• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
উৎপাদিত লবণ নিয়ে বিপাকে চাষি

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

উৎপাদিত লবণ নিয়ে বিপাকে চাষি

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০১৯

কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন চাষিরা। এখানকার সব লবণচাষির অবস্থা একই। তিন মাস আগে মাঠ থেকে যে লবণ তারা বিক্রি করতেন ২৮০ টাকা মণ, সে লবণের দাম এখন অর্ধেকে নেমে ১৫০ টাকা হয়েছে। এজন্য লবণের ন্যায্য দাম পেতে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন তারা। দাবি উঠেছে কক্সবাজারে লবণ বোর্ড গঠনের। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না করে দেশীয় লবণে চাহিদা মেটানোর দাবি কৃষকদের।

লবণ উৎপাদন করতে গিয়ে চাষিদের পায়ের তালু ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। কারণ লবণের মাঠ যেমন গরম কড়াইয়ের মতো, তেমনি পায়ে লবণ জমে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তারপরও এত কষ্টের উৎপাদিত লবণ বিক্রি না হওয়ায় হতাশ চাষিরা।

চকরিয়ার আনিসুর রহমান ২০ কানি (৩৯ শতাংশে এক কানি ধরে) জমিতে লবণ চাষ করছেন। দাম কম হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, খরচ উঠাতে পারবেন কি-না সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও উৎপাদন ইতোমধ্যে ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে। রেকর্ড লবণ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত লবণ কোম্পানিগুলো এটি কেনা কমিয়ে দেওয়ার কারণে দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এসব অঞ্চল থেকে এসিআই সল্ট লিমিটেড, মোল্লা সল্ট, মধুমতিসহ বড় ও নামিদামি কোম্পানি লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।

দরপতনের কারণে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় লবণ বিক্রি করছেন না বলে জানান স্থানীয় চাষিরা।

আনিসুর রহমান বলেন, আমার চার হাজার মণ লবণ মজুত রয়েছে। গর্ত করে মাঠেই রেখেছি এ লবণ। কীভাবে লবেণর দাম বাড়ানো যায় সরকার যেন সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। চকরিয়া উপজেলার ৬০-৬৫ শতাংশ জমিতে লবণ চাষ হয়। বড় ও নামিদামি কোম্পানিগুলো লবণ না কেনার কারণে চাষি পর্যায়ের বিক্রি অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে লবণের দাম কম হওয়ায় চাষিরা বিক্রি করছেন না। যার ফলে মাঠে হাজার হাজার মণ লবণ অবিক্রীত পড়ে রয়েছে।

এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিজনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, আমাদের কারখানার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ কেজি লবণ সংগ্রহ করে থাকি। এখন আমরা খুচরা বাজার থেকে লবণ কেনা বন্ধ রেখেছি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে দেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। বিপরীতে বিসিক লবণ উৎপাদন এলাকার ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনে জড়িত রয়েছে প্রায় ৪ লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ১৩টি মোকামের অধীনে লবণ উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ টন।

বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, এ অঞ্চলের কৃষক সাধারণত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লবণ চাষ করে থাকে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরো বাড়তে পারে।

চকরিয়ার কোটাখালীর লবণচাষি মো. ফারুক জানান, পাঁচ কানি (এক কানি সমান ৩৯ শতাংশ) জমিতে লবণ চাষ করেছি। এক কানি জমিতে ২৫০ মণ লবণ উৎপাদন হয়। এতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। জমি তৈরিতে ২৭ হাজার, মাটিতে পলিথিন বিছাতে দশ হাজার ৫০০ টাকা, জমিতে পানি দিতে তিন হাজার টাকা। নিজের শ্রমের মূল্যসহ আরো খরচ আছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো এখন লবণ কিনতে চাচ্ছে না। সরকার যেন আমাদের কথা চিন্তা করে। আমরা যেন ন্যায্যমূল্যে লবণ বিক্রি করতে পারি। এটা না করতে পারলে লাখ তো দূরের কথা, লবণ চাষের খরচই উঠবে না। বিদেশ থেকে অনেকে লবণ কিনছে। সরকারের কাছে দাবি, দেশি লবণ কিনে আমাদের বাঁচান। বিদেশ থেকে লবণ যেন দেশে প্রবেশ না করে।

স্থানীয়রা বলছেন, লবণ শিল্প বাঁচাতে হলে সরকারকে কক্সবাজারে ‘লবণ বোর্ড’ গঠন করতে হবে। তারা যেন ঠিকমতো দাম পায়, সে দিকটি দেখবে এ বোর্ড। বড় বড় ফ্যাক্টরিতে যে সমস্যা হয়েছে, এটা যদি সরকার সমাধান করে, তাহলে ২৮০-৩০০ টাকা মণে লবণ বিক্রি করতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads