• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ কার্যকর হওয়া উদ্বেগজনক’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০১৯

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের পূর্বানুমতির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ কার্যকরের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এটি জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের মূল চেতনা ও অভীষ্টের পরিপন্থি বলেও মনে করে সংস্থাটি।

গতকাল সোমবার টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষ, জনবান্ধব, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন নিশ্চিত করতে আইনের চোখে ‘সকল নাগরিক সমান’। বিজ্ঞপ্তিতে এ অধিকারের সাংবিধানিক বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ১ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হওয়ার যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সাধারণ জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানাবলি রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থি। আইনটি এভাবে কার্যকর হলে বর্তমান সরকারের আমলেই প্রণীত ও বাস্তবায়নরত ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’-এর সঙ্গেও এটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হবে। এছাড়া ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের আগে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণের বিধান ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫৪ ধারার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, দুর্নীতিবাজ ও অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে’-মর্মে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তার প্রতি আস্থা রেখে টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জোরালোভাবে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা এবং সরকারের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান জনমনে যে প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে, এই আইনটি কার্যকর হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। এছাড়া বিতর্কিত বিধানটি দুদকের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করে সম্পূর্ণ অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।

উল্লেখিত বিধানটি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, স্বচ্ছতা, উন্নততর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিতের পরিপন্থি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকারি চাকরি আইন নামটিই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ আইনটির নাম হওয়া উচিত ‘জনপ্রশাসন আইন’। তাই আমরা পুনরায় আইনটির নাম সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া গ্রেপ্তারের আগে সরকারের অনুমতি গ্রহণের বিধানটি বাস্তবে সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধের পরিবর্তে আইনের ছত্রচ্ছায়ায় এ ধরনের অপরাধের সুরক্ষা ও এর ব্যাপকতা বাড়ার ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাবে। এজন্য তড়িঘড়ি করে আইনটি কার্যকর করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে আইনটি পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সব অংশীজনের মতামত গ্রহণের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ বলা হয়, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এ উল্লেখিত বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধানাবলি রেখে ২১ অক্টোবর ২০১৮ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হওয়ার প্রেক্ষিতে টিআইবি ২২ অক্টোবর ২০১৮ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনটি পাস না করার জন্য জাতীয় সংসদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিল।

যার ধারাবাহিকতায় ২৩ জুন ২০১৯ ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার: নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘সরকারি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং উল্লেখিত ‘সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতি রাখার’ বিধানটি বাতিল করার জোর দাবি জানিয়েছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads