• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
করোনায় বাড়ছে ভীতি

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

করোনায় বাড়ছে ভীতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ মার্চ ২০২০

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার দেশে প্রথম একজন মারা গেছেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাঁপছে গোটা দেশ। এই ভাইরাসে গতকাল পর্যন্ত ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা শঙ্কা।

অফিস-আদালত কিংবা অন্য গন্তব্যে পৌঁছতে গণপরিবহনে যাতায়াত করেছেন, তাদের প্রায় সবাকেই সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীদের একটি বড় অংশ মুখে মাস্ক পরে বাস-মিনিবাসে চড়েছেন। যাদের মুখে মাস্ক ছিল না, তারাও বাসে অবস্থানরত পুরো সময়টুকু রুমাল কিংবা সাধারণ কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা অনুযায়ী, গণপরিবহনের অধিকাংশ যাত্রী হাতল না ধরেই বাসে চড়েছেন। বাসে সামান্য সর্দিজ্বরে আক্রান্ত কোনো যাত্রী দেখলে অনেক সে বাস থেকে নেমে ভিন্ন বাস ধরেছেন। করোনা ভীতি-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে কারো যেন রেহাই নেই। উচ্চবিত্তের ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে মহল্লার টং দোকানে চায়ের কাপে ঝড় তুলে চলেছে করোনা নিয়ে আলোচনা। অফিসের কাজের ফাঁকেও এ নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সবাই। মুঠোফোনে বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার সময় বা গণপরিবহনে চলার কালে একে-অপরের সঙ্গে আলাপ করছেন করোনা নিয়েই। জানাচ্ছেন ভীতি আর শঙ্কার কথা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে দারুস সালামগামী যাত্রীবাহী একটি বাসেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক কাওসার হোসেন তার পাশের সিটের যাত্রীকে বলেন, ভাই, এই যে আমরা বাসে যাচ্ছি, এটাও তো নিরাপদ না। গণপরিবহন তো নিরাপদ না। কে জানে করোনা সংক্রমণে থাকা কেউ এই বাসে উঠেছে বা উঠেছিল কি না?

উত্তরে পাশের যাত্রী বলে ওঠেন, আমরা তো মধ্যবিত্ত ভাই। আমাদের তো নিজস্ব গাড়ি কেনার সামর্থ্য নাই। জীবিকার তাগিদে বের হতে হয়। সরকার তো আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করছে না। আবার এসব গণপরিবহনে প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও নিশ্চিত করছে না। যা আছে তার মাঝেই চলতে হবে। আমি তো এখন শুধু বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে সোজা বাসায় যাব ভাবতেছি। এর কোনো বিকল্প নাই। কোথাও আমরা নিরাপদ নই।

পঞ্চাষোর্ধ্ব আরেক যাত্রী সরকারের নীতিগত ধীরতার সমালোচনা করে বলেন, এতদিন সরকার কিছু করল না। বিদেশ থেকে দেদার মানুষ আসতে দিচ্ছে, তাদের আলাদা করে রাখেনি। যে যেমন পারছে, ঘুরছে-ফিরছে। স্কুল বন্ধ করল সেদিন। পৃথিবীর সব দেশ জরুরি অবস্থা জারি করে শুনতেছি। আমাদের সরকার এখনো এর ভয়াবহতা বুঝতে পারতেছে না। আল্লাহই জানে কী যে আছে। আমার ছেলে বলতেছিল যে, আর কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে আমাদের কী অবস্থা হবে।

দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কেউ কেউ সরাসরি সদ্য বিদেশফেরত প্রবাসীদের দায়ী করছেন। এর ওপর সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা এসব ব্যক্তি র মাঝে কোয়ারেন্টাইনে থাকার প্রবণতা না থাকায় অনেকের উদ্বেগ আরো বেড়ে গেছে।

স্ত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় আসা পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী বাবু সিদ্দিকী বলেন, সেদিনও বাড়িতে (পটুয়াখালী) দেখে আসলাম, এলাকায় ইতালি থেকে একজন আসছে। আসার পর থেকেই সে তো এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ তো নিজে দেখলাম। আর পত্রপত্রিকা, টিভিতে তো প্রবাসীদের আরো অসচেতন আচরণের খবর দেখি। এমন হলে তো আমরা সবাই ঝুঁকিতে আছি।   

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ভয়াবহ এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে দেশের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তা কতটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে তা নিয়েও উদ্বিগ্ন সবাই। পাশাপাশি এ রোগের ভয়াবহ বিস্তার ঘটলে উন্নয়নশীল এ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে তা কতটা আঘাত হানবে এবং মন্দা সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা আদৌও সম্ভব হবে কি না তা এখন সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনা মোকাবেলায় দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই তাদের কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। টেলিকম ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুলনামূলকভাবে সবার আগে। দেশের কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যমও কর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুল-কলেজসহ সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজধানীর অফিস পাড়ার অলিগলি, সেসবে থাকা দোকানপাট কিংবা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মতো জায়গাগুলোও গতকাল ফাঁকা দেখা যায়। পথঘাট, বিশেষ করে বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা। এরই মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পতেঙ্গা বিচ, সেন্টমার্টিনসহ দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

অনেকেই আবার করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে এমন আশঙ্কায় বাসাবাড়িতে মজুদ করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার, মুদি দোকান ও সুপার শপগুলোতে গিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে পণ্য কিনতে দেখা যায় গ্রাহকদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads