• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
নির্দেশ মানছে না হাসপাতালগুলো

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

নির্দেশ মানছে না হাসপাতালগুলো

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০২ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় সরকারের নির্দেশ মানছে না হাসপাতালগুলো। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু চিকিৎসা ফ্রি দেওয়া হবে এমন ঘোষণা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। আবার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য ডেঙ্গু রোগের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ব্যয় নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছে না তারা। ফলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই স্বজনদের।

সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগ দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন ঈদে এটি আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিলেও অসাধুচক্রের কারণে সরকার সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুর চিকিৎসা তদারক করতে মাঠে নামিয়েছে ১০টি উচ্চ পর্যায়ের টিম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ টিমও বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করেছে। মাঠে নেমেছে এলিট ফোর্স ব্যারের ভ্রাম্যমাণ আদালতও।

তবে সূত্রগুলো বলছে, কার্যত এতকিছুর পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট টিম ও আদালত পরিদর্শনকালে নির্দেশ কার্যকরের তথ্য দেওয়া হচ্ছে। আবার অনুসন্ধানে পাওয়া যাচ্ছে কার্যকর হচ্ছে না। এমন তথ্য পাওয়ায় গত ৩-৪ দিনে প্রায় অর্ধশত হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। আমরা সেটি জানিয়ে দিয়েছি হাসপাতালগুলোকে। এরপরও বেশির ভাগ হাসপাতাল নির্দেশ পরিপালন করছে না। তারা ডেঙ্গুর প্রকোপকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। এটি দুঃখজনক। তবে আমাদের তদারক টিম ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে ল্যাব এইড, ইবনে সিনা, সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ নামিদামি অনেকগুলো বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় সরকারের নির্দেশ লঙ্ঘনের কারণে এসব হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে সতর্ক করা হয়।

অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। অবশ্য সরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন পুরনো।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর জানানো হয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেটি আদৌ কার্যকর হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের অর্থে। এমনকি ওষুধপত্রও অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা তারেক সালমানের ৮ বছরের বাচ্চা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। তিনি তার মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন আল রাজি হাসপাতালে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হাসপাতালের পূর্বের নির্ধারিত খরচই তাকে বহন করতে হয়েছে গতকাল। 

বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় ব্যয় নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মূলত উচ্চব্যয় নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ডেঙ্গুর এনএস-১ পরীক্ষা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পূর্ব মূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া আইজিএম প্লাস আইজিই পরীক্ষার খরচ বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা। এ ফি আগে ছিল ৮০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। সিবিসি পরীক্ষা করে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নিতে পারবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এই মূল্য তালিকা গত ২৮ জুলাই থেকে কার্যকর করার নির্দেশ দেয় সরকার। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই মূল্য তালিকা অনুসরণ করে তা কার্যকর করতে বলা হয়।

এছাড়া সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটি ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ চালু করতে বলা হয়। সব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করতে বলা হয়। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবলও বৃদ্ধি করতে বলা হয়। এসব সিদ্ধান্তের কিছুই কার্যকর করা হয়নি হাসপাতালগুলোতে। এদিকে দেশের চার সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্লাটিলেট পরীক্ষা ফ্রি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে গতকাল। এ হাসপাতালগুলো হলো— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads