• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে নীতিমালা

  • বাসস
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২০

খাদ্যে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত ট্রান্সফ্যাটবিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটি সম্প্রতি এক সভায় এই নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার আলোকে খসড়া নীতি প্রণয়নে কাজ করছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ট্রান্সফ্যাটবিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে এবং তা সম্পন্ন হতে ছয় মাস লাগতে পারে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২ গ্রামে সীমিত করার সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। বিভিন্ন কারখানার মালিক শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিতভাবে এ বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। কোনোভাবেই এ বিধিমালা চাপিয়ে দেওয়া হবে না। 

সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ট্রান্সফ্যাটজনিত হূদরোগে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যার মধ্যে ৪.৪১ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সর্বোত্তম নীতি অর্থাৎ সব ফ্যাট, তেল এবং খাবারে প্রতি ১০০ গ্রাম ফ্যাটে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২ গ্রামে সীমিত করা, অথবা পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল-পিএইচওর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ক্যাবের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আহম্মদ একরামুল্লাহ বলেন, ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে কোনো নীতি না থাকায় ভোক্তা স্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সরকার ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ বলেন, এখন কোনো বিধিমালা নেই বলে অনিয়মকারীদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। বিধিমালা তৈরি হলেই আইনের প্রয়োগ করা যাবে।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) বাংলাদেশ কান্ট্রি লিডার মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসরণ করে ভারত, থাইল্যান্ড, ব্রাজিলসহ অনেক দেশ খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি করেছে। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, কোনো অজুহাতেই ট্রান্সফ্যাট মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করা যাবে না। ট্রান্সফ্যাট নির্ধারিত সীমায় রাখতে পারলে প্রতি বছর হূদরোগের মারাত্মক ছোবল থেকে রক্ষা পাবে দেশের হাজারো মানুষ।

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও, যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ ভাগ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাটের (ট্রান্সফ্যাটি এসিড) উপস্থিতি পেয়েছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা ডব্লিউএইচওর সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম নমুনায় গড়ে ১১ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে পিএইচও বা ডালডা সাধারণত ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স ও বেকারি পণ্য তৈরি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়ক সংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

গবেষকদের মতে, সাধারণত প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি পণ্যে বিদ্যমান ট্রান্সফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট এক ধরনের ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান যা রক্তের এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। অপরদিকে এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হূদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়- যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads