• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নারীর নিরাপদ অভিবাসন এখনো অধরা

ফাইল ছবি

জাতীয়

আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস আজ

নারীর নিরাপদ অভিবাসন এখনো অধরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

মুক্তিযুদ্ধের পরই বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেন। এজন্য তিনি বিশেষ কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে প্রথম বিদেশে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। তারপর প্রায় ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে তা রেকর্ড সংখ্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে শৃঙ্খলা আনা যায়নি অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে। বিশেষ করে নারীর নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস। 

সরকারি-বেসরকারি হিসাব বলছে, জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দেশ। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী কর্মক্ষম যুবক। ২০১৬ সাল থেকে দেশ এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট পেয়ে আসছে। তাই বাংলাদেশ চাইলে সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিদেশি কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে। প্রতি বছর যে ২০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে আসছেন তাদের অর্ধেকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায় অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।   

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব বলছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৩টি দেশে বাংলাদেশি নাগরিকরা কাজ করছেন। স্বাধীনতার পর থেকে মোট সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ৩১৮ জন। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত (এগারো মাসে) প্রবাসে গেছেন ৬ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন বাংলাদেশি। যারা ১১ মাসে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। এ অর্থের পরিমাণ চলতি বাজেটের প্রায় তিনগুণ। সরকারি হিসাব বলছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-তে প্রবাসী আয়ের অবদান সাত শতাংশ। অর্জিত অর্থ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নয়গুণ। বাংলাদেশ এক বছরে যে বৈদেশিক সহায়তা পেয়ে থাকে তার সাতগুণের সমান প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পেছনে অবদান রয়েছে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থের। জানা গেছে, ২০১৭ সালে বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যান ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন।

পরিসংখ্যান বলছে, নারী অভিবাসন বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। বিগত ৯ বছরে বিদেশে নারীকর্মী গমনের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬৭ জন। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশে গেছেন এক লাখ ১৩ হাজার ৯০৭ জন নারী। বিশাল এই সংখ্যা নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করছে। তবে সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে বিপুলসংখ্যক নারী নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। অনেকে ফিরেছেন লাশ হয়ে। নির্যাতিত হয়ে যারা দেশে ফিরেছেন তারা লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন নিয়োগকর্তা দ্বারা নির্যাতনের।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস, ২০১৯’ উদ্যাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার অভিবাসন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ সম্মান দুই-ই-মেলে।’ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজকের আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানমালায় থাকবে অভিবাসী মেলা, সিআইপি অ্যাওয়ার্ড, বীমা সুবিধা উদ্বোধন এবং চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা।     

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৩টি দেশে বাংলাদেশের এক কোটির অধিক মানুষ অভিবাসী হিসেবে কর্মরত রয়েছে। অভিবাসীকর্মীরা দেশের গর্ব। বিপুলসংখ্যক অভিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তারাও গর্বিত অংশীদার। তাদের অবদানের কথা আমি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অপরিসীম গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার এ খাতকে ‘থার্ড সেক্টর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে ১ হাজার জন যুব ও যুব মহিলাকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন দেশে আরো প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানো ও তাদের শ্রমলব্ধ আয়ের লাভজনক বিনিয়োগ এবং বিদেশে গমনকালে সহজশর্তে ঋণপ্রাপ্তি ও বিদেশ থেকে ফেরার পর স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান সুনিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বৈধ চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের কল্যাণে বিদেশ থেকেই জন্মনিবন্ধন করা, ভোটার তালিকাভুক্ত করা, ১০ বছরমেয়াদি ই-পাসপোর্ট প্রদান ইত্যাদি কাজ শুরু হয়েছে। প্রবাসীদের কল্যাণার্থে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাদের জন্য বীমা স্কিম চালুর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অভিবাসন ব্যয় হ্রাস করতে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সেন্ট্রাল ডেটাবেজ তৈরি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সার্বিক অটোমেশন এবং বিভিন্ন ধরনের ডিজিটালাইজড সেবা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এদিকে, জনশক্তি রপ্তানি চলমান থাকলেও আসেনি শৃঙ্খলা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবির)-এর তথ্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ পুরুষ কর্মী দুর্নীতির শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনের  তথ্য অনুযায়ী, ৫২ শতাংশেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী দালালের মাধ্যমে বিদেশ যায়। তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ব্যয়ের তিন থেকে চারগুণ টাকা আদায় করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে শ্রমিক পাঠানো। বিশেষ করে বর্তমানে প্রতারিত হচ্ছেন নারীরা।

মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানেই দেখা যায়, পুরনো মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বাজার এখনো ভরসা, ইউরোপে জনশক্তি রপ্তানি বরং কমেছে। ইউরোপ এখন ইরাক-সিরিয়া-লেবাননের শরণার্থীর চাপ সামলাতে ব্যস্ততার কারণে সেখানকার শ্রমবাজারের প্রবেশপথও সরু হয়ে গেছে। ফলে নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে আশার কথা শোনালেও অগ্রগতি দেখা যায়নি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads