• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় যেন আলাদিনের চেরাগ

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় যেন আলাদিনের চেরাগ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৩ অক্টোবর ২০২০

রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত এলাকার মধ্যে বর্তমানে তেরখাদিয়া অন্যতম। সেনানিবাসের পাশের এ এলাকা একদিকে যেমন অভিজাত ধরা হয় তেমনি সৌন্দর্যের দিক দিয়েও কোনো অংশের কমতি নেই। তেরখাদিয়ার ৫ নম্বর রোডের একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে অনেক প্রশ্ন এলাকাবাসীর। বাড়িটি দেখে আসলেই প্রশ্ন জাগার মতোই। এ বাড়িটি আসলে রাজশাহী জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর তরিকুলের। শহরের ভেতরে এত দামি জায়গায় একজন কম্পিউটার অপারেটরের এ বাড়ি দেখে অনেকেই নানা প্রশ্ন করেন।

একই এলাকার ডাবতলায় ওই অফিসেরই সাবেক কম্পিউটার অপারেটর বর্তমানে সুপার শহিদুল ইসলামের বাড়ি। বাড়িগুলো নিয়ে যেমন এই এলাকায় আলোচনা তেমনি নগরীর শিরোইল স্কুলের সামনে বিলাসবহুল বাড়িটি দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হয়তো কোনো বড় ব্যবসায়ীর। না, এটি ব্যবসায়ীর নয়। এটি ওই অফিসের উপ-পরিচালক নাসিম আখতারের বাড়ি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, বাড়িটি তৈরিতে কমপক্ষে কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

এ তো গেল উপ-পরিচালক থেকে শুরু করে কম্পিউটার অপারেটরের বাড়ির কথা। এবার আসুন সেই অফিসের পিয়ন গাজী সালাউদ্দীনের কাছে। ‘স্যারদের বাড়ি দেখে তিনিও বাড়ি করেছেন। সেই বাড়ি বানাতেও খরচ হয়েছে কোটি টাকার মতো।’ 

ভাবতে পারেন রাজশাহী জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কি আলাদিনের চেরাগ আছে? হ্যাঁ, সত্যিই আছে সেখানে আলাদিনের চেরাগ। পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক ডা. নাসিম আখতার তার নিম্নপদস্থ কয়েকজন কর্মচারীকে দিয়ে একটি সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর ধরে এটিকে আলাদিনের চেরাগে পরিণত করেছেন। এর সুবাদেই একদিকে যেমন তিনি কোটি কোটি টাকা তসরুপ করতে পারেন, তেমনি তার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার অপারেটর তরিকুল, সুপার শহিদুল ও অফিস সহকারী গাজী সালাউদ্দীন কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে করেছেন বাড়ি, যা নগরজুড়ে লোকজনের কাছে আলোচনা হয়ে দাঁড়ায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক ডাক্তার নাসিম আখতার আছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি একাই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদ একেবারে জোরপূর্বক আঁকড়ে ধরে আছেন। এই পদগুলো হলো এডি ও এডিসিসি। ওই পদগুলোর জন্য লোক থাকলেও তিনি কাউকে বসতে দেন না। অদৃশ্য কারণে এ ব্যাপারে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেন না।

এছাড়াও তিনি নন-ক্যাডার। এখানে ৬ জন বিসিএস ক্যাডার রয়েছেন। ৩ জন জুনিয়র আর ৩ জন সিনিয়র। অথচ কাউকে তিনি তোয়াক্কা না করে নিজে নন-ক্যাডার হয়ে ক্যাডারের চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন।

জানা যায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয় থেকে যত কেনাকাটা তার পরতে পরতে রয়েছে দুর্নীতি। এনজিওগুলোকে স্বাস্থ্য বিষয়ের জন্য যে টাকা দেওয়া হয় সেখানেও রয়েছে তার কালো হাতের থাবা। তাকে খুশি না করাতে পারলে এ টাকা কেউ তুলতে পারবেন না। উপজেলা পর্যায়ের অফিসে যে মাঠকর্মী রয়েছে সেখানেও আছে তার দুর্নীতির আশ্রয়। এছাড়া বদলি, নিয়োগ এবং পেনশনের টাকা উত্তোলন করতে গেলে কমপক্ষে ১ লাখ টাকার নিচে তিনি কোনো ফাইলই স্বাক্ষর করেন না।

এসব কাজে তার সহায়ক হিসেবে কাজ করেন তিনজন- একজন কম্পিউটার অপারেটর তরিকুল, সুপার শহিদুল এবং পিয়ন গাজী সালাউদ্দীন।

এ তিনজনই জিম্মি করে পুরো অফিসকে আলাদিনের চেরাগ বানিয়ে ফেলেছেন। ফাইল আটকে রেখে টাকা নেওয়ার যে সিস্টেম এটা সেখানে গিয়ে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। 

একদিকে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, অন্যদিকে ঘুষবাণিজ্যে ভাগ্য বদল করে ফেলেছেন এরা।

অফিসের কেনাকাটা থেকে শুরু করে বদলি উপ-পরিচালকের নির্দেশমতো তরিকুল আর শহিদুলই করে থাকে। কাকে কোথায় বদলি করতে হবে, কে টাকা দিল না- এগুলোর সব হিসাব-নিকাশ তারা দুজনই করে থাকে। এখানে সালাউদ্দীনকেও তারা ব্যবহার করে থাকে।  সালাউদ্দীন প্রায় ২৫ বছর কোনো প্রকার বদলি ছাড়াই এখানেই রয়েছেন।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, উপ-পরিচালকের দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতার এ খবর অধিদপ্তর পর্যন্ত জানে। বিষয়টি নিয়ে গোপনে তদন্তও হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে কেনাকাটায় অস্বচ্ছতার বিষয়ে অডিট হয়। অডিটে অনেক আপত্তি চলে আসে।

অডিটের এক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বলেন, ওখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। উনি একাই তিনটি পদ নিয়ে আছেন। এগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধিদপ্তর থেকে তার বিষয়ে অনুসন্ধান হচ্ছে। এখন অনুসন্ধান কোন পর্যায়ে আছে সেটি বলা যাচ্ছে না। তার বিষয় নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে এখন। এ বিষয়ে কম্পিউটার অপারেটর তরিকুল বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। অফিসের নানা অনিয়ম ও তার টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

শহিদুলকে একাধিকবার ফোন করলেও পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে উপ-পরিচালক ডাক্তার নাসিম আখতার বলেন, এগুলো অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি নিজেই তিনটি পদ ধরে রেখেছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা অধিদপ্তরের বিষয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads