• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

তৈরি খাবারে এখনো বিশ্বাসহীন ভোক্তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২০

দেশের বিশেষ করে রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের মান ও পরিবেশ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে। সরকারি নানা সংস্থা প্রায়ই অভিযান চালায়। তারপর যেই লাউ সেই কদু। কিছুদিন যেতেই আবার পুরনো চেহারায় ফিরে আসে প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একাধিক দল প্রতিনিয়ত অভিযান চালায় এসব খাবারের দোকানে। এতে দেখা যায়, গ্রাহকের পছন্দে থাকা নামি প্রতিষ্ঠানেও নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র। এর দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানাও গুনছে তারা। গত একমাসে এমন ১৬টি অভিযানে ৩১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

অভিযানগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই একই ধরনের অব্যবস্থাপনা পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নোংরা পরিবেশ খাবার সংরক্ষণ করা, ফ্রিজে একসঙ্গে মাছ-মাংসসহ নানা খাদ্য উপাদান রাখা, পণ্যের উৎপাদন ও মেয়াদ উল্লেখ না থাকার ঘটনা ছিল সবখানে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স হালনাগাদ না থাকা, কর্মীদের স্বাস্থ্যসনদ না থাকা ও ক্রয়-বিক্রয়ের চালান রসিদ মেলেনি।

সবশেষ গত বুধবার নোংরা পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগে তেজগাঁওয়ের রূপচাঁদা রেস্টুরেন্টকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগের দিন মঙ্গলবার পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের প্রিন্স অব ওয়েলস বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারিকে পণ্য তৈরিতে অব্যবস্থাপনা, লাইসেন্স হালনাগাদ না থাকায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এখানে খাবার তৈরিতে চরম অব্যবস্থাপনা, হালনাগাদ লাইসেন্স ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসনদ পায়নি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ছোট থেকে শুরু করে নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেকটা কমন সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হলো অব্যবস্থাপনা, যারা খাবারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সচেতন না হওয়া এবং নিয়ম মানতে অনীহা। তাই অভিযানে জেল-জরিমানার সঙ্গে তাদের মান ভালো করার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত ফলোআপে রাখা হচ্ছে অভিযানের পর তারা মান ধরে রাখতে পারছে কি না।

মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, শুধু জেল-জরিমানা নয়, আমরা চাচ্ছি মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি মনিটরিং টিম যাবে তাদের পরামর্শ দেবে এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা ভালো করবে। সেভাবেই কাজ করছি।

গত সোমবার পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারিতে পণ্য উৎপাদন ও মেয়াদের লেবেল ও দাম উল্লেখ না থাকার অভিযোগ ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ফাস্টফুডপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় গুলশান-১-এর পিজ্জা ইনে ২৮ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। যদিও এখানে ফ্রিজ এবং রান্নাঘরে খাদ্য সংরক্ষণের মান মোটামুটি সঠিক ছিল। তবে কিছু খাদ্য উপকরণে ভুল লেবেলিং, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এবং কর্মীদের স্বাস্থ্যসনদ পাওয়া যায়নি।

২৭ অক্টোবর গোড়ানে ‘বাবার দোয়া ও মায়ের দোয়া’ নামের দুই বেকারিকে ২ লাখ জরিমানা করা হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলমের নেতৃত্বে অভিযানে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, প্রক্রিয়াকরণ, সরবরাহ ও ক্রয়-বিক্রয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের রসিদ বা চালান দেখাতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠান দুটো।

২৫ অক্টোবর তোপখানা রোডের ‘ঢাকা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ ও ‘ক্যাফে ঝিলকে’ ২ লাখ জরিমানা করা হয় তাদের ফ্রিজ ও রান্নাঘরে খাদ্য সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে। হালনাগাদ লাইসেন্স, কর্মীদের স্বাস্থ্যসনদ, ক্রয়-বিক্রয় চালানও ছিল না তাদের।

২২ অক্টোবর কমলাপুরের হোটেল আল ফারুক অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ফ্রিজ ও রান্নাঘরে অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি হালনাগাদ লাইসেন্স, রেস্টুরেন্ট কর্মীদের স্বাস্থ্য সনদ, ও ক্রয়-বিক্রয় চালানের কাগজ না থাকায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

২১ অক্টোবর নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে কাঁটাবনের ‘অষ্টব্যঞ্জন রেস্টুরেন্টকে’ ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে ম্যানেজারকে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাওছার হোসেন বলেন, সামনের দিকে বেশ চাকচিক্য থাকলেও ভেতরে চরম নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখানে রান্না ও খাদ্য উপকরণ রাখা হতো। শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্য সনদ ছিল না। রান্নাঘরেই শ্রমিকরা রাতযাপন করত।

১৯ অক্টোবরের অভিযানে গুলশান-২-এর ‘টনি রমাস’ রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর ও স্টোররুম থেকে লেবেলবিহীন জুস, বিফ পেটি ও মাশরুম এবং ভুয়া লেবেলযুক্ত ভিনেগার ও পাস্তা উদ্ধার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয় ২ লাখ টাকা।

এর আগের দিনে ১৮ অক্টোবর বেইলি রোডের নবাবী ভোজকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফ্রিজ ও রান্নাঘরে খাদ্য সংরক্ষণে অব্যবস্থানা ও দায়িত্বহীনতা এবং প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র, কর্মচারীর স্বাস্থ্য সনদ ও ক্রয়-বিক্রয়ের চালানের কাগজ দেখাতে পারেনি।

তোপখানা রোডের বৈশাখী রেস্টুরেন্টে ১৪ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে নানা অব্যবস্থপনার দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানকালে ফ্রিজ ও রান্নাঘরে খাদ্য সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনা পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা ছিল না।

একদিন আগে ১৩ অক্টোবর মতিঝিলের হীরাঝিল হোটেলে অভিযান চালান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোতিশ্বর পাল। ফ্রিজে লেবেলবিহীন খাদ্য, ঢাকনাবিহীন দই, গোডাউন থেকে অননুমোদিত রং, দুধ, মিষ্টি তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করায় ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এর আগের দিন ১২ অক্টোবর হাতিরপুলের শর্মা হাউসের রান্নাঘর ও স্টোররুমে বিপুল পরিমাণ অস্বাস্থ্যকর, পচা, মেয়াদ ও লেবেলবিহীন খাদ্য উপকরণ জব্দ করা হয়। পরে জরিমানা করা হয় ৩ লাখ টাকা।

৮ অক্টোবর অভিযান চালানো হয় ধানমন্ডি-২-এর বাফেট স্টোরিসে। অভিযানকালে হালনাগাদ লাইসেন্স, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদ না থাকা ও আবশ্যকীয় ক্রয়-বিক্রয় চালান পায়নি। এসব অপরাধে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এর আগের দিন ৭ অক্টোবর মতিঝিলের দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় অবস্থিত হোয়াং কিচেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টকে ১ লাখ জরিমানা গুনতে হয়। চাইনিজ রেস্টুরেন্টটিরও ছিল না হালনাগাদ লাইসেন্স। কর্মীদের ছিল না যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে দেওয়া স্বাস্থ্য সনদ।

তার আগে ৬ অক্টোবর মেরুল বাড্ডার সেঞ্চুরী ফার্মস লিমিটেডে এ অভিযান চালানো হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেকারি পণ্য প্রস্তুত করা, লেবেলবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ বেকারি পণ্য মজুত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এর আগে ৪ অক্টোবর গোপীবাগের হাঁড়ি গোশত রেস্টুরেন্ট ও ক্যাটারিং সার্ভিসে অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, রেস্টুরেন্টটির রান্নাঘর ছিল অত্যন্ত নোংরা। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। চুলার পাশে অপরিষ্কার নালা, বাসি খাবার সংরক্ষণ, রান্না ও কাঁচা মাংস একই ফ্রিজে রাখা এবং খাবার অযোগ্য পচা সবজি পাওয়া যায়, যেখানে অবাধে বিচরণ করে তেলাপোকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads