• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
সময় বাড়লেও শতভাগ কাজ হয় না

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সময় বাড়লেও শতভাগ কাজ হয় না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৯

বর্ষাপ্রধান দেশ হিসেবে আমাদের দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই বন্যার দেখা মেলে। চলতি বছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং উত্তরাঞ্চলে এবারের বন্যার খারাপ পরিস্থিতি ইদানীংকালের অন্য অনেক বছরের মাত্রাকেও ছাপিয়ে গেছে। বন্যায় এসব মানুষ অনাহার, অর্ধাহার, বিনাচিকিৎসা ও ফসলহানির শিকার। করুণ মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এখনো বন্যা পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণ পায়নি উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মানুষগুলো। সেই সঙ্গে স্বল্প আয়ের এসব মানুষ মোকাবিলা করছে বন্যা-উত্তর রোগবালাইসহ নানা প্রতিকূলতার।

এসব অঞ্চল প্রায় প্রতি বছরই বন্যা আক্রান্ত হওয়ায় এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমাতে সরকার বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাস্তবায়িত এসব প্রকল্পের মধ্যে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) সিলেট বিভাগে একটি এবং রংপুর বিভাগে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প দুটির একটির কাজও শতভাগ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে!

জানা গেছে, ‘রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ এবং ‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধন)’ এই দুটো প্রকল্প গত জুনে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকরাই বলেন, প্রকল্প দুটোর কাজ শতভাগ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই দুই প্রকল্পের আওতায় যেসব এলাকায় কাজ হলো না, সেসব অঞ্চলের জনসাধারণকে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। কারণ, বঞ্চিত থাকা এলাকাগুলোয় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নদীর তীর সংরক্ষণে নতুন করে প্রকল্প নেওয়া কঠিন হবে। ফলে তাদেরকে দীর্ঘদিন বন্যা মোকাবিলা করে যেতে হবে এবং এতে প্রাণহানিসহ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।

রংপুর বিভাগের প্রকল্পটির পরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পে কিছু কিছু সমস্যা তো থাকেই। হয়তো কোনো কোনো কম্পোনেন্টের কাজ ইচ্ছা করলেও, সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও অসম্পূর্ণ থাকে। সবমিলিয়ে প্রকল্পটি মোটামুটিভাবে শেষ হয়ে গেছে।’

সিলেটের প্রকল্পের পরিচালক বিভাগটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ করে দিয়েছি। যা যা কাজ করার, সব শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পের সময়ও শেষ।’

শতভাগ কাজ শেষ করতে পেরেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোটামুটি করতে পেরেছি। টাকার হিসাবে প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখে আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি।’

 

রেগুলেটর স্থাপনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ‘বাধা’!

‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে। এরপর প্রকল্পের সময় এক বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। তারপরও কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপরও শতভাগ কাজ শেষ না করেই প্রকল্প সমাপ্ত করা হলো।

এই প্রকল্পের আওতায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশনের জন্য ১১টা রেগুলেটর বসানোর কথা ছিল। এসব রেগুলেটরের কাজ হচ্ছে ভেতরে পানি বেশি জমে গেলে রেগুলেটরের গেট খুলে দিলে পানি নদীতে চলে যাবে। আবার নদীর পানি বেশি বাড়লে গেট লাগিয়ে দিলে তা ভেতরে ঢুকতে পারবে না।

প্রকল্প পরিচালক সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নিজামুল হক ভূঁইয়ার অভিযোগ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার আসনের (সিলেট-৬) সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বাধার কারণে গোলাপগঞ্জে যে রেগুলেটরটি বসানোর কথা ছিল, তা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে নিজামুল হক ভূঁইয়ার বক্তব্য, ‘গোলাপগঞ্জের এমপি ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, উপজেলার চেয়ারম্যান এরা চায়নি।’ তার বক্তব্য, ‘সম্ভাব্যতা যাচাই করেই আমরা ১১টা রেগুলেটর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

রেগুলেটর ছাড়াও আরো বেশকিছু কাজ বাকি রেখেই এই প্রকল্প শেষ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৫৮৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। নিজামুল হক বলছেন, ‘টাকার হিসাবে প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখে আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। অনুমোদিত প্রায় ৫৮৭ কোটির মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকার কাজ করেছি।’

‘সবকিছু তো একটা প্রকল্পে হবে না। যেটা বাদ দিতে বলে, সেটা বাদ দিয়ে দিই,’ যোগ করেন এই প্রকল্প পরিচালক।

 

রংপুরে বন্যার প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা স্থানীয় কোন্দল

রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়ার কথা ছিল, এর মধ্যে অর্জন কিছুটা কম হয়েছে। কারণ যেখানে বাঁধ দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে নদীভাঙন এলাকার লোকজন বাড়িঘর করে রয়েছে। অবৈধ স্থাপনাগুলো আমাদেরকে চরম ডিসটার্ব করছে। যেখান থেকে মানুষজনকে সরাতে পারিনি।’

স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের কিছু কোন্দলও কাজকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলেও জানান হারুন-অর-রশীদ। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কিছু কোন্দল থাকে, স্থানীয় গ্রুপে গ্রুপে। নানান ধরনের সমস্যা ছিল। ক্লোজিং প্রতিবেদনে এসব বিস্তারিত নিয়ে আসব ডকুমেন্টসহ আমি।’

 

বাঁধে সুফল রংপুরবাসীর

রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের এপ্রিলে শুরু হয়। যথাসময়ে কাজ শেষ না করতে পারায় এর প্রথম সংশোধনী আনা হয়, যা গত জুনে শেষ করা হলো পুরো কাজ শেষ না করেই। তবে যেটুকু কাজ করেছে, সেটুকুর সুফল ওই অঞ্চলবাসী পেয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘এই বাঁধের সুফল রংপুরবাসী ভোগ করেছে। চলমান বন্যায় এটা কোথাও ভাঙেনি। বন্যার পানি এবার সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছিল, তার থেকে ওপরে ছিল এই বাঁধ। জায়গাভেদে বন্যার পানি বাঁধ থেকে কোনো জায়গায় চার ফুট নিচে, কোনো জায়গায় পাঁচ ফুট নিচে ছিল। তিস্তার পানির স্তর ২০১৭ সালে দু-একটা জায়গায় ওভারটেক করছিল। কিন্তু এবার ওভারটেক করতে পারেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গঙ্গাচড়া উপজেলা, কাউনিয়া উপজেলা এর উপকার ভোগ করছে। রংপুর সদরও এটার উপকার ভোগ করছে বলা যায়। কারণ এটার বাঁধ ভাঙলে বা না থাকলে বন্যার প্রভাব রংপুর সদরের দিকে চলে আসত অন্যান্য জায়গার মতো।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৫ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ১৬৮ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর বাস্তব অগ্রগতি হচ্ছে ৯৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads