• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নতুন সাজে চিড়িয়াখানা

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

নতুন সাজে চিড়িয়াখানা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০২০

করোনার কারণে প্রায় আট মাস বন্ধ থাকা জাতীয় চিড়িয়াখানা নতুন সাজে অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের জন্য। আজ থেকে শর্তসাপেক্ষে খুলছে ঢাকার মিরপুরের এই চিড়িয়াখানার দরজা, দর্শনার্থীদের পদচারণায় আবার ভাঙবে সুনসান নীরবতা।

মহামারীর শুরুতে ২০ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ বিরতির পর একে নবরূপে সাজিয়ে তুলতে চলছে শেষ মুহূর্তের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।

বৃহস্পতিবার চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টিকিট কাউন্টারের সামনে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আঁকা হয়েছে বৃত্তাকার চিহ্ন, টাঙানো হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যানার।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবহার করা হবে একমুখী পথ, সে জন্য দেওয়া হয়েছে দিকনির্দেশনাও। চিড়িয়াখানার ভেতরে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হচ্ছে করোনাভাইরাসের সতর্কবার্তা। দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই পাবেন হাত ধোয়ার জন্য নতুন করে বসানো বেসিন, যেখানে সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও থাকবে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আবদুল লতিফ বলেন, দর্শনার্থীরা প্রবেশের সময় ফুটপাত ব্যবহার করবেন, সেখানে জীবাণুনাশক দেওয়া আছে। প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানারের তাদের তাপমাত্রা মাপা হবে। যে শর্তগুলো মেনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিড়িয়াখানা খোলার অনুমতি দিয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তাতে প্রবেশ ফটকে জীবাণুনাশক টানেল বসানোর নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে কিউরেটর বলেন, ‘এটি নিয়ে আসলে বিতর্ক বয়েছে, সে জন্য আমরা তা বাদ দিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে।’

সংস্কারকাজের অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানার মূল ফটকটি নতুন করে করা হয়েছে। মূল ফটক, ভেতরের রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনায় এখন চলছে শেষ সময়ের সজ্জার কাজ। সেখানে কর্মরত রঙমিস্ত্রি ইয়াসিন বলেন, ‘সামনে চিড়িয়াখানা খুলবে, তাই নতুন করে সবকিছু করা হচ্ছে। আমরা এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছি। শনিবারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।’

প্রাণীদের নিরাপত্তা খাঁচায়ও চলছে ঝালাইয়ের কাজ; সংস্কার করা হচ্ছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার। চিড়িয়াখানার প্লাম্বার আবদুর রহমান বলেন, ‘নতুন করে সব পানির লাইন করছি, কাজ প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে খোলার পর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যবস্থা করছি।’

শেষ করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও। সব মিলিয়ে পুরো চিড়িয়াখানায় এখন সাজ সাজ রব। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের চমক দিতেই নতুন আঙ্গিকে চিড়িয়াখানার সবকিছু সাজানোর কথা বললেন কিউরেটর। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরকে ঢেলে সাজাচ্ছি। অ্যাকুরিয়ামে মাছের ব্যবস্থা করছি। কিছু প্রাণী, বডি আছে- সেগুলোকে নতুন সাজে সজ্জিত করছি। প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, এখন আমরা অপেক্ষা করছি দর্শনার্থীদের জন্য।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম রোববার চিড়িয়াখানায় বিনা মূল্যে প্রবেশ করা যাবে বলে জানান তিনি। লতিফ বলেন, ‘প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরে দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর বিনা মূল্যে আলোকচিত্রও দেখতে পারবেন।’

দীর্ঘদিন পর চিড়িয়াখানা খুললেও করোনাভাইরাসের কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যার সঙ্গে সীমিত করা হয়েছে পরিদর্শনের সময়ও। আগে দিনে আট ঘণ্টার জায়গায় এখন ছয় ঘণ্টা খোলা থাকবে।

যেসব নিয়ম মানতে হবে দর্শনার্থীদের : চিড়িয়াখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় অমোচনীয় রঙ দিয়ে চিহ্নিত বৃত্তাকার স্থানে অবস্থান করতে হবে। প্রবেশ ফটকে ফুটবাথ ব্যবহার করতে হবে। ভেতর প্রবেশের পর দিকনির্দেশক অনুসরণ করে একমুখী পথ ব্যবহার করতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। ভেতরে ভিড় বা জটলা করা যাবে না।

মহামারীতে শতাধিক নতুন অতিথি এসেছে। ১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় মহামারীর মধ্যে জন্মেছে ১১৬টি শাবক, যেখানে আগে ছিল ২ হাজার ৭০০ বন্যপ্রাণী। নতুন জন্মানো শাবকগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি জিরাফ, দুটি জলহস্তী, ১৮টি চিত্রা হরিণ, একটি মায়া হরিণ, একটি ঘোড়া, দুটি ইম্পালা, দুটি গাধা, একটি কমন ইল্যান্ড, ২৩টি ময়ূর, ১৩টি ইমু, ৩০টি বক, সাতটি ঘুঘু, ১৫টি কবুতর। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় এখন ২ হাজার ৮১৬টি প্রাণী রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads