• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রীপুরে তরুণদের বিনামূল্যের ‘মানবতার বাজার’

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

শ্রীপুরে তরুণদের বিনামূল্যের ‘মানবতার বাজার’

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সারা দেশ। এ ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত টানা সাধারণ ছুটির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের লাখ লাখ মানুষ। ঠিক এমন সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গণমাধ্যমে খবর আসছে হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের জন্য রাষ্ট্রের বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী হরিলুটের খবর। খবর আসছে সরকারের পক্ষ থেকে অসহায়দের জন্য দেওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির  চাল তেল মিলছে শোবার ঘরের মেঝের নিচে, পুকুরের পানিতে এমনকি ঘরের খাটের পাটাতনের নীচে।  তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে।  কেউ কেউ মানব কল্যাণে আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে। তেমনি এক মানবতার গল্প রয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায়। এক দল তরুণ একটি সংগঠনের মাধ্যমে অসহায় গরীব খেটে খাওয়া দিনমজুর পথ মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী,সবজি, বাজার সদাইয়ের ব্যবস্থা করেছে। এখান থেকে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় বাজার করে নিচ্ছেন অভাবী মানুষেরা।  এমন মহৎকাজে স্থানীয়সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে বাহাবা কুড়িয়েছে। তারা বলছেন, তরুণরাই পৃথিবী বদলে দেয়ার মূল কারিগর।  এমন দুর্ভোগ ক্রান্তিকালে এমন মানবিকতাই প্রমাণ করে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।

ফ্রেন্ডস সোসাইটি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে একদল উদ্যোমী তরুণ এ কাজ করছে।  অসহায় গরীব খেটে খাওয়া অভাবি মানুষ তাদের এ মানবতার বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সদাই নেন বিনামূল্যে।  এ সুবিধা পেয়ে গরীব মানুষ খুবই খুশি।

পিয়ার আলী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র  রাকিবুল হাসান রকিব এ সংগঠনের সভাপতি।  তিনি জানান, আমাদের সংগঠনে ৩৮ সদস্য রয়েছে। সবাই কোনো না কোনো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  আমরা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এ সংগঠনের ফান্ড তৈরি করি। সে ফান্ড থেকে  যে কেনো মানবিক কাজে অর্থ ব্যয় করি মানবতার সেবাই। যত দিন পারবো এ মানবতার বাজার কার্যক্রম চালিয়ে নেবো।  আমাদের এ সব মানবিক কাজে অনেকেই নিজ ইচ্ছায় অর্থ সহায়তা করে থাকেন।

ফেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া আক্তার শান্তা।  তিনি পিয়ার আলী কলেজের বাঙলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে  ছাত্রী।

তিনি বলেন, বন্ধুত্বের আলোয় উদ্ভাসিত এ স্লোগানকে সঙ্গী করে ২০১৬ সালে এ সংগঠন যাত্রা শুরু করে।  এরপর থেকেই যেখানে যতটুকু পারি মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করি।

তিনি জানান, দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আমাদের মানবতার বাজার চলে। এ সময়টুকুতে যে যার মত কাঁচাবাজার বিনামূল্যে নিয়ে যায়।  আমাদের দুইজন সদস্য (ভলান্টিয়ার) সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানবতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। ১০ থেকে ১২ রকমের সবজি রাখা থাকে এ বাজারে।  এসময় পুলিশ সদস্যরাও আমাদের সহায়তা করেন।

অটোচালক আফাজ উদ্দীন (৫৫) বলেন, আমার সংসারে ৫ জন সদস্য। আমার একার আয় দিয়ে চালাতে হয় সংসার। এ দুর্দিনে রাস্তায় অটো চলে না।  বের হলে কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। খুব কষ্টে সংসার খেয়ে না খেয়ে চলে। দুইদিন ধরে এ বাজার থেকে চাহিদা মত কাঁচাবাজার নেই বিনামূল্যে।

নাম পরিচয় অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, এমন বিপদের সময়ে এটা অনেক বড় পাওয়া। মানবতা যে বেঁচে আছে তার উজ্জ্বল উদাহরণ এসব তরুণরাই। তাদের পাশে বিত্তশালীদের দাঁড়ানো উচিত।

এ সংগঠনের উপদেষ্টা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, তাদের মানবিক এসব উদ্যোড় অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

পিয়ার আলী কলেজের সহযোগি অধ্যাপক  (বাঙলা বিভাগের প্রধান) আহাম্মদুল কবির খোকন বলেন, এ তরুণরা প্রমাণ করেছে ইচ্ছা থাকলেই মানবিক হওয়া যায়। যত ক্রান্তিকালই হোক মানবতাকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়ানো যায় অসহায়দের জন্য। তাদের এমন সাহসী ও মানবিক কাজ অন্যদের উৎসাহিত করবে আশা করি।  বিত্তশালীরা তাদের পাশে দাঁড়ালে এ মানবিক কাজ আরো গতি পাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads