• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হলো না রায়হানের

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হলো না রায়হানের

  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০২০

মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন, সিলেট 

‘হে কোনো অপরাধ করছে না, একমাত্র ঘুষওর টেখার লাগি আমার ফুয়ারে জানে মারিলাইলো ফুলিশে, তারা আমার বুকখান খালি করিলাইছে। রাইত ১০টাত তার চাচা হউর (শ্বশুর) ওর বাড়িতে তার দুই মাসের ফুয়ারে কুলে নিয়ে আদর করিয়া বাড়িতে আওয়ারলাগি বারইছে। আর বাসাত আইছে না। সারা রাইত মোবাইল বন্ধ আছিল... আমি ঘুমইছি না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সিলেটে পুলিশের হেফাজতে মারা যাওয়া রায়হানের মা। এ সময় তিনি বারবার মূর্ছাও যান।

গত সোমবার দুপুরে নিহত রায়হান উদ্দিনের বাড়িতে গেলে দেখা যায় শোকের মাতম। 

রোববার সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। এরপর এ নিয়ে দেখা দেয় ধূম্রজাল। পুলিশ ও নিহতের পরিবারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। পুলিশ বলছে ছিনতাই করতে ধরা খেয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়। আর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে টাকার জন্য নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

এ ঘটনায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া পালিয়েছেন, তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।

এর আগে, এ ঘটনায় রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

ঘটনাস্থল কাস্টঘর এলাকায় গেলে গণপিটুনির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ী ও স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বললেও কেউ গণপিটুনির কোনো তথ্য দিতে পারেননি। স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম জানান, কাস্টঘরসহ আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরা যাচাই করে ছিনতাইয়ের ঘটনা কিংবা গণপিটুনির কোনো ঘটনা ফুটেজে ধরা পড়েনি। এমনকি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েও এরকম কোনো ঘটনার সত্যতা মেলেনি বলে তিনি জানান।

জানা যায়, নিহত রায়হান উদ্দিন (৩২) সিলেট নগরীর নেহারিপাড়ার আখালিয়া এলাকার মৃত রফিক মিয়ার ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার এক বোন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। রায়হানেরও যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সকল প্রসেসিং চলছে। গত দেড় বছর আগে বিয়ে করেছেন। ২ মাসের তার একটি ছেলে আছে।

নেহারিপাড়া সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি মিসবাহ-উর রহমান  জানান, ব্যক্তিগতভাবে ছেলে হিসেবে সে শান্তশিষ্ট। এলাকায় কখনো কোনো ঝামেলা তার হয়নি আর ছিনতাই করার প্রশ্নই আসে না। কারণ তার পারিবারিক অবস্থা সব মিলে ছিনতাই করার প্রশ্নই আসে না।

সূত্র জানায়, রোববার ভোর সাড়ে ৩টা পৌনে ৪টার দিকে ০১৭৮৩৫৬১১১১ নম্বর থেকে নিহত রায়হানের পালক পিতা ও চাচা হাবিবুল্লাহর কাছে মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। রিসিভ করার পর কথা বলে রায়হান। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে, ‘আমারে বাঁচাওরেবা... আমারে বাঁচাও।’ এ সময় রায়হান কান্না করে অপর প্রান্ত থেকে চাচাকে টাকা নিয়ে তাকে বাঁচাতে বলেন। তা না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। বলেন, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যাওয়ার জন্য।

পরে চাচা হাবিব উল্লাহ বন্দরবাজার ফাঁড়িতে গেলে সেখানে অবস্থানরত সাদা পোশাকে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা ছিল। টাকা এনেছেন? কিছু টাকা এনেছি জানানোর পর তাকে বসিয়ে রাখেন। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী কুদরতউল্লাহ মসজিদে নামাজ আদায় করে সকালে আবার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। তখন আরো একজন পুলিশ সদস্য তাকে জানান, রায়হান ঘুমে আছেন। আর যে পুলিশ অফিসার তাকে ফাঁড়িতে এনেছেন তিনিও ঘুমে। তাই সকাল ৯টার পরে আসতে বলেন এবং টাকা ১০ হাজার নিয়ে যেতেও বলা হয়। এরপর ১০টার দিকে বলেন, আপনার ছেলের শরীর খারাপ করেছিল। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওসমানী হাসপাতাল গিয়ে দেখতে পারবেন। একথা শোনার পরপরই রায়হানের চাচা হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads