• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
উদ্বিগ্ন আটকেপড়া ইতালি প্রবাসীরা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

উদ্বিগ্ন আটকেপড়া ইতালি প্রবাসীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ অক্টোবর ২০২০

করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে এবং এর আগে ছুটিতে আসা ইতালি প্রবাসীরা বিপাকে পড়েছেন। ফ্লাইট ও ভিসার মেয়াদ না থাকায় ফিরতে পারছেন না কর্মস্থলে। ইতালিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তো আছেই। আয়হীন ৮-১০ মাস দেশে থেকে অনেকেই ঋণগ্রস্ত। ফলে জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।  এমন পরিস্থিতিতে উপায়ন্তু না পেয়ে তিন দফা দাবি নিয়ে ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন তারা।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে ইতালি দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন করেন প্রবাসীরা। এরপর দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনেও মানববন্ধন করেন তারা। ওই মানববন্ধন থেকে তারা বাংলাদেশ ও ইতালি সরকারের কাছে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে-যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করা, বাংলাদেশ থেকে ইতালির ফ্লাইট চালু করা, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতালি প্রবাসীদের সহায়তা করা। ইতালি ফেরত প্রবাসীরা জানান, করোনার কারণে ৮-১০ মাস ধরে তারা দেশে আটকে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা এখন উদ্বিগ্ন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইতালি। তাই তারা মানববন্ধন করছেন।

আটকেপড়া ইতালি প্রবাসীদের একজন হূদয় আহমেদ জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি ইতালিতে আছেন। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে দেশে এসে আটকা পড়েছেন ৯ মাস ধরে।

তিনি বলেন, আমি ইতালিতে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম। দুই মাসের জন্য ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলাম। অথচ আজকে ৯ মাস পার হয়ে গেছে। সেখানে আমার বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ ঠিকই দিতে হবে, অথচ আমার কোনো আয় নেই এখন। এখন যদি দ্রুত ফিরে না যেতে পারি, তবে কাজও হারাতে হবে। আমাদের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস এখনো পাইনি।

ইতালি প্রবাসীরা জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তি ইতালির নাগরিকত্ব পেলে পরিবারের জন্য তিনি ফ্যামিলি ভিসা পাবেন। অনেকের ফ্যামিলি ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখন ভিসার মেয়াদ না বাড়ালে তাদের ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। অথচ সেখানে (ইতালিতে) তাদের পরিবারের সবকিছু পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার তথ্য প্রকাশ করে আইইডিসিআর। সংস্থাটি জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে দুই জন ইতালি ফেরত। তাদের একজন নারী, যিনি ইতালি ফেরত একজনের পরিবারের সদস্য। দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইন না মানার প্রবণতা ছিল প্রবাসীদের, এর মধ্যে ইতালি প্রবাসীরাও ছিলেন। অন্যদিকে যারা ইতালিতে ফিরে গেছেন, তাদের অনেকেই সেদেশের স্বাস্থ্যবিধি ও কোয়ারেন্টাইন মানেননি বলেও দেশটির সংবাদপত্রে খবরে প্রকাশ হয়। করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে মার্চে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখে।

তবে সে সময়ে ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় বেশকিছু চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফেরেন ইতালি প্রবাসীরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকেও চার্টার্ড ফ্লাইটে ইতালিতে ফেরেন অনেকেই। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নীতিমালা অনুসরণ করে ১৬ জুন থেকে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে কাতার এয়ারওয়েজ কাতার হয়ে বিভিন্ন দেশে যাত্রীদের নিয়ে যায়। এরমধ্যে অন্যতম গন্তব্য ছিল ইতালি। ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে রোমে যাওয়া একটি ফ্লাইটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ইতালি। এ ঘোষণার পরও ৮ জুন বাংলাদেশ থেকে কাতার হয়ে ইতালিতে যাওয়া দুটি ফ্লাইটের ১৬৮ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দিয়েছে দেশটি।

ইতালি প্রবাসীদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ইতালি দূতাবাসে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাচ্ছেন না তারা। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা, কবে বাড়াবে এ বিষয়ে ইতালি দূতাবাস সিদ্ধান্ত দেয়নি। ইতালিতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকার দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু দূতাবাসে যোগাযোগ করলে একেক সময় একেকজন ফোন রিসিভ করেন এবং একেকজন একেক ধরনের উত্তর দেন। ইতালির ভিসা সেন্টার ভিএফএস গ্লোবালও কোনো তথ্য দিতে পারছে না।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ইতালি প্রবাসীরা বলেন, গত ১৮ জুলাই আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি, কোনো আশ্বাসও পাইনি। এজন্য আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে লড়বো। সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে আমরা মাঠ থেকে সরে যাবো না। কারণ, এটা আমাদের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন।

ইতালিতে পড়াশোনা করতেন হাসনাত উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি ৮ মাস ধরে আটকে আছি। আমার পড়াশোনা কিছুই হচ্ছে না। এখন ফিরে যেতে না পারলে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারত, ফ্রান্স, পাকিস্তানের করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভালো না, অথচ সেসব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ হয়নি ইতালিতে।

১৫ দিন আগে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে মো. রুহুল আমিন তালুকদারের। ইতালিতে ব্যবসা করতেন। ১১ মাস ধরে দেশে আছেন। তিনি বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, এখন আমাদের করণীয় কী বুঝতে পারছি না। করোনার এ সময়ে দেশে আটকে আছি, কেউ তো খোঁজও ‍নিতে আসেনি। এখনো আমাদের কাজে ফিরে যেতে কোনো তৎপরতা দেখছি না। এখানে একজন ব্যক্তি শুধু ব্যক্তি নয়, একটি পরিবার। তাকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের জীবন চলে। আমরা যদি ফিরে যেতে না পারি, তবে পুরো পরিবার বিপদগ্রস্ত হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads