• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভুল তথ্যে চলছে রাইড শেয়ারিং

ভুল তথ্যে চলছে রাইড শেয়ারিং

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

ভুল তথ্যে চলছে রাইড শেয়ারিং

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৯

অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর চালক নিবন্ধন নিয়ে চলছে অব্যবস্থাপনা। যাচাই বাছাই ছাড়া চালকরা নিবন্ধন নিচ্ছেন। অনেক চালক আবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র শিক্ষানবিস কাগজ দিয়ে নিবন্ধন নিয়ে রাইড শেয়ার করছেন। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বাড়ছে অভিযোগের পাহাড়।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জরিপ পরিচালনা করেছে অ্যাপে চলাচল রাইড শেয়ারিং নিয়ে। রাজধানী ঢাকায় পরিচালিত ৩২৫টি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের চালকের গতিবিধি, ভাড়া আদায়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, নিয়মশৃঙ্খলা মানার প্রবণতা ও চারিত্রিক দিক নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে উঠে এসেছে বর্তমানে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের নিবন্ধিত বাইকের পরিমাণ প্রায় ২ লাখের ওপর। তাছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন চালক নিবন্ধিত হচ্ছেন।

জরিপে দেখা যায়, এসব চালকের ১০০ ভাগই ভাড়াটিয়া হিসেবে রাজধানীতে বসবাস করেন। এদের ঠিকানার ক্ষেত্রে বেশিরভাগই গরমিল রয়েছে। এসব চালকের ৫৫ শতাংশ পেশা হিসেবে নিয়েছেন। বাকি ৪৫ শতাংশ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকায় অতিরিক্ত সময় বা অফিসে যাওয়া আসার সময় রাইড শেয়ার করে থাকেন। রাইড শেয়ারিং কোম্পানি শুধু নিবন্ধন দিচ্ছে। কিন্তু চালকের তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে না। নিজেদের চালকসংখ্যা বাড়াতে এই বিশৃঙ্খলা চলছে। 

পরিসংখ্যান বলছে, রাইড শেয়ার করছেন এমন চালকদের ৮৫ শতাংশই চালকের। ইন্স্যুরেন্স নেই ২৫ শতাংশ চালকের। সড়কের শৃঙ্খলা মানেন না ৯৯ শতাংশ চালক। আইন সম্পর্কে ধারণা নেই ৮০ শতাংশ চালকের। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন প্রায় ৮৫ শতাংশ চালক। ট্রাফিক সিগন্যাল মানেন না ৭৫ শতাংশ চালক। উল্টোপথে চলেন প্রায় ১৫ শতাংশ চালক। ফুটপাথের ওপর দিয়ে চলাচল করেন ৫ শতাংশ চালক। বেপরোয়া গতিতে চলেন (ফ্লাইওভারের ওপর) ৯০ শতাংশ চালক, সড়কে চলেন ৮০ শতাংশ চালক। রাজধানীতে এ মুহূর্তে যানজটের প্রধান কারণ অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের চালকদের নিয়ম না মানার ক্ষেত্রে রয়েছে ২৫ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটাতেও এরা অগ্রগামী। উগ্র চরিত্রের চালকের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। ধূমপায়ী চালকের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ। মানসিক ও শারীরিকভাবে আনফিট প্রায় ৩৫ শতাংশ চালক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহানগরীতে গণপরিবহনে অব্যবস্থাপনায় দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রাইড শেয়ারিং সেবা। বিশেষ যানজটের এই ঢাকা মহানগরীতে একটি বড় গোষ্ঠী চলাচলের জন্য অ্যাপভিত্তিক এই সেবায় চলাচল করছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পাশের রাস্তায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী বাইকে করে যাওয়ার সময় নিহত হন।

পুলিশ জানায়, লাবণ্য শ্যামলী থেকে রাইড শেয়ারিং সেবার বাইকে করে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে চালকের তথ্য যাচাই বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই চালক মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি উবারের নিবন্ধন নিয়েছেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, ঘটনার পর আমরা প্রথমে বাইকারকে খোঁজ করছিলাম। আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে বাইকার যে ঠিকানাটি দেয় তা ভুয়া ছিল। তার যে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছিলাম তা বন্ধ ছিল। বাইকারের ওই নম্বরে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা ছিল। বিকাশে দেওয়া ঠিকানাও ভুয়া। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন নিয়ে পূর্বেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল। কারণ প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা বিআরটিএ’ও নেই। আবার বিটিআরসির থাকলেও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা না হওয়ায় তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত অনেক দেশে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিয়েই সড়কে রাইড শেয়ারিং পরিচালনা করতে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রামে একজন নারী রাইড শেয়ারিং এর চালক দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছিনতাই ও নারীকে যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটে।

অনেকে বলছেন, অ্যাপভিত্তিক পরিবহন চিহ্নিত করার জন্য এই বাহনের চালকদের নিজস্ব পোশাক থাকা বাধ্যতামূলক করা। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন চিহ্নিত করার জন্য লোগো ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। লেন মেনে চলতে, জেব্রাক্রসিং পারাপার সম্পর্কে ও সড়ক আইন সম্পর্কে সচেতন করে ট্রেনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্যকারী চালকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। লাইসেন্স বা নিবন্ধন দেওয়ার সময় ড্রাইভারদের সড়কের আইন ও শৃঙ্খলা মানার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় না করতে পারে তার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধনের পর অন্তত এক বছর পার না হলে যানবাহনের রাইড শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না বাংলাদেশে এই সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকটা বাছ-বিচার ছাড়াই যানবাহনকে মোবাইল অ্যাপে চলাচলের নিবন্ধন দিচ্ছে তারা। এই নিয়মের সবচেয়ে বেশি লংঘন ঘটছে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র নিবন্ধন নম্বর পাওয়ার পরদিনই রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক মোটরসাইকেল। এভাবে অনেক প্রাইভেট কারও রাইড শেয়ারিংয়ে চলাচল করছে।

চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানিগুলোই বেশি উৎসাহ দেখায়। তাদের প্রতিনিধিরা রাস্তায় নেমে নিবন্ধন করাচ্ছেন। নীতিমালার এ বিষয়টি তারা জানেন না। অ্যাপে নিবন্ধনের সময় রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের এ বিষয়ে কিছু বলছে না।

সরকার রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুমোদন করার পর এক বছর হতে চললেও নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে না পারায় একটি কোম্পানিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তালিকাভুক্তির সনদ পায়নি। এ পর্যন্ত ১২টি কোম্পানি এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানির তালিকাভুক্তি না হওয়ায় যানবাহনকেও রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না। আবার কয়েকটি কোম্পানি ব্যবসা চালিয়ে গেলেও নিবন্ধনের আবেদনই করেনি।

কোনো কোনো কোম্পানি চালকদের কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনে দিতে মোটরসাইকেল বিক্রি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। তানভীর হাসান নামে মোটরসাইকেল চালক বলেন, নীতিমালার বিষয়টি তিনি জানেন না।

জানতে চাইলে পাঠাওয়ের বিপণন বিভাগের প্রধান নাবিলা মাহবুব বলেন, আমরা চালকের মোবাইল নম্বর দিয়ে তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারি। তাছাড়া চালকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। ফলে এসব তথ্য দিয়ে খুব সহজে চালককে শনাক্ত করা যায়।  

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads