• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
অসময়ে ইলিশের আমদানিতে সরগরম চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

অসময়ে ইলিশের আমদানিতে সরগরম চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ

  • মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০২০

বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও অসময়ে ইলিশের আমদানি শুরু হয়েছে চাঁদপুরে প্রধান মৎস্য আড়ৎ বড় স্টেশন মাছঘাটে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মণ বড় সাইজের ইলিশ আমদানি হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদীতে জেলেদের আহরিত ছোট সাইজের ইলিশতো নিয়মিতভাবে ঘাট বিক্রি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের বড় সাইজের ইলিশের আমদানি হওয়ার কারণে সরগরম হয়ে উঠেছে মাছঘাট। চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে পাইকারি, আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও শ্রমিকদের মধ্যে। গত ১০-১২ বছরের মধ্যেও মৌসুমের এই সময়ে বড় সাইজের ইলিশ আমদানি দেখেননি বলে জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে বড় দু’টি ট্রলারে করে দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, দৌলতখাঁ, চরফ্যাশন, শ্যামরাজ থেকে বড় সাইজের ইলিশ নিয়ে এসেছে ১০-১২ জন ব্যবসায়ী। এসব ইলিশ টুকরিতে করে আড়তে উঠাচ্ছেন শ্রমিকরা। বিক্রির জন্য আড়ৎগুলোর সামনে বড় বড় স্তুপ করে সাজানো হচ্ছে। বাছাই করা বড় ছোট ইলিশের স্তুপ আবার মুহুর্তেই হাকডাক দিয়ে দাম হাকিয়ে বিক্রি করছেড় আড়ৎদাররা।

ঘাটের ভাই ভাই মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বেপারী বলেন, গত দুই সপ্তাহে যেসব ইলিশ আমদানি হচ্ছে এসব ইলিশের অধিকাংশ সাইজ ১ কেজি। আজকের বাজারে ১ কেজি ইলিশ প্রতি মণ ৩০-৩২ হাজার টাকা, ১ কেজি ৪শ’ গ্রাম এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ৩৬-৪০ হাজার টাকা, ৫শ’ ৬শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ২৪-২৫ হাজার টাকা, ২শ’ থেকে ৩শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ১০-১২ হাজার টাকা। ছোট সাইজের ইলিশগুলো বেশীরভাগ চাঁদপুরের স্থানীয় জেলেরা পদ্ম-মেঘনা নদী থেকে আহরণ করে। এর মধ্যে জাটকা ইলিশ থাকে।

মাছঘাটের শ্রমিক মো. আমিনুর শেখ বলেন, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ইলিশের ট্রলার রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত আসতে থাকে। রাতে আসা ইলিশ আড়তে নামালেও বিক্রি শুরু হয় সকাল ১০-১১টার পরে। গত ৩ মাস অবসর সময় কাটালেও এখন শ্রমিকরা মাছ উঠানো, প্যাকিং করা, বরফ দেওয়া এবং রপ্তানি করা গাড়ীতে উঠানোর কাজে ব্যস্ত।

ভোলা জেলার চরফ্যাশন খাজুরগাইছ্যা এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. আব্বাস বলেন, বুধবার বিকাল ৫টায় তাদের নিজস্ব মাছের আড়ৎ থেকে বেশী মূল্যে বিক্রির জন্য লঞ্চে ১০ মণ ইলিশ নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে এসেছেন আরো ১০-১২ জন ব্যবসায়ী। এই আড়তে বিক্রি করে আবার নিজ এলাকায় ফিরবেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক হাজী সবে বরাত বলেন, গত দুই সপ্তাহ দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশের আমদানি বেড়েছে। তবে অসময়ের এই ইলিশ মৌসুমে আহরণকৃত ইলিশের মত স্বাদ নেই। সাধারণত এই সময় বড় সাইজের ইলিশ দেখা যায় না। গত প্রায় ১০ বছর পূর্বে একবার এই সময়ে ইলিশের আমদানি হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে বড় সাইজের ইলিশ এই সময়ে আমদানি হয় না। ধারণা করা হচ্ছে সাগরের মধ্যে অনেক সময় ভূকম্পন হয়। যে কারণে ইলিশ উজানের দিকে উঠে আসে।

তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর বড় সাইজের ইলিশের আমদানি কম। এই ঘাটের ৬-৭ জন ব্যবসায়ী দক্ষিঞ্চালের ইলিশ আমদানি করেন। এসব ইলিশ চাঁদপুরের স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। এছাড়াও কুমিল্লা, ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, পাবনা, ময়মনসিংহ ও সিলেটে রপ্তানি করা হয়।

ভিন্নমত পোষণ করেছেন চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান তিনি মুঠোফোনে জানান, এক সময় এ মৌসুমেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। মাঝের সময়ে জেলেরা বেপরোয়াভাবে জাটকা ইলিশ নিধন করায় ১০/১২ বছর শীত মৌসুমে ইলিশ পাওয়া যায়নি। এ বছর সঠিকভাবে ইলিশ অভিযানে মা ইলিশ নিধন বন্ধ করায় এর সুফল পাচ্ছে জেলেরা।

তিনি আরো বলেন, নদী ও সাগরে ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে এখন ইলিশ মিলছে। এ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইলিশ সংরক্ষণের ধারাবাহিকতা বজায়ে থাকলে ভবিষ্যতে সারা বছরই নদীতে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে দাবি করেন এই ইলিশ গবেষক।

ইলিশের উৎপাদন বেশি হওয়ায় সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন বলে জানান তিনি।

গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এবার শীতেও ইলিশের আমদানি থাকায় উৎপাদনের সেই ধারা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads