন। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads