• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
২৬শে আগস্ট ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস: ১৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট এশিয়া এনার্জি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গেলে তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে

ফাইল ছবি

জাতীয়

২৬শে আগস্ট ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস: ১৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

  • দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ আগস্ট ২০২০

২৬শে আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্বতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়নের প্রতিবাদে গড়ে উঠে ঐতিহাসিক গণআন্দোলন। গণআন্দোলন করতে গিয়ে আইশৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনীর গুলিতে প্রাণ হারায় ৩ যুবক। আহত হয় বেশ কিছু সাধারণ মানুষ। এরপর থেকে এই দিনটিকে ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফুলবাড়ীবাসী ও তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

ফুলবাড়ী গণআন্দোলনের ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ী বাসীর সাথে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি। উল্টো আন্দোলনকারী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মাথার উপর চেপে বসেছে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা একাধিক মামলা। এদিকে শুধুমাত্র ট্রাজেডি দিবস পালনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়ন বিরোধী আন্দোলন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী এশিয়া এনার্জি নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানীর ফুলবাড়ীস্থ অফিস ঘেরাও কর্মসুচি পালন করতে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মিছিলের উপর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত ছাত্র তরিকুল ইসলামসহ আমিন ও সালেকিন নামে তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় বেশ কিছু মিছিলকারী। এদের মধ্যে বাবলু রায় নামে একজন চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এখনও সেই গুলির ক্ষত বহন করছে অনেকে। এরপর ফুলবাড়ীবাসীর টানা চার দিনের গণআন্দোলনের মূখে ৩০ আগষ্ট তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে ৬ দফা শর্তে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যা ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি বলে পরিচিত। এরপর থেকে এই দিনটিকে ফুলবাড়ীবাসী ও আন্দোলনকারী সংগঠন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এবং সেই সময়ের সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ফুলবাড়ীবাসী ও তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আন্দোলন করছে।

৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে কয়েক বছর ধরে ফুলবাড়ী স্থানীয় ভাবে গঠিত অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবি সংগঠন এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নিয়মিত আন্দোলন করে আসলেও এখন কেবল মাত্র দিবস পালন ছাড়া সেই আন্দোলন করতে দেখা যায়না। ফলে দিবস পালনের মধ্যেই আব্ধ হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীর ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন।

এদিকে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া এনার্জি প্রধান গেরী এন লাই স্বস্ত্রীক তাদের ফকিরপাড়া ওর্য়াকশপ অফিসে মিটিং করে তারা ফুলবাড়ী অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এ সময় আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাদের অফিসে গিয়ে হামলা করে গেরী এনলাই এর বহনকৃত কার ভাংচুর করে এবং অন্যান্য রাখা গাড়ীগুলো ভাংচুর ও লুটপাট করে জনতাকে নিয়ে। এই ঘটনায় একই বছর ১০ অক্টোবর এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে আন্দোলকারী সংগঠনের ১৯ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। যা বর্তমানে দিনাজপুরে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

অপরদিকে আন্দোলন কারীসংগঠনের ২ জন নেতা তেল গ্রান খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু খনি আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় এবং সম্মিলিত পেশাজীবি সংগঠনের আহবায়ক মুরতুজা সরকার মানিক ফুলবাড়ী পৌরসভার পরপর ২ বার পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে পরষ্পর নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে এক সময় আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল এখন তা অনেকটায় ভাঙ্গনের সুর শুরু হয়েছে। এই কারণে নেতাদের প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা কমতে শুরু করেছে। তাদের প্রতি মানুষের আর বিশ্বাস নেই। তবে নেতাদের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থাকলেও আন্দোলনের আগ্রহ কমে যায়নি সাধারণ মানুষের। সাধারণ জনগণ মনে করছেন প্রয়োজনে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করে ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাবে যতদিন ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি।

তেল গ্রাস খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা এসএম নুরুজ্জামান জামান বলেন, আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েনি ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার নেতা হামিদুল হক বলেন, ২৬শে আগস্টের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এসে ফুলবাড়ীর বীর জনতাকে লাল স্যালুট দিয়ে ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার ১০বছর কেটে যাচ্ছে, অথচ সেই চুক্তি আজও বাস্তবায়ন করেননি। উল্টো আন্দোলনকারী নেতাদের নামে একের পর এক মামলা করছে ঐ বহুজাতিক কোম্পানি। এ জন্য তিনি আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের নামে এশিয়া এনাজির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।

তিনি আরো বলেন, ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্টের ন্যায় আবারো একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলে ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads