বিশ্বজুড়ে ভয়াল আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে’ রাখা হয়। দেশেও সন্দেভাজনদের ওই ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করেছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে তাদের এসব আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। তবে এসব আইসোলেশন ওয়ার্ড আসলে কতটা নিরাপদ ও মানসম্মত হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
করোনা প্রতিরোধে ও মানুষের জীবন রক্ষায় ‘আদর্শ আইসোলেশন ওয়ার্ড’ তৈরি, অর্থাৎ সেগুলোকে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত করতে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন রাজধানীর ল্যাব-এইড বিশেষায়িত হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ভাস্কুলার সার্জন ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া।
দেশের প্রখ্যাত এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রস্তাবনায় আছে, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলোর মেঝে, দেয়াল ও ছাদ প্রথমে জীবাণুমুক্ত করা, ভেতরে নিরাপদে বায়ু চলাচলের ফিল্টার করা ভেন্টিলেশন রাখা, বিদ্যুৎ ও নিরাপাদ পানির সরবরাহ; শয্যা, চাদর, বালিশ, নেট, পাখা ও আলোর সরবরাহের ব্যবস্থা; ওয়াশরুম ও দরকারি উপকরণ রাখা এবং পর্যাপ্ত বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা হিসেবে সাইড ট্রলিসহ ডেস্ক রাখার ব্যবস্থা করা।’ এছাড়া প্রতিটি স্তরে স্যানিটাইজেশন নিশ্চিত করাসহ হার্ডবোর্ড বা পর্দার বিভাজন দ্বারা কক্ষগুলো আলাদা করা উচিত বলেও তিনি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেন।
ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল থাকা উচিত। দক্ষ ও অনুপ্রাণিত নার্স ও সহায়কদের নিয়োজিত করা উচিত। পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে প্রেষণে চিকিৎসকদের সেখানে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরাও পরামর্শ দেওয়া ও পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্য সেখানে থাকতে হবে। কর্মরত প্রতিটি কর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) থাকতে হবে।’
বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া আরো বলেন, ‘পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক দায়িত্ববোধ নিয়ে রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব রোগীর করোনা পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষায় পজিটিভ হলে চিকিৎসক ও নার্সসহ সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। পজিটিভ রোগী (পরীক্ষায় কোভিড-১৯ রোগ নিশ্চিত হলে) দ্রুত চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে সাকার মেশিন, নেবুলাইজার, ব্রোঙ্কোডিলেটর, চতুর্থ অ্যান্টিবায়োটিক, আয়নোট্রপস, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ এবং রেনাল ড্রাগগুলোর সেখানে সরবরাহ থাকা উচিত। নিরাপদ পরীক্ষাগার ও ডায়াগনস্টিক সুবিধাগুলো থাকতে হবে। জরুরি ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সঙ্গে সব রোগী মুখোশ এবং গ্লাভস থাকতে হবে। যথাযথ ডকুমেন্টেশন ও রেকর্ডও নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে রোগীদের স্থানান্তরের জন্য যানবাহন আশেপাশে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’