• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নাসিমের মৃত্যৃতে শোকে স্তব্ধ সিরাজগঞ্জ

ফাইল ছবি

জাতীয়

নাসিমের মৃত্যৃতে শোকে স্তব্ধ সিরাজগঞ্জ

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০২০

সিরাজগঞ্জের সুর্য্য সন্তান আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জবাসী। সিরাজগঞ্জের অভিভাবক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সিরাজগঞ্জবাসী। রাজনীতির উজ্জল নক্ষত্রকে হারিয়ে শোকে বিহবল হয়ে পড়েছে তার অনুসারীসহ সিরাজগঞ্জের সাধারণ মানুষ। তার মৃত্যুতে রাজনীতিতে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে-যা কখনো পুরন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তার সহচর রাজনৈতিক সাথীরা।

শনিবার সকাল ১১টায় তার মৃত্যুর সংবাদ শহরে ছড়িয়ে পড়লে চা-দোকান থেকে শুরু করে সব জাগায় একটাই আলোচনা ছিল নাসিমের মৃত্যু। সকলেই বলছেন এমন নেতার অভাব সিরাজগঞ্জবাসীর কখনোও পূরণ হবে না। অন্যদিকে, মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরই জেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ভীড় করেন। সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সিরাজগঞ্জবাসী প্রাণপ্রিয় নেতাকে যেন শেষবারের মতো সিরাজগঞ্জবাসী দেখতে পায় সে ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ৭৫’এ জেলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে। মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলায়। তার বাবা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং মাতা আমেনা মনসুর। শিক্ষাজীবনে মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে মোহাম্মদ নাসিম ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী ও রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন। মোহাম্মদ নাসিম ছাত্রজীবনে বামপন্থি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু যখন তাদের বাসায় আসেন তখন বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিভিন্ন সরকারের সময় জেল, জুলুম ও নির্যাতন ভোগ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের স্বৈরশাসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ নাসিম সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদে বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০১ সালেরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি বার বার রাজপথে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৬ প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপুর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে মোহাম্মদ নাসিম তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলন। জাতীয় নেতা হলেও সিরাজগঞ্জবাসীর অভিভাবক ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সিরাজগঞ্জের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডই মোহাম্মদ নাসিমের হাত ধরেই হয়েছে। সিরাজগঞ্জের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে। তিনি বহু পরিবারের সদস্যকে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার অবদান কখনোই সিরাজগঞ্জবাসী ভুলতে পারবে না। এমন নেতার নেতৃত্বে শুধু আওয়ামীলীগ দলীয় মানুষই নয় বিএনপিসহ পুরো সিরাজগঞ্জবাসী শোকে স্তব্ধ।

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ আব্দুল লতিফ বিশ^াস জানান, মোহাম্মদ নাসিমের মতো নেতাকে হারিয়ে সিরাজগঞ্জ আওয়ামীলীগ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল। নাসিম ছিলেন সিরাজগঞ্জবাসীর প্রাণ। তিনি কঠোরহাতে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সুসংগঠিত করেছেন। তিনি শুধু সিরাজগঞ্জ নয় উত্তরবঙ্গের একজন আদর্শিক আওয়ামীলীগ নেতা ছিলেন। এই নক্ষত্রের মৃত্যুর অভাব কখনো পুরণ হবে না।

শহর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ ইসহাক আলী জানান, রাজনৈতিক দুরদর্শিতা সম্পন্ন নেতা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি দক্ষতার সাথে যেমন মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতেন তেমনি দক্ষতার সাথে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে রেখেছেন। তিনি পিতৃস্নেহে সিরাজগঞ্জবাসীকে আগলে রাখতেন। কাউকে বলে দিতো হতো না, তিনি নিজ থেকেই সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুতে আমরা যেন আমাদের পিতাকে হারালাম।
শহর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক দানিউল হক দানী জানান, বাংলাদেশের সব জায়গাতেই নাসিমের উন্নয়ন ছোয়া রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে দেশ থেকে দাগী সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মুল হয়েছে। তিনি যেখানেই থাকেন তার হৃদয়ে ছিলেন সিরাজগঞ্জ।

জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম জানান, মোহাম্মদ নাসিমের হাত ধরেই রাজনীতি প্রবেশ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আদর্শ ও মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশনায় দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সবসময় মনে হতো আমার মাথার উপর একটা বটগাছ রয়েছে। কিন্তু মোহাম্মদ নাসিমবিহীন এখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। যেন আমরা খোলা আকাশে নীচে রয়েছি। এ সময় দুঃখের সাথে এসব নেতারা বলেন, সিরাজগঞ্জবাসীর প্রাণের নেতাকে শেষ দেখাও আমাদের ভাগ্য জুটলো না। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একবারের জন্য মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহ সিরাজগঞ্জ এনে সিরাজগঞ্জবাসীকে একনজর দেখার সুযোগ দেন।

নাসিমের জন্মস্থান কাজিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক খলিলুর রহমান জানান, কাজিপুরবাসী অভিভাবকহীন হয়ে গেলাম। কাজিপুরবাসী এতিম হয়ে গেলো। কাজিপুরবাসী গত ৭দিন যাবত মসজিদ, মন্দিরে দোয়া প্রার্থনা করেছে নাসিমের জন্য। কিন্তু আল্লাহ সহায় হননি। কাজিপুরবাসী মোহাম্মদ নাসিমকে হারিয়ে বুকফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।

অন্যদিকে, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে জেলা আওয়ামীলীগ তিনদিনের শোক ঘোষনা করেছেন। প্রতিদিন উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা, কালো ব্যাজ ধারন ও কোরআন খানির আয়োজন করা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শুধু আওয়ামীলীগ নয় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোক বিরাজ করছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, আদর্শ ভিন্ন হলেও মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন একজন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা। তার মৃত্যুতে জেলা বিএনপিও শোকাহত। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জবাসীর অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে। মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহ সিরাজগঞ্জে আনা হলে দলমত নির্বিশেষে সকলেইঅংশগ্রহন করতে পারত। এ জন্য তিনিও মোহাম্মদ নাসিমের নামাযে জানাযা পড়ানোর দাবী জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads