• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
পুলিশের ওপর আরো হামলার শঙ্কা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

পুলিশের ওপর আরো হামলার শঙ্কা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০১৯

রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে বিস্ফোরণে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) তিনজন আহত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গত রোববার রাতে বিস্ফোরণে এক এএসআইসহ তিনজন আহত হন। বিস্ফোরণটি হয়েছে পুলিশের একটি গাড়িতে। জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, আইএস ঢাকার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই সময় ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।

এসবের মাঝে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ বিষয়ে বিশদ একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৬ মে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশে একটি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে পুলিশকে আরো সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে তল্লাশি চৌকিতে ব্যাগ চেক করার সময় বোম্ব ডিটেক্ট যন্ত্র ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে মালিবাগ ও গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বোমা হামলার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায় স্বীকারে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখছেন না পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও ভাবনায় পড়েছে। নড়েচড়ে বসেছে র্যাব-পুলিশসহ গোটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ধরনের ছোটখাটো ঘটনার পর বড় ধরনের কোনো নাশকতামূলক তৎপরতায় যাতে জঙ্গিরা লিপ্ত হতে না পারে, সেজন্য পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা একাধিক বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করছেন।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আইএস কি না জানি না। তবে গুলিস্তানে এবং মালিবাগে পুলিশের ওপর হামলা চালানো বোমা দুটোই শক্তিশালী ছিল। কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এখনো মনে করি না, বাংলাদেশে জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম। গত দুই-আড়াই বছরে তাদের সেই সক্ষমতা নস্যাৎ করে দিয়েছেন এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সংগত কারণেই জঙ্গিদের ক্ষোভ পুলিশের ওপর। তাই তারা পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের আমরা আরো সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দিয়েছি। এখন থেকে পোশাকধারী পুলিশ টিমের সাথে সাদা পোশাকেও এক-দুজন রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। যারা আশপাশের লোকজনের গতিবিধির ওপর নজরদারি করবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে জঙ্গিরা আইএসের নাম ব্যবহার করছে। এর আগেও তারা একাধিকবার বাংলাদেশকে টার্গেট করার কথা এবং জঙ্গি হামলার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন টিআই বলেন, আমরা দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। জঙ্গিরা শুনেছি পুলিশকে টার্গেট করে হামলা করছে। আমরাও তাদের রুখব। তিনি আরো বলেন, যারা ঘটনা ঘটায় তারা হুমকি দেয় না। আর যারা হুমকি দেয় তারা ঘটনা ঘটাতে পারে না।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সদস্যদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা নতুন কিছু নয়। এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ঘটে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী পেশাদার দুর্বৃত্ত ও জঙ্গিরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে থাকে। এর আগে বাংলাদেশেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও পরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে ২০১৩ ও ১৪ সালে পুলিশ বাহিনীর ১৭ সদস্য নিহত হন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালে জেএমবি নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর নেতৃত্বে ছিলেন শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই। ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই এই ২ জঙ্গি নেতাসহ শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জেএমবির পতন ঘটে। এই জেএমবি আবার ২০১৫ সালে নব্য জেএমবি নামে সংগঠিত হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী, তানভির কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মেজর মুরাদ। এদের নেতৃত্ব এবং পরিকল্পনায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২৮ জন নিহত হন। ঘটনার রাতেই আইএস দায় স্বীকার করে। এরপর আইএস বাংলাদেশে আরো হামলা চালানোর হুমকি দেয়। কিন্তু গত প্রায় ৩ বছরে তারা কোনো নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের সবগুলো ডেরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে অভিযানে নেতৃত্বস্থানীয় সব জঙ্গি নিহত হয়েছে। এখন তারা আবার নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads