• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের জন্মদিনে কান্নার রোল

ফাইল ছবি

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের জন্মদিনে কান্নার রোল

  • জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের জন্মদিন ছিলো আজ বুধবার। ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন নেতা তাকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের জন্মদিনে তার বাড়িতে কান্নার রোল। বেঁচে থাকলে ২২ বছর পূর্ণ হতো। বেঁচে থাকলে হয়তো অন্য কথা ছিল। বেঁচে না থাকায় আজ অনেকেটা নীরবে-নিভৃতেই চলে যাচ্ছে নিহত আবরার ফাহাদের জন্মদিন। অবশ্য আবরার বেঁচে থাকতেও ঘটা করে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ ছিল না পরিবারটিতে।

ছেলে ঢাকায় পড়ালেখা করার কারণে এ দিনে বাবা বরকত উল্লাহ ও মা রোকেয়া খাতুন আবরারকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন। বলতেন বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ভালো-মন্দ খেয়ে নয়ার জন্য। ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ স্বজনরাও তাকে শুভেচ্ছা জানাতেন। কাছে না থাকলেও সন্তানের জন্মদিন প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছেই অন্য রকম এক অনুভূতির বলে জানান আবরারের মা স্কুলশিক্ষক রোকেয়া খাতুন।

সকাল থেকেই আজ আবরারের বাবা-মা, ভাইসহ স্বজনদের মনটা বিষন্ন। পারিবারিকভাবে আজ তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বাদ আসর কুষ্টিয়া শহরের বাড়ির পাশের আল হেরা জামে মসজিদে নিহত আবরার ফাহাদের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বিষন্ন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন জানান, বড় ছেলে আবরার ফাহাদ যখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, তখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত এ পরিবারে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে সব আশা-আকাঙ্খা শেষ হয়ে গেছে। ওই রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। সারাদেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল ওই ঘটনা।

রোকেয়া খাতুন বলেন, আজ ১২ ফেব্রুয়ারি আমার আব্বুর (আবরার ফাহাদের) জন্মদিন। ১৯৯৮ সালে যেদিন ওর জন্ম হলো, সেদিন ছিল বৃস্পতিবার। বাংলা সনে মাঘ মাস। এক সপ্তাহ ধরে শীতের কুয়াশায় মোড়ানো ছিল চারপাশ। আর আবরার ফাইয়াজ যেদিন জন্ম নেয়, সেদিন সূর্যটা শহরে আলো ছড়িয়েছিল।’

নিজের জন্মের সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছিলেন রোকেয়া খাতুন। তাই ছেলের জন্মের পর থেকেই আব্বু বলে ডাকতেন। আবরার ফাহাদ নামটা স্বামী বরকত উল্লাহর দেয়া। জন্মের পর মাত্র একবার ঘটা করে বাড়িতে আবরারের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সে, যে বছর আবরারকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, সেই বছর। এখনও মা যত্ন করে রেখেছেন পুরোনো ছবির অ্যালবাম।

জন্মদিনের সকালে ছেলেকে ফোন করে ভালো কিছু খেয়ে নিতে বলতেন রোকেয়া খাতুন। এবার কাউকে কিছু বলার নেই। পাশেই বসে ছিলেন ছোট ছেলে আবরার ফাইয়াজ।

শেষ চার বছর ঢাকাতে থাকতেন আবরার। পড়াশোনার জন্য জন্মদিনগুলো ঢাকাতেই কাটাতে হতো। সেসব দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠেই রোকেয়া খাতুন ছেলেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। ভালো-মন্দ খেতে বলতেন। আর এবার ছেলের জন্মদিনে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না, কেবল কষ্টই বাড়ছে। কান্না চাপছেন।

তিনি বলেন, এই দুটো দিন (আবরারের জন্ম ও মৃত্যুর দিন) তার জন্য এখন কেবলই কান্নার। এছাড়া কিচ্ছু করার নেই। কাউকে বলার নেই, আব্বু বাইরে গিয়ে ভালো কিছু কিনে খেয়ে নিয়।

সম্প্রতি ফোন করে এক ব্যক্তি ফাহাদ হত্যা মামলার আসামিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন এমন অভিযোগ করে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ছেলের হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার প্রশ্নই ওঠে না।

ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ভাইয়ের জন্মদিনে ঘটা করে অনুষ্ঠান হতো না, কিন্তু সেটা পরিবারের জন্য একটা আনন্দের দিন ছিল। এখন দিনটি কেবলই কষ্টের।

বাড়ির বাইরে থাকায় মুঠোফোনে কথা হয় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবরার এবং তাদেরকে নিয়ে কিছু লোক নানা গুজব ছড়াচ্ছেন। এসব উপেক্ষা করে তারা প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন ন্যায়বিচারের।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের একদল উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads