• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়ীতেই ছিল রবিউল, দাবি পরিবারের

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বাড়ীতেই ছিল রবিউল, দাবি পরিবারের

  • দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের উপর হামলার ঘটনায় আটক রবিউল ইসলাম কোনভাবেই জড়িত নয় বলে দাবি করেছে পরিবার। এমনকি হামলার সময় ও পরের দিন বাড়ীতেই ছিল বলে রবিউলের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন। অপরদিকে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজের সাথে মিল রেখে রবিউলকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে ৮ম শ্রেনীর সনদ দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চাকুরীতে যোগদান করেছিল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামের মৃত: খতিব উদ্দীনের ছেলে রবিউল ইসলাম। পদোন্নতির জন্য পড়াশোনা করে এইচএসসি পাশ করেছে এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রী পরীক্ষাও দিয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া রবিউল ইসলামরা ৭ ভাই, যার মধ্যে সে সপ্তম। ভাইদের মধ্যে ৫ জনই সরকারি কর্মচারী। তার ৩ ভাই দিনাজপুর পৌরসভায় চাকুরী করেন আর আরেক ভাই চাকুরী করেন জেলা প্রশাসকের অধীনস্থ সার্কিট হাউসে। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১ টা ১০ মিনিটে তাকে বাড়ি থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

গেল শনিবার (১২সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিউল ইসলাম নামে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সরকারি কর্মচারীকে আমরা আটক করেছি। আটক রবিউল প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে নিজের দায় স্বীকার করেছে। তার তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। এছাড়া তার বক্তব্য ও জব্দ করা সিসিটিভ ফুটেজের সাথে মিল পাওয়া গেছে।

অপরদিকে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে রংপুর র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস জানান, এই ঘটনার প্রধান আসামি আসাদুলের ভাষ্য অনুযায়ী চুরির উদ্দেশ্যেই তারা ইউএনওর বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে পেটান। তবে আমরা আরও সময় নিয়ে গভীর তদন্ত করে এ ঘটনার মূল মোটিভ জানার চেষ্টা করছি। ‘সন্দেহভাজনদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সিসিটিভি ফুটেজে লাল গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তি তিনি নিজে এবং ঘটনার সাথে নিজে জড়িত বলে স্বীকার করেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী লাল গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়।

রবিউলকে আটক করার পর থেকে শোকে কাতর মমতাময়ী মা রহিমা বেগম। তার দাবি ইউএনওর উপর হামলার দিন তিনি বাড়ীতে ছিলেন। সন্ধ্যার সময় পরিবারের সকলে মিলে একসাথে টিভি দেখেছেন। রাতে একসাথে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

রবিউলের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন আমরা একসাথেই ছিলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রবিউল বাড়ীর গরু-ছাগলের জন্য ক্ষেতে ঘাস কাটতে চান। ঘোড়াঘাটে ইউএনওর অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় ইতিপূর্বে রবিউলের সাথে একটা অন্যায় করা হয়েছিল। সেখানে ৫০ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সে ওই চুরির ঘটনার সাথে কোন ভাবে জড়িত ছিল না।

রবিউলের ভাবী শিউলি বেগম জানান, রবিউলকে আটকের পর ডিবি পুলিশ তার বাড়ীতে এসে রবিউলের ব্যবহৃত ৪টি শাট, ৪টি প্যান্ট, ১টি হাসুয়া, ১টি লোহার রড নিয়ে গেছে। এছাড়াও রবিউলের শ্বশুরবাড়ী থেকে ১টি হাতুড়ি নিয়ে গেছে।

রবিউলের মা রহিমা বেগম আরও জানান, ঘটনার পরের দিন রবিউল আমাদেরকে বলতেছিল “মা আমি যদি ঘোড়াঘাটে উপস্থিত থাকতাম, তাহলে আমাকেও ইউএনওর উপর হামলার ঘটনায় ফা‍ঁসানো হতো। ভাগ্যিস আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না”।

রবিউলের প্রতিবেশীরা জানান, রবিউল ইসলাম একজন ভাল ছেলে। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সে। তাই বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এলাকায় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে সে। সে কোন ধরনের খারাপ বা অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত এমন কোন অভিযোগ এলাকাবাসীর জানা নেই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর জানান, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য যে রবিউল এই ঘটনার সাথে। আমরা প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আটক করেছি।

উল্লেখ্য, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে হামলার শিকার ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড় ভাই শেখ ফরিদউদ্দীন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। শনিবার (৫সেপ্টেম্বর) মামলার আসামী রংমিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু রায়কেও ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শিশির কুমার বসু। রিমান্ড শেষে ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আটক নবিরুল ও সান্টু রায়কে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার মামলার প্রধান আসামী আসাদুলের ৭দিনের রিমান্ড শেষ তাকেও আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ১ টা ১০ মিনিটে রবিউলকে তার বাড়ি থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার রবিউলকে আদালতে সোপর্দ করে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিজ্ঞ বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads