• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ভয়ংকর আতঙ্ক ডেঙ্গু

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ভয়ংকর আতঙ্ক ডেঙ্গু

ঠাঁই মিলছে না হাসপাতালে

  • রায়হান উল্লাহ
  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০১৯

রাজধানী ঢাকায় ভয়ংকর আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ডেঙ্গু। সারা দেশও বাদ পড়ছে না। ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার ছোবলে প্রতিদিন শিশুসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ হাসপাতালে ছুটছেন। রোগী ও স্বজনদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। চাপ বাড়ায় বেড দিতে পারছে না অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বাঁচার আশায় হাসপাতালের ফ্লোরে বিছানা পেতে অবস্থান নিচ্ছেন।

এর মধ্যেই গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে, যদিও সরকার বলছে আটজন। এর মধ্যেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিধনে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নগরের প্রায় সর্বত্র মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। যদিও তা কাজ করছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

এদিকে সরকার ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর মতো মহামারীতে দেশের মানুষের মৃত্যু যেন সরকারের কাছে খেলা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী। অন্যদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ডেঙ্গু দমনে ব্যর্থ হয়ে ছেলেধরা গুজবের মতো ডেঙ্গু রোগকে গুজব বলছে। মানুষ মরছে আর সরকারি দলের নেতারা বলছেন, এটা নাকি বিএনপির যড়ষন্ত্র।

এসব নানা মত নিয়েই ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৩ জন ভর্তি হয়েছেন, যা ঢামেক হাসপাতালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ৬৯০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আশার কথা, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য অধিদপ্তরে মিডিয়া সেল চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত মিডিয়াতে প্রচার করা হচ্ছে।

এর মাঝে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মশা দিয়েই মোকাবেলা করা হতে পারে মশা। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ এখন দুটো বিকল্প উপায় বিবেচনা করছে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা এখন মশা মারতে কামান দাগানো নয় বরং মশা দিয়েই চাইছেন ‘ডেঙ্গু মশা’ মোকাবেলা করতে। উপায় দুটি হলো— ১. উবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া ও ২. জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশা। এই দুটো পদ্ধতিই চীনে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে দুবছর সময় ধরে। তাতে দেখা গেছে সেখানে মশার বংশ বিস্তার ৯০ শতাংশের মতো কমে গেছে।

এসব নিয়েই অনেকে বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে খুব সহজেই বোঝা যায় আকারে ক্ষুদ্র হলেও কতটা ভয়ংকর হতে পারে মশা। পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক এই কীট। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু- সবই বহন করে মশা। শুধু বহনই নয়, সামান্য এক কামড়ে এসব ছড়িয়ে দিতে পারে একজন থেকে আরেক জনের শরীরেও।

জানা যায়, মশার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর এডিস মশা। চারশ বছর আগে আফ্রিকায় এর জন্ম। কিন্তু এরপর এটি পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটি পরিচিত ‘এশীয় টাইগার’ হিসেবে।

আন্তর্জাতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, মশার কারণে শুধু এক বছরে নানা রোগে আক্রান্ত হয় ৭০ কোটির মতো মানুষ। তাদের মধ্যে মারা যায় ১০ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশেও প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। জানা যায়, শুধু এ বছরের জুন-জুলাই মাসেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে দশ হাজারের মতো মানুষ।

রোগী ভর্তির জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে : ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত শয্যার বাইরেও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি করছে না। ফলে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে হচ্ছে স্বজনদের। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে অন্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, মগবাজার, কাকরাইল, পুরান ঢাকাসহ অনেক এলাকার হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। এদিন দুপুরে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অন্তত ১২ জনকে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। তাদের একজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতাল থেকে এখানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেন্ট্রালেও সিট ফাঁকা নেই। এ হাসপাতালে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে ঘণ্টাখানেক ধরে অপেক্ষা করছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী। রামপুরার বাসিন্দা ওই নারী জানান, খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে শয্যা খালি না পেয়ে তিনি এসেছেন এখানে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শুক্রবার প্লাটিলেট কাউন্ট ছিল আড়াই লাখ, শনিবার সকালে নতুন করে পরীক্ষার পর দেখা গেছে সেটা দেড় লাখে নেমে এসেছে। আমি এখনো কোনো হাসপাতালে ভর্তি হতে পারিনি। মনে হচ্ছে আমি মরে যাব।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের উপপরিচালক এ কে এম মোজাহের হোসেন জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখানে ৯৫ জন ভর্তি আছেন। জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মোট ৭১৫ জন ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ডেঙ্গু রোগীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কিন্তু কোনো সিট ফাঁকা না থাকায় বেশিরভাগকে চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠাতে হচ্ছে। এদের অনেককেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন ছিল। ডেঙ্গুকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অন্য গুরুতর রোগীকেও ভর্তি না নিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে।

মোজাহের বলেন, গত তিন দিন ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। রোগীদের ৮০ শতাংশই ডেঙ্গু সিনড্রোম নিয়ে আসছেন। অনেকে সিভিয়ার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, এটা এবার বেশি। শরীর থেকে রক্ত ঝরলে, ডায়রিয়া শুরু হলে ডেঙ্গুর সিভিয়ার রূপ পাওয়ার বিষয়টি বোঝা যায়।

কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে অপেক্ষায় ছিলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্তত ৩৫ জন। হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। শুক্রবার রাতেই ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের কোনো সিট ফাঁকা না থাকায় অনেকেই সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।

ছেলেকে নিয়ে এ হাসপাতালে আসা হারুন খান নামের একজন বলেন, অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থায় একটি সিটের ব্যবস্থা করা হয়। ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেলেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, শনিবার সকাল থেকে জরুরি বিভাগে ৪৬ জন রোগী এসেছেন, যাদের ১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। পরিস্থিতি বুঝে ছয় জনকে ভর্তি নেওয়া হলেও বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় একটি পুরুষ ওয়ার্ডে ৩০টি শয্যা এবং একটি নারী ওয়ার্ডে ৩০টি শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে।

উদ্বিগ্ন এই চিকিৎসক বলেন, পরিস্থিতি মোটেও স্বাভাবিক নয়। শয্যার অভাবে হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরত পাঠানো খুবই কষ্টের। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।

ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে এখনো কিছু শয্যা খালি আছে বলে জানালেন একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কিছু অব্যবহূত কক্ষ ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন তারা। ডেঙ্গু রোগ নিয়ে এসে যারাই ভর্তি হতে চাইছেন, তাদের ভর্তি করে নেওয়া হচ্ছে।

মিরপুরের টেকনিক্যাল এলাকায় বারডেম হাসপাতালের দ্বিতীয় শাখার লজিস্টিকস বিভাগের ব্যবস্থাপক আশরাফুল হক শাওন জানান, ডায়াবেটিসের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও তারা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা সেল খুলেছেন। তিনি বলেন, এখানে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ওয়ার্ডে আর কোনো সিট ফাঁকা নেই।

মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালের অভ্যর্থনা কাউন্টারে কথা হয় মধুবাগের বাসিন্দা খায়রুল আলমের সঙ্গে; ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী ফাতেমাকে ভর্তি করাতে এসেছেন তিনি। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সাধারণ শয্যা ৪৫টি। এছাড়া এনআইসিইউ ও পিআইসিইউ ২০টি, ১২টি আইসিইউ এবং ১২টি সিসিইউ শয্যা আছে। এসব শয্যার বেশিরভাগেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের রাখা হয়েছে।

রাশমনো হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক তামান্না জামান অন্তু বলেন, রোগী অনেক বেশি। আমরা হাসপাতালে জায়গা দিতে পারছি না। অনেককে ওয়েটিংয়ে রেখেছি। ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু আক্রান্ত।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কেশব আচার্য বলেন, আগে ডেঙ্গু হলে রক্তক্ষরণ হতো। এখন যেসব রোগী আসছে তাদের অনেকেরই ফুসফুসে পানি, অথবা প্রেসার অনেক কমে যাচ্ছে, অথবা বমি খুব বেশি হচ্ছে।

কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক স্পেশালাইজড হাসপাতালেও রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। ভর্তি হতে না পেরে অনেকে যাচ্ছেন অন্য হাসপাতালে। হাসপাতালের অভ্যর্থনা কাউন্টারে দায়িত্বরত ইব্রাহিম নামে একজন জানান, শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৩০ জন রোগী ভর্তির জন্য কাগজপত্র জমা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় ভর্তি করা যাচ্ছে না। অন্তত ২০ জনকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছেন স্বজনরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার সেখানে ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন, ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে গোলাম কিবরিয়া নামে খিলগাঁও থেকে আসা এক রোগী বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য আলাদা দুটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তাতেও জায়গা না হওয়ায় অন্যান্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হচ্ছে।

২৫০ শয্যার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভিড়। তবে শয্যার বাইরে রোগী ভর্তির নিয়ম না থাকায় অনেককেই ফেরত পাঠাতে হচ্ছে বলে জানালেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুব আলম। তিনি জানান, শুক্রবার ৬০ জন রোগী এসেছেন, যার মধ্যে ৪০ জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। শয্যা না থাকায় তাদের ভর্তি করা যায়নি।

একদিনে সর্বাধিক রোগী হাসপাতালে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (গত শুক্রবার সকাল ৮ থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮ পর্যন্ত) সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮৩ জন। এই সংখ্যা গত এক মাসের (২৬ জুন-২৭ জুলাই) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবচেয়ে বেশি ৬৬৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল গত ২৪ জুলাই।

অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর দিন থেকে গতকাল (২৭ জুলাই) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে থেকে ৭ হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ৬৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী। সবচেয়ে বেশি ২৩৩ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরো ১১৪ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেলে ২৩৩ জনের বাইরে মিটফোর্ডে ৭, শিশু হাসপাতালে ৯, সোহরাওয়ার্দীতে ৩৬, হলি ফ্যামিলিতে ২২, বারডেমে ১২, পুলিশ হাসপাতালে ২৪, মুগদা মেডিকেলে ৪৯, বিজিবি হাসপাতালে ১৩, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরো ২০৬ জন ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। রাজধানীর বাইরে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ৮ জন, চট্টগ্রামে ২৭ এবং সিলেট বিভাগে ৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

ঢাবি ও জাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। প্রথম ঘটনায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফিরোজ কবিরের মৃত্যু হয় বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন। ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।

দ্বিতীয় ঘটনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী মারা গেছেন। তার নাম ইউ খাইন নু। ছাত্রীর আত্মীয় মং ল টিন জানান, ইউ খাইন নু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শনিবার বিকালে নিজ জেলা কক্সবাজারে মারা যান। তিনি ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের (৪৮ ব্যাচ) ও প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ইউ খাইন নু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি হন। পরে অবস্থার অবনতি হলে নিজ বাড়িতে কক্সবাজার যান। শনিবার বিকালে বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

বিএসএমএমইউতে ৪০ বেডের ডেঙ্গু সেল চালু : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৪০ শয্যাবিশিষ্ট ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেল চালু করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের নিচতলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় এ সেল চালু করা হয়।

৪০ শয্যার মধ্যে ২৫টি শয্যা কেবিন ব্লকে এবং অন্য শয্যাগুলো ডি ব্লকের মেডিসিন বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মিডিয়া সেল চালু : বন্যা, গুজব ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য অধিদপ্তরে মিডিয়া সেল চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত মিডিয়াতে প্রচার করা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার এক সরকারি তথ্যবিবরণীতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, উপরোক্ত বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য টেলিফোন নম্বর- ৯৫১২২৪৬, ৯৫১৪৯৮৮ ও ৯৫৪০০১৯ এবং ফ্যাক্স নম্বর-৯৫৪০৯৪২, ৯৫৪০০২৬ ও ৯৫৪০৫৫৩ এবং ইমেইল : piddhaka¦gmail.com, ওয়েবসাইট : www.pressinform.gov.bd এবং ফেসবুক আইডি : PID BD এবং ফেসবুক পেজ : Press Information Department, Bangladesh- এ যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া ডেঙ্গু সংক্রান্ত চিকিৎসা এবং তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত মনিটরিং সেলের ফোন নম্বর : ০১৭৩১৫১৮৮৬৬, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কল সেন্টার ০১৯৩২৬৬৫৫৪৪ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ফোন নম্বর : ০৯৬১১০০০৯৯৯-এ যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads