• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
অবশেষে আবেদন প্রত্যাহার করলেন রুমিন ফারহানা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

অবশেষে আবেদন প্রত্যাহার করলেন রুমিন ফারহানা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০১৯

শেষ পর্যন্ত প্লট চেয়ে করা আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। গতকাল গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে প্লটের আবেদন প্রত্যাহারসংক্রান্ত চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সংসদের প্যাডে তিনি গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশের খবরে “সংসদ ‘অবৈধ’ বললেও প্লট চান রুমিন ফারহানা” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে। আর এতে চাপে পড়তে হয় ব্যক্তিগতভাবে রুমিন ফারহানাকে। দলের উচ্চপর্যায়ে ও তৃণমূলে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে শুরু করে।

গতকাল পাঠানো ওই চিঠিতে এই নারী সংসদ সদস্য বলেছেন, আমার দল বিএনপির প্রাণ তৃণমূলের নেতাকর্মী  ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত ৩ আগস্ট সংসদের দাপ্তরিক ফরম্যাটে করা আমার পূর্বাচলের প্লটের আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

এদিকে রুমিন ফারহানার এই চিঠিতে সরকার, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

সরকারদলীয় নেতারা বলছেন, তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনায় থাকেন, সরকার ও বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলে অপপ্রচার চালান। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আবার সরকারের কাছে প্লট চেয়ে আবেদন করেন।

অন্যদিকে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার মন্তব্য, অনেক বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা বিএনপির মনোনয়ন দিয়ে রুমিন ফারহানাকে সংসদে পাঠিয়েছি। বিএনপি সংসদের বাইরে কথা বলতে পারছে না। কোনো সমাবেশ করতে পারছে না। তাই সংসদে যাতে দেশ ও দলের কথা বলতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। দুই মাস পেরিয়েছে মাত্র তিনি শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন। কিন্তু সংসদে যোগ দিতে না দিতেই ব্যক্তিগত প্লট চেয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি। এটা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

প্লট পেতে আবেদন করেছেন কি না, জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এটা একদম নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আমি কেবল চিঠি দিয়ে রাখলাম। পেলে পেলাম। না পেলেও কোনো দুঃখ নেই। সব সংসদ সদস্য আবেদন দিচ্ছেন। তারা সবাই বলেছেন, দিয়ে রাখো।

৩ আগস্ট নিজের সই ও সিল দেওয়া চিঠিতে মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জানানো যাচ্ছে যে, ঢাকাস্থ পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় দশ কাঠা প্লট দরকার আমার। ঢাকা শহরে আমার কোনো জায়গা, ফ্ল্যাট কিংবা জমি নেই। ওকালতি ছাড়া আমার অন্য কোনো ব্যবসা নেই। আমার নামে দশ কাঠার প্লট বরাদ্দের জন্য সুব্যবস্থা করে দিতে আপনার মর্জি হয়। আমার নামে দশ কাঠা প্লট বরাদ্দ করলে আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকব। 

রুমিন ফারহানা গত কয়েক বছর ধরেই বিএনপির কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয়। পাশাপাশি টেলিভিশনের বিভিন্ন টক শোতেও তাকে নিয়মিত দেখা যায়। গত ৯ জুন তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। জাতীয় সংসদের বৈঠকে যোগ দিয়ে প্রথম দিনেই উত্তাপ ছড়িয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এই সাংসদ রুমিন ফারহানা। একাদশ সংসদ নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেল ও তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার সরকারি দলের সদস্যদের প্রতিবাদ, চিৎকার চেঁচামেচির মুখে পড়েন রুমিন। পরে সরকারি দলের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রুমিনের বক্তব্যের কিছু অংশ কার্যবিবরণী থেকে বাদ (এক্সপাঞ্জ) দেওয়া হয়।

প্লট প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা এর আগে বলেন, প্লট পেতে কোনো তদবির করিনি। আর আমি দায়িত্ব থেকে সরে আসিনি। আমি সংসদ সদস্য হিসেবে অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছি। তবে আমি ছোটটি নিয়েছি। সংসদ সদস্য হিসেবে কিছু সুবিধা এমনিতেই চলে আসে। আমার বাবার কিছু নেই। কোনো জায়গা নেই। আমার বাবা সারা জীবন শ্বশুরবাড়ি ছিলেন। বাবার যে অবস্থান ছিল, উনি একরের পর একর ঢাকা শহরে জায়গার মালিক হতে পারতেন। তাই এইটুকু যদি না নিই তবে আমরা খাব কী। আমি আবেদন করার হকদার। এটি সরকারের প্লট নয়। এটি রাষ্ট্রীয়। জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদকে ‘অবৈধ’ বলেন। এর বিরুদ্ধে স্পিকারের রুলিং চান জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads