• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
ঈদের তিন দিনে ৪০ রোগীর মৃত্যু

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

শেবাচিম

ঈদের তিন দিনে ৪০ রোগীর মৃত্যু

● ৪০ জন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা বড় কিছু নয়- ডা. বাকির হোসেন ● ৫-৭ জুন বেশির ভাগ চিকিৎসক ও নার্স ছিলেন ছুটিতে ● রোগীদের শেষ ভরসা ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ● জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের দেখা পাননি রোগীরা ● আগে ঈদের ছুটিতে গড়ে ১৫-১৬ জন রোগীর মৃত্যু হতো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০১৯

পবিত্র ঈদুল ফিতরের তিন দিনে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ৪০ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ওই তিন দিনেই স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছেন আরো ২৬৯ রোগী, যার বেশির ভাগ রোগী ও তাদের স্বজন চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ তুলে বাইরে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

যদিও রোগী এবং স্বজনদের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া তিন দিনে ৪০ জনের মৃত্যুর যে ঘটনা ঘটেছে, তা-ও হতাশাজনক নয় বলে দাবি-হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেনের।

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৫ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসক ও নার্স ছুটিতে ছিলেন। এ কারণে বিশেষ রোস্টারের মাধ্যমে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যদিও ঈদের দ্বিতীয় দিন এক ঘণ্টার জন্য নামেমাত্র হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা রাখা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদের ছুটির তিন দিন ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের শেষ ভরসা ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অধ্যাপক লেভেলের কোনো চিকিৎসককে হাসপাতাল ভিজিট করতে দেখেননি রোগীরা। আর মিড-লেভেল চিকিৎসরাও ছিলেন ঈদ আনন্দ নিয়ে। মাঝে-মধ্যে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কয়েকজন চিকিৎসক এসে রোগীদের খোঁজখবর নিয়েছেন। এতে ঈদের ছুটিতে রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিতে টানা তিন দিনে মোট ৪০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু হয়েছে আরো দুজনের। তবে তারা দুজন হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ আগে থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন, আবার কেউ ছিলেন নতুন ভর্তি রোগী। তবে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে নতুন রোগীর সংখ্যাই বেশি বলে নার্সদের সূত্রে জানা গেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঈদের দিন অর্থাৎ ৫ জুন ১৩ জন ভর্তি রোগীর মৃত্যু হয়। ওইদিন হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন ১০৮ জন রোগী। ছাড়পত্র দেওয়া হয় ১৩৮ জনকে। ঈদের দিন নতুন রোগী ভর্তি হয় ২৬৪ জন। মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৭৬, যা ছিল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।

৬ জুন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৪ জন। যার মধ্যে নতুন ভর্তি রোগী ৪১৩ জন। মোট রোগীর মধ্য থেকে মৃত্যু হয় ১২ জনের। স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেন ৮৬ রোগী এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় ১৩৪ জনকে।

তা ছাড়া ঈদের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ৭ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৫৫ জন। নতুন ভর্তি হয় ৩২৯ জন রোগী। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জন রোগীর। স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়ে যান ৭৫ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় ১৪৯ রোগীকে।

ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাওয়া বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, হাসপাতালের ডাক্তাররা ঈদ পালন করছেন। ফাঁকা হাসপাতালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার কারণেই তারা স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন।

যে ৪০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যেও অনেক স্বজনের অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসা অবহেলার। এ নিয়ে গত তিন দিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কয়েকটি হই-হল্লোড়ের ঘটনাও ঘটেছে। তবে এ নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করতে রাজি হননি।

ঈদের তিন দিনে রোগীর মৃত্যু ও রোগীদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার ঘটনাটি বড় কিছু নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। তিনি বলেন, এর আগে হাসপাতালে ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৬ জন রোগীর মৃত্যু হতো। কিন্তু এবার তা রোধ হয়েছে। কেননা কোনো কোনো সময় স্বাভাবিক দিনেও এর থেকে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads