• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ বাড়ছে জনপ্রশাসনে

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ বাড়ছে জনপ্রশাসনে

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ বাড়ছে জনপ্রশাসনে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৫ এপ্রিল ২০১৯

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ বাড়ছে। ২০১৮ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় অনেককে সাজাও দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৯০০ জন কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সুশাসন নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনে ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত এক বছরে সহকারী সচিব থেকে তদূর্ধ্ব ৮১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আচরণ ও শৃঙ্খলাজনিত অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তও হয়েছে। এরপর অধিকতর তদন্ত পরিচালনা করা হয়। সেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর বিভাগীয় মামলা হয়েছে ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শুনানি শেষে এসব মামলা পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি করছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে ৩৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় তিনজন কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১২ কর্মকর্তাকে। এছাড়া ১১ কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। অবশিষ্ট আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের বার্ষিক কর্মসম্পাদন রিপোর্টে এসব অভিযোগ নথিভুক্ত থাকবে পেশাগত জীবনের পুরো সময়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় মামলার পরিমাণ ২০১৭ সালের তুলনায় বেড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অণুুবিভাগের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ৭৪টি বিভাগীয় মামলা হয় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সে হিসাবে ২০১৮ সালে মামলা বেড়েছে ৭টি।

সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আ স ম ফিরোজ, হাফিজ আহমদ মজুমদার, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, দীপংকর তালুকদার, পনির উদ্দিন আহমেদ এবং ফেরদৌসী ইসলাম বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ’, ভূমি অধিগ্রগহণের ক্ষেত্রে ভূমির মূল্য ও ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে বিদ্যমান ব্যবস্থা পর্যালোচনা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণসংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ১৩টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সরকারের হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারেরর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিবরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপসচিবরা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। আর অতিরিক্ত সচিবরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও সেবাগুলো তারা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র বলছে, জনসেবা দিতে গিয়ে কিছু কর্মকর্তা তার শপথ লঙ্ঘন করছেন। আচরণবিধি ভাঙছেন। শৃঙ্খলা ভেঙে অভিযুক্ত হয়ে পড়ছেন। কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে এসব ঘটছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে সচেতনা। তাই সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে যাচ্ছে ভুক্তভোগী জনগণ। তবে এখনো হয়রানির শিকার হলেও ঝামেলা এড়াতে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চান না সাধারণ মানুষ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রশাসনের ৪০৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। এসব অভিযোগের বেশিরভাগ সেবা পেতে হয়রানি সংক্রান্ত। এর বাইরে ঘুষ দাবি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে। তবে সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এসব অভিযোগে কারো বিরুদ্ধে সাধারণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ কর্মকর্তা পেয়েছেন সতর্কতামূলক চিঠি। অনেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।  ২০১৭ সালে অভিযোগের পরিমাণ ছিল ৩৮৯টি।

সাবেক জনপ্রশাসন সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন,  মানুষ এখন আগের থেকে সচেতন। তার কাছে এখন অনেক পথ খোলা। এছাড়া সরকারের মধ্যেও এক ধরনের সুশাসন প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি আনা গেলে মানুষ হয়রানিবিহীনভাবে সেবা পাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮)-এর ৭(৪) বিধি অনুযায়ী তদন্ত আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শুরু করতে হয়। তবে কত দিনের মধ্যে অভিযোগগুলোর বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত দিতে হবে তা বলা নেই।

টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার চায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সঙ্কুচিত করা হবে। প্রশাসনের মনোভাব হবে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন। এর মাধ্যমে সরকার জনগণের আরো কাছাকাছি আসতে চায়।

রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১-এর উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে একটি দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। সরকারের প্রচেষ্টা, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ফলে সরকারি দপ্তরে কাজের দক্ষতা ও পরিধি বেড়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অহেতুক কালক্ষেপণ এবং কাজের জটিলতা কমিয়ে বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধারাকে অগ্রসর করে নিতে চায় সরকার।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ বাড়ছে মানে এই নয় যে, হয়রানি বাড়ছে। বরং সুশাসন বাড়ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। এর ফলে প্রশাসনের সেবার মান বাড়বে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads