• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
নিম্নমধ্যবিত্তের ত্রাহি অবস্থা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

নিম্নমধ্যবিত্তের ত্রাহি অবস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০২০

সম্প্রতি ব্র্যাক প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে দেশে ৯৫ ভাগ মানুষের আয় কমেছে। রাজধানীর নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে কাজ হারিয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ।  পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছে ২৮ শতাংশ মানুষ। এই দুই শ্রেণির বড় অংশই এখন গ্রামমুখী। কিন্তু স্বস্তি নেই সেখানেও। গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর হঠাৎ চাপ বাড়ায় বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, শাক-সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু কারোরই আয়-রোজগার বাড়েনি।

রাজধানীর শান্তিনগরে ২ সন্তান ও স্ত্রীসহ ভাড়া বাসায় থাকেন আফসার আহমেদ। বলেন করোনার কারণে গত ৬ মাস ধরে বাচ্চারা স্কুলে যায় না। কারোরই গৃহশিক্ষক নেই। তারপরও বাকি পড়েছে ওদের স্কুলের বেতন। যা আয় করতাম, তা দিয়ে আমাদের ৪ জনের পরিবার মোটামুটি চলত। করোনার কারণে বেতন কমে অর্ধেক হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বছরই কোরবানি দিয়েছি। এবার তা-ও পারিনি। বছরের প্রায় শেষ হতে চলল, কিন্তু উপার্জন বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখি না। নতুন বছরে বাচ্চাদের স্কুলের ভর্তি, নতুন পোশাক বানিয়ে দেব কীভাবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করেন ধনঞ্জয় রায়। কান্নায় ধরে আসা গলায় বলতে থাকেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করতাম, রোজগার হতো, সংসার চালাতাম। সঞ্চয় তো তেমন করতে পারিনি। কারো কাছে হাত পাততেও পারছি না। আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। আফসার ও ধনঞ্জয় রায়ের মতো একই অবস্থা দেশের প্রায় সব মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে।

করোনার কারণে যে কয়েকটি সেক্টরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে, তার একটি এভিয়েশন/ট্রাভেল সেক্টর। জেনেভাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাকশন গ্রুপের প্রতিবেদনে বিশ্বের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এই বছরের শেষ নাগাদ শুধু এয়ারলাইনস, বিমানবন্দর আর সিভিল অ্যারোস্পেস কোম্পানিগুলোতে চাকরি হারানো মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত ৪৮ লাখে। এছাড়া বিমান ভ্রমণ পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ট্রাভেল এজেন্সির একজন কর্মকর্তা নিজের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, বেতন পাচ্ছি না ৭ মাস। কোম্পানি অফিস ভাড়াই দিতে পারছে না, বেতন দেবে কীভাবে? সারা জীবনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, সবই আজ মূল্যহীন। ৪ মাসের বাসা ভাড়া বাকি। বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে। পরিবার নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না। এমনই ভয়াবহ অবস্থায় আছেন শিক্ষা খাত ও বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত কয়েক কোটি মানুষ।

যারা ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে গেছেন তারাও ভালো নেই। গ্রামে থাকলে বাসা ভাড়ার চাপ থেকে বাঁচা যাবে এ যুক্তিতে অনেক পরিবারই রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। মুশতারী রহমান নামের নোয়াখালীর একজন গৃহিণী বলেন, ঢাকায় একটি পার্ট টাইম চাকরি করতাম। স্বামীর ও আমার আয় দিয়ে সংসার মোটামুটি চলে যেত। কিন্তু গ্রামে আসার কারণে উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। স্বামীও ঠিকমতো বেতন পায় না। খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি।

বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনার তাণ্ডবে বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ মানুষ আর গ্রামাঞ্চলের ৪১ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ‘লুজিং লাইভলিহুডস : দ্য লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্টস অব কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরাঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছে ঢাকায়। এখানে ৭৪ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। আর গ্রামাঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এখানে কর্মহীন হয়েছেন ৪৭ শতাংশ মানুষ।

সরকার দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ২১টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর মধ্যে দু-একটি প্যাকেজের শতভাগ বাস্তবায়ন হলেও বেশির ভাগ প্যাকেজের ঋণ বিতরণের হার খুবই হতাশাজনক। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতের প্যাকেজ থেকে বড় ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে পারলেও ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন খুব সামান্যই।

এখন পর্যন্ত এক টাকাও ঋণ দিতে পারেনি প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক। এ ছাড়া কর্মসৃজন কার্যক্রমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনও (পিকেএসএফ) এখন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ শুরু করেনি। অথচ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তা শ্রেণির মানুষই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। আবার এই খাতে ঋণ বিতরণ শেষ করার কথা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই শতাব্দীর মধ্যে চলতি বছরেই সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থা পার করছে বিশ্ব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads