• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ কাল

রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ কাল

  • পাবনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০১৯

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ঘোষণা দিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলার প্রায় সাত শতাধিক চরমপন্থি সদস্য। এ লক্ষ্যে আজ সোমবার আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থি সদস্যদের নিজ নিজ জেলা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাবনায় নিয়ে আসা হবে। কাল মঙ্গলবার পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আত্মসমর্পণ করবে।

চরমপন্থিদের আত্মসর্ম্পণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় চরমপন্থি দলের সদস্যরা।

গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পাবনা অঞ্চলের ৬১৪ জন চরমপন্থি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৩০-৪০ বছর আগে চরমপন্থিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করত। তারা একটা বলয় সৃষ্টি করে অরাজকতা সৃষ্টি করত। এগুলো কিন্তু ক্রমশ্যই ছোট হয়ে গেছে, এরা দুর্বল হয়ে গেছে। যে কয়জন অবশিষ্ট ছিল, তারা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আত্মসমর্থন করবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য তারা লজ্জা বোধ করছে, তারা সেই পথ থেকে সরে আসবে। তাদেরকে সুযোগ দিয়েছি। মোট ৬১৪ জন আগামী ৯ তারিখ পাবনাতে স্যারেন্ডার করবে।

কী নিশ্চয়তায় তারা আত্মসমর্পণ করছে- জানতে চাইলে কামাল বলেন, এর আগে জলদস্যু-বনদস্যুরা যেভাবে স্যারেন্ডার করেছে, সেভাবে। এই কর্ম আর কোনোদিন করবে না- ওয়াদা করলে তাদের আইনি সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, গত মাসে বিভিন্ন চরমপন্থি দলের ৬১৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণের জন্য তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। প্রতিদিনই আরো বিভিন্ন দলের সদস্যরা আত্মসমর্পণে আগ্রহী হচ্ছে। আশা করছি আত্মসমর্পণকারীদের সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়ে যাবে।

জেলা পুলিশ জানায়- পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, রাজবাড়ী, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলায় সক্রিয় বিভিন্ন চরমপন্থি দলের সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণ করবে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটি। আত্মসমর্পণকারীদের অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আত্মসমর্পণ করলেও তাদের নিয়মিত মামলা চলবে।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থি দলগুলো নির্মূল না হলেও নেতৃত্বশূন্য ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এছাড়া পরিবার বিচ্ছিন্ন ও অন্ধকার জগতের অপরাধীর জীবন থেকে তারা সমাজে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আত্মসমর্পণের পর যেন তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আবারো তারা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নজরদারি থাকবে। চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ উপলক্ষে পাবনায় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

পাবনা জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চরমপন্থি দলগুলো অন্তঃকোন্দল ও পুলিশি অভিযানে মারা গেছে ১৯৭ জন। আগামীকাল পাবনায় বাবলু প্রামাণিকের নেতৃত্বে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) এবং ইউসুফ ফকিরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা সর্বহারা দলের ১৬০ জন চরমপন্থি সদস্যের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের কথা রয়েছে। এর বাইরেও অনেক সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করবে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামের পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি। তারা ধনীর সম্পদ গরিবের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার কথা বলে এসব এলাকায় হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের রাজত্ব কায়েম করে। আশির দশক থেকে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে এসব এলাকার দুর্গম চরাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে চরমপন্থিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে।

২০ বছর আগে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার চার শতাধিক চরমপন্থি সদস্য আত্মসমর্পণ করেছিল। সেই সময় তাদের আনসার বাহিনীতে বিশেষ আনসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads