• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
৬২৩ দখলবাজের থাবায় অস্তিত্ব সংকটে তিতাস

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

৬২৩ দখলবাজের থাবায় অস্তিত্ব সংকটে তিতাস

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০১৯

বৈচিত্র্যময় বাংলার অন্যতম নদী তিতাস। এই তিতাস নদীকে ঘিরে রচিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। অথচ সেই তিতাস এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখল আর দূষণের ফলে রূপ লাবণ্য হারিয়ে নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। নাব্য হারিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে তা গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে নৌ-চলাচলসহ নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহীরা তাদের জৌলুস হারিয়েছে। মেঘনা নদীর কন্যাখ্যাত খরস্রোতা এই তিতাস নদীর সেই বিশালতা এখন যে সোনালি অতীত। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নদীর নাব্য ফেরাতে খননের কাজ চলছে। দ্রুতই নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, তিতাস নদীকে ঘিরে একসময় সমৃদ্ধ ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসা, বাণিজ্য, কৃষিসহ এলাকার অর্থনীতি। এ নদীটিতে বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার ও নৌকায় করে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলসহ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হতো। লঞ্চের শব্দ আর বড় পাল তোলা নৌকার মাঝি-মাল্লাদের কণ্ঠধ্বনিতে তিতাসপারের মানুষের ঘুম ভাঙত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তিতাস নদী সরু খালে পরিণত হওয়ায় তা এখন সোনালি অতীত।

এরই মধ্যে ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটির ১০৩ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ও চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। সে সঙ্গে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে পৌর এলাকার আনন্দ বাজার, মেড্ডা, শিমরাইল কান্দি, সদর উপজেলার উজানিশারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর দুই পাশে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা ও দালানকোঠা। এতে নদী সরু হয়ে তার নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে নৌ-চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহীরা বিপাকে পড়েছে। সম্প্র্রতি নদী খননকাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ড্রেন ও নালার পানিতে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে এই তিতাস নদীকে ঘিরে স্বপ্ন বুনা জেলে সম্প্র্রদায়ের মধ্যে চলছে চরম দুর্দিন। নদীর পানি শুকিয়ে মাছশূন্য হয়ে পড়ায় জেলে পরিবারের জীবন কাটছে হতাশায়।

জেলে রবি দাস জানান, নদীতে এখন আর আগের মতো পানিও নেই, মাছও নেই। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

অপর জেলে কাজল দাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আগে জাল ফেললেই মাছ পেতাম। কিন্তু এখন তেমন মাছ পাই না।

নদীপথে চলাচলকারীরা জানিয়েছেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় নৌ-চলাচলে সময় বেশি লাগছে। তাছাড়া খননকাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে না।

লঞ্চচালক মো. সিরাজ মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ৪০ বছর ধরে নদীপথে লঞ্চ চালাই। তিতাসের বুকে পানির যে উত্তাল ঢেউ ছিল, তা এখন আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে নদীর জল শুকিয়ে তা সরু হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। সঠিকভাবে নদীর খননকাজ না করলে এই নদীপথে লঞ্চ, নৌকা ও ভলগেট চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নদী-তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, নদীর চারপাশ দিয়ে নদী দখলের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে নদীর দুই ধারে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাতে অবৈধভাবে ছোট ছোট স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর ভেতরেই বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা তিতাস নদীকে বাঁচাতে সরকারসহ প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রশাসন যেন অভিযান চালিয়ে নদীকে দখলমুক্ত করে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌরপদ সুত্রধন জানিয়েছেন, নদীর স্বাভাবিক গতি ফেরাতে খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদীর পরিবেশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি নদীর নাব্য ফিরে পাবে।

জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান বলেন, নদী-তীরবর্তী বাসিন্দারা বিভিন্নভাবে স্থাপনা তৈরি করে নদীর বিভিন্ন জায়গা দখল করে রেখেছে। আমরা ইতোমধ্যে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে ৬২৩ জন দখলবাজদের সুনির্দিষ্ট তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। শিগগিরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে অভিযান শুরু হবে।

ঐতিহ্যবাহী এই নদীর স্বাভাবিক রূপ ও গতি ফেরাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্টরা- এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads