• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
বেড়েছে মসলা ও তেলের দাম

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বেড়েছে মসলা ও তেলের দাম

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৯

ঈদুল আজহাতে বাড়ে মসলা ও তেলের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে বেড়ে গেছে পণ্যগুলোর দাম। গরম মসলার মধ্যে এ বছর এলাচ ও দারুচিনির দাম বেড়েছে বেশি। পাশাপাশি অন্যান্য মসলাও বাড়তি চাহিদার কারণে এক থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের বাজার ধরতে তারা যখন পাইকারি বাজার থেকে কেনাকাটা করেছেন, তখনই এসব মসলার দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, ঈদের এ সময় গরম মসলার মৌসুম শেষদিকে থাকে। এ কারণে কিছু মসলার বিশ্ববাজারে দাম এখন চড়া। পাশাপাশি বন্যায় বন্দরে কনটেইনার জটের কারণে সময়মতো আমদানি করা মসলা হাতে আসছে না। এমন অবস্থায় কোরবানির কারণে চাহিদাও বেশি।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ফারুক আহমেদ বলেন, বাজারে এলাচি ও দারচিনির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তবে বেশ স্থিতিশীল রয়েছে জিরা, গোলমরিচ, জয়ফল ও লবঙ্গের দাম। তিনি বলেন, সরবরাহ ও চাহিদার অজুহাতে খুচরা বিক্রেতারা যেসব মসলার দাম বাড়েনি, সেসবও বেশি দামে বিক্রি করছেন। যার দায় পড়ছে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে।

দেশে মসলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে ঈদুল আজহায়। এ সময় মাংস রান্নার জন্য বাড়তি পরিমাণে মসলা কেনেন ক্রেতারা। এসব মসলাকে দেশে গরম মসলা বলা হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগই দেশে উৎপাদিত হয় না, ফলে চাহিদার প্রায় বড় অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে মেটানো হয়।

গতকাল সরেজমিন কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর কোরবানির ঈদের আগে প্রতি কেজি এলাচ খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। তবে এখন সে সমলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ কোনো মানুষ যদি ১০০ গ্রামও কিনতে চায় তাকে গুনতে হবে ৩২০ টাকার। এ ছাড়া দারচিনি ১০০ গ্রাম ৪৫ টাকা চাওয়া হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ এ মসলাটি ৩৫০ থেকে বেড়ে এখন ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশর (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে বেড়েছে অধিকাংশ মসলার দাম। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এলাচ ৪৫ শতাংশ ও দারচিনি ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে এ বছর স্থিতিশীল রয়েছে জিরার দাম। ভারত থেকে আমদানি করা জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া লবঙ্গ ১১০০-১২০০ টাকা, তেজপাতা ১৬০-২২০ টাকা, কিশমিশ বাজারভেদে ৪২০-৫০০ টাকায়, কালো এলাচ ১৪০০-১৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

তবে খুচরায় কিনতে গেলে অধিকাংশ দোকানে এ দরে মসলা মিলছে না। কেন বাড়তি দাম এমন জানতে চাইলে খিলগাঁও তালতলা বাজারের বিক্রেতা নিয়াজ উদ্দিন বলেন, খুচরায় মসলাগুলো কম কম করে বিক্রি করতে হয়। অনেক দিন ফেলে রাখতে হয়। ঈদ গেলেই এগুলোর এত বিক্রি হবে না। এ জন্য একটু বাড়তি দাম নেওয়া হয়।

খুচরা বাজারগুলোর তুলনায় আরো বেশি দামে মসলা বিক্রি হচ্ছে সুপারশপগুলোতে। রাজধানীর কয়েকটি সুপারশপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ ও ১০০ গ্রাম করে অধিকাংশ মসলার প্যাকেট করা রয়েছে। ১০০ গ্রাম দারচিনির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায় অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭৫০ টাকা। একইভাবে ২০০ গ্রাম ওজনের কিশমিশের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায় অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭৫০ টাকা। যা খুচরার তুলনায় দেড়গুণ। একইভাবে ৫০ গ্রাম ওজনের এলাচের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ টাকায়। এই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩৫৬০ টাকা। যা কিনা বাড়তি দামের চেয়েও বেশি।

অন্যদিকে চাহিদার কারণে বেড়ে গেছে পাম ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও। যদিও বাজারে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ঈদের কারণে নয়, বাজেটে করারোপের কারণে বাজারে বাড়ছে বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম। নতুন অর্থবছর শুরুর পরপরই বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিডেট তাদের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা বাড়িয়েছে। বাকিরা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) কাছে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাজারে সিটি, মেঘনা, টি কে ও এস আলম গ্রুপের মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তেলের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার প্রভাবে খোলা পাম তেলেও দামও বেড়েছে। এখন প্রতি লিটার পাম তেলের দাম পড়ছে ৮২ থেকে ৮৪ টাকা, যা আগে ৭৯ থেকে ৮১ টাকায় মিলত।

অন্যদিকে বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের একটি বোতলের নতুন সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৫৩০ টাকা, যা আগের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি। তীরের পাঁচ লিটারের বোতলের এমআরপি এখনো ৫০০ টাকা। অন্যদিকে এক লিটারের দাম ১০২ টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads