• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
শিশু অধিকার রক্ষায় হচ্ছে কমিশন

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

শিশু অধিকার রক্ষায় হচ্ছে কমিশন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৯

শিশুর অধিকার রক্ষায় কমিশন গঠনের উদ্যোগ গতি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন আইনের খসড়া প্রণয়ন হলেও পরে তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। সম্প্রতি খসড়াটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ছয় মাসে বাংলাদেশে ৩৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের পর এক ছেলে শিশুসহ মোট ১৬টি শিশু মারা গেছে। অন্তত ৪৯টি শিশু (৪৭ জন মেয়েশিশু ও ২ জন ছেলেশিশু) যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ বাস্তবায়নে শিশু অধিকার রক্ষায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিধান রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন শিশু অধিকার রক্ষায় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার বলেন, বর্তমানে আমরা ডে কেয়ার আইনটি নিয়ে কাজ করছি। এটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এরপর শিশু অধিকার কমিশন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার বিষয়ে নজর দেওয়া হবে।

শিশু অধিকার কমিশন আইনের খসড়াসহ একটি প্রস্তাব ২০১৪ সালের শুরুর দিকে আইন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি। এরপর ২০১৬ সালে একটি খসড়া প্রণয়ন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

২০১৬ সালের ১০ আগস্ট সেসময়কার মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, শিশু অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে শিশু অধিকার কমিশন গঠন হবে। এ বিষয়ে নানা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন আইনের খসড়া পাঠিয়ে মতামত জানানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে সেভাবে সাড়া মেলেনি।

এজন্য সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে জরুরি ভিত্তিতে মতামত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছে মতামত চেয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার আনুষঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ শিশু অধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করবে এবং রাষ্ট্রপতি এই আইনের বিধান অনুযায়ী কমিশনের একজন চেয়ারম্যান ও ২ জন কমিশনার নিয়োগ করবেন। কমিশনের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। প্রয়োজনে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এর কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কমিশন।

চেয়ারম্যান ও ২ জন কমিশনার সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। কমিশনারদের মধ্যে ন্যূনতম একজন নারী হবেন। চেয়ারম্যান হবেন কমিশনের প্রধান নির্বাহী। এই আইন কার্যকর হওয়ার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি কাছে নাম প্রস্তাবের জন্য বাছাই কমিটি গঠিত হবে।

বাছাই কমিটির প্রধান হবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী। মনোনয়ন কমিটির সুপারিশকৃত নাম থেকে একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা একই সময়ে অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদের স্বাভাবিক মেয়াদ হবে নিয়োগের তারিখ থেকে ৫ বছর। কেউ এক মেয়াদের বেশি নির্বাচিত হবেন না। এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালন বা ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কমিশন সর্বাবস্থায় শিশু অধিকার এবং শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। 

কাজের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়, শিশু অধিকার পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নয়নে কমিশন জাতীয় সংসদ, মন্ত্রিসভা, যে কোনো মন্ত্রণালয় বা সরকারি দপ্তর এবং আধা-সরকারি, বেসরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেবে এবং সাধারণ ও বিষয়ভিত্তিক সুপারিশ পেশ করতে পারবে। বাংলাদেশের সংবিধান, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে শিশু অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে রাষ্ট্রের গৃহীত উদ্যোগগুলো পর্যালোচনা করে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবে কমিশন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান, সমন্বয় সাধন, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারবে।

যে কোনো প্রবেশন কর্মকর্তা বা শিশু কল্যাণ বোর্ডের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ পরামর্শ ও নির্দেশনা দিতে পারবে। শিশু অধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, শিশুর অভিভাবক বা ওই শিশুর পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যে কারো কাছ থেকে প্রাপ্ত হোক না কেন, কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা অন্য কোনো উপায়ে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের তথ্য পেলে বা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সংশ্লিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান এবং তদন্ত করতে পারবে।

এই আইনের অধীন অনুসন্ধান বা তদন্তের ক্ষেত্রে কমিশনের দেওয়ানি কার্যবিধি-১৯০৮’র অধীন একটি দেওয়ানি আদালতের মতো ক্ষমতা থাকবে। প্রয়োজনে সাক্ষীর প্রতি সমন ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে কমিশন। কোনো লিখিত বা মৌখিক সাক্ষ্য শপথের মাধ্যমে দেওয়ার জন্যও তলব করতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তিকে কমিশনের কোনো বৈঠকে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া বা তার কাছে আছে এমন কোনো দলিল বা কাগজপত্র উপস্থাপন করতে কমিশন তলব করতে পারবে। এছাড়া অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ ও তা রেকর্ড করতে পারবে।

শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার বা সরকারের অধীন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার কাছে প্রতিবেদন বা তথ্য চাইতে পারবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না পেলে কমিশন নিজ উদ্যোগে অনুসন্ধান শুরু করতে পারবে। শিশু অধিকার রক্ষায় যে কোনো সময় সরকার, সরকারের কোনো দপ্তর বা কর্মকর্তা বা কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করার বিশেষ ক্ষমতা ও এখতিয়ার থাকবে। এই আইনের বিধান লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

শিশু অধিকার বা শিশু স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রয়োজনে কমিশনের চেয়ারম্যান, কমিশনার, সচিব বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা প্রয়োজনে বাড়ি, ঘর, দোকান, প্রতিষ্ঠান, কারখানা, গুদাম ইত্যাদিসহ যে কোনো স্থানে, এমনকি যে কোনো আইনত সংরক্ষিত স্থানে সশরীরে প্রবেশ, পরিদর্শন, অনুসন্ধান এবং তথ্য-উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে কেউ অসহযোগিতা করলে কিংবা বাধা দিলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কমিশনের দপ্তরে শিশুবিষয়ক তথ্য ও শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং টেলিফোন, ফ্যাক্স, মোবাইল ফোন, ই-মেইল ইত্যাদিসহ তথ্য ও অভিযোগ গ্রহণের সার্বক্ষণিক (দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা) ব্যবস্থা থাকবে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন তহবিল গঠিত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads