• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
নারী এখনো অরক্ষিত

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

নারী এখনো অরক্ষিত

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১১ মে ২০১৯

বাংলাদেশে নারীরা সুরক্ষিত নয়। সরকার নারীর অগ্রযাত্রায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে; কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও সমাজব্যবস্থার গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে নারীরা এখনো অরক্ষিতই রয়ে গেছে। পরতে পরতে তাদের লাঞ্ছনা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে নারীরা এখনো পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ। এ অবস্থায় নারী নেত্রীরা মনে করেন, নারীকে সুরক্ষা দিতে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, মানসিকতার পরিবর্তনটাও জরুরি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কিছু কিছু ঘটনার দ্রুত বিচারও হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মিডিয়া এখন এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সরব ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের কল্যাণেই। ফলে সরকারের প্রশাসনযন্ত্র এমনকি আদালতও এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ইতোমধ্যে মামলায় যা যা করণীয় সবকিছুই নিপুণভাবে করা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চলতি মাসেই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করার কথা জানিয়েছে। আশা করা যায়, এটা নিশ্চিত হলে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে আসামিরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

এর আগে ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে বদরুল নামে এক বখাটে যুবক। ওই ঘটনাটিও ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল বলে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আদালত ওই ঘটনায় আসামি বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক খাদিজাকে ‘অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক কিংবদন্তি নারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বিচারক বলেন, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত পাষণ্ডের চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত খাদিজা দীর্ঘদিন লড়াই করে মৃত্যুর কাছে হেরে যাননি। তিনি বিশ্ব নারী সমাজের প্রতিভূ, বিজয়িনী ও প্রতিবাদকারিণী। পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার নারী। জাতীয় সংসদে অনেক এমপি নারী। স্থানীয় সরকারে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সর্বস্তরে নারীরা সাফল্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। অর্থনীতিতে নারীদের অবদান রয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও নারীদের ভূমিকা রয়েছে। নারীরা এখন উড়োজাহাজ চালান। এ দেশের নারী এভারেস্ট জয় করেছেন। দেশের অগ্রযাত্রায় নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের এখন আর খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বিচারক বলেন, খাদিজাকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে কোপানোর অভিযোগে আসামি বদরুলের যথোপযুক্ত শাস্তি নারীদের সুরক্ষায় তাৎপযপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ‘ভবিষ্যতে বদরুলরা এমন কাণ্ড থেকে বিরত থাকবে’ বলেও পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়। এতে নারীরা সুরক্ষিত থাকবে।

নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায় দিন দিন এগুচ্ছে এ কথা যেমন ঠিক তেমনি নারীকে হেয় করে দেখার প্রবণতা এখনো সমাজ থেকে দূর করা সম্ভব হয়নি। এখনো প্রতি বছর রাজধানীসসহ দেশজুড়ে স্কুল-কলেজগামী লাখো বালিকা পথে বখাটেদের হাতে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার সময় এমনকি বাড়ির বাইরে বেড়াতে গিয়ে, মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়ে নারীরা হেনস্তা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ ব্যাপারে মানবাধিকার আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একটা সময় মামলার কথা বলতাম, এখন আর সেটা বলতে চাই না। মামলা করে সাজা দিয়ে কিছু অপরাধীর অপরাধ চিহ্নিত করা যাবে, শাস্তি দেওয়া যাবে; কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান কতটুকু হবে এটাই হচ্ছে দেখার বিষয়। তিনি বলেন, পরিবর্তন আনতে হবে মানসিকতায়। নারীকে ভোগ্যপণ্য ভাবার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পরিবর্তন ঘটাতে হবে সমাজ ব্যবস্থায়। এজন্য সামজিক আন্দোলন ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারকে নারীবান্ধব হিসেবে উল্লেখ করে এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, নারীর পথ চলাকে আরো সুগম করার জন্য, নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য এবং সর্বোপরি নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নারীকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে সরকারকে আরো অনেক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে নারী নির্যাতন আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে নারীর ওপর আর সহিংসতা চালিয়ে কেউ পার না পায়।

 

২ নারীর ৬৪ জেলা জয়

বাংলাদেশের দুজন তরুণী দেশের ৬৪ জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে সম্প্রতি তাদের ভ্রমণের ইতি টেনেছেন। পেশায় চিকিৎসক সাকিয়া হক এবং মানসী সাহা, যারা মোটরবাইকে তাদের এ ভ্রমণ অভিযানের নাম দিয়েছিলেন ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এই বয়সের দুজন নারী এভাবে মোটরবাইকে সারা দেশ ঘুরে বেড়ানো শুধু বিরলই নয়, দুঃসাহসিকও বটে। এই ভ্রমণের সময় দেশের নানা দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি তারা সামাজিক সচেতনতামূলক কাজেও অংশ নিয়েছেন। গতকাল মুঠোফোনে মানসী সাহা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ৬৪ জেলা ভ্রমণের উচ্ছ্বাস এবং তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, এত সহজেই যে আমরা দুটি মেয়ে ৬৪ জেলা জয় করে ফেলব এটা ভাবতেই রোমাঞ্চিত হচ্ছি। আর চলার পথে বিভিন্ন স্থানে, চায়ের স্টলে থামলে বা যানজটে আটকে গেলে অনেকেই উটকো মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু সেগুলো কানে না তুলে আমরা লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads