• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

বন্ধ হচ্ছে ৩ হাজার হাসপাতাল

ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন চলতি মাসেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ নভেম্বর ২০২০

অনুমোদন ছাড়া চলা সব হাসপাতাল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সম্পর্কে দেশের সব সিভিল সার্জনকে দুই দিন আগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ফরিদ উদ্দীন মিয়া জানান, দেশে অনুমোদনহীন হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এদিকে চলতি মাসেই সারা দেশে অনুমোদিত এবং অননুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিদর্শন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।

ফরিদ উদ্দীন বলেন, আমরা অনলাইনে নিবন্ধন ও লাইনেন্স নবায়নে জন্য একটি নির্ধারিত তারিখ বেঁধে দিয়েছিলাম। সে সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছে তাদের লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনের কাজ চলছে। যারা আবেদন করেনি তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, লাইসেন্সের বাইরে অনেক হাসপাতাল রয়েছে। এগুলোর হিসাব পেতে গত পরশু জরুরি বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রত্যেক বিভাগীয় পরিচালককে ১২ নভেম্বরের মধ্যে তাদের এলাকার লাইসেন্সহীন হাসপাতালের তালিকা দিতে বলা হয়েছে।

অবৈধগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি বৈধগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। আগামী এক মাসের মধ্যেই এ কাজ চলবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুই বছর আগের জরিপ বলছে, দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭ হাজার ২৪৪টি। এর মধ্যে লাইসেন্স করা হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা ছয় হাজার ৬৭টি। এরমধ্যে দুই হাজার ১৩০টি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার তিন হাজার ৮৫৬টি, ব্লাড ব্যাংক ৮১টি। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কামাল জানিয়েছেন, এ ধরনের হাসপাতাল শনাক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যোগ্য প্রতিনিধি নিয়ে অভিযান চালানো হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমার পর চলতি বছর সরকার এই খাতে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ নেয়। লাইসেন্স নবায়ন বা আবেদন করতে গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে জমা পড়ে ১৪ হাজারের মতো আবেদন। কথা ছিল যারা আবেদন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে এখনো হয়নি অভিযান। আবার যেসব আবেদন জমা পড়েছে, তাদের মধ্যে হালনাগাদ লাইসেন্স আছে পাঁচ হাজার ৫১৯টির। যাচাই-বাছাই ও পরিদর্শনের অপেক্ষায় সাত হাজার ৪১টি। অসম্পূর্ণ আবেদনপত্র পাওয়া গেছে তিন হাজার ৩০৪টি। এগুলোর কোনোটির ট্রেড লাইসেন্সই নেই, কোনোটির নেই পরিবেশ ছাড়পত্র বা অবস্থানগত ছাড়পত্র, কোনো কোনোটির অন্য ত্রুটি আছে। ফলে আইন অনুযায়ী এদেরও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। হাসপাতালের লাইসেন্সের বিষয়টি দেখভাল করার কথা টাস্কফোর্স কমিটির। কিন্তু আড়াই মাসেও অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি। এর মধ্যে গত সোমবার ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল মাইন্ড এইড কেয়ার ইনস্টিটিউটে এ পুলিশের জ্যেষ্ঠ এএসপি আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, তাদের কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে ঢাকার সিভিল সার্জন মইনুল আহসান জানান, এটিরও লাইসেন্স নেই। গত মার্চে তারা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তবে তাদের কাগজপত্র সম্পূর্ণ নয়, হাসপাতালেও নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।

এর আগেও নানা সময় বিভিন্ন হাসপাতালে নানা অনিয়ম প্রকাশের পর একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জানা গেছে, ওই হাসপাতালের অনুমোদন ছিল না। নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকতা বলেন, তাদের যে শাখা বেসরকারি চিকিৎসালয় দেখাশোনা করে, তাতে কর্মকর্তা সব মিলিয়ে ১১ জন। একজন পরিচালক, দুজন উপপরিচালক, তিনজন সহকারী পরিচালক ও পাঁচজন মেডিকেল অফিসার। তাদের পক্ষে হাজার হাজার হাসপাতাল দেখভাল করা সম্ভব নয়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে তালিকা চেয়ে সারা দেশে অনুমোদিত এবং অননুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিদর্শন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে এক সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, যেকোনো মৃত্যুই দুঃখজনক, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। একজন পুলিশ অফিসার এভাবে মারা যাবেন এটা কারোই কাম্য নয়। এ ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত, অনুতপ্ত। হাসপাতাল নামে যেটা চলছিল সেটার কোনো অনুমোদন ছিল না। মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক চিকিৎসা, দুটো আলাদা জিনিস আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত। তারা বলছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন ছিল, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিপ্তর থেকে অনুমোদন ছিল না। কিন্তু মানসিক চিকিৎসা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বন্ধ করে দিয়েছি।

মহাপরিচালক বলেন, সব জায়গাতেই অজুহাত আছে। আমি কোনো অজুহাত দিতে চাই না। আমার যে পরিমাণ জনবল দরকার সেটা নেই। তার পরও চেষ্টা চালাচ্ছি। বিভাগ, জোন ওয়াইজ বের করে এ ধরনের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার (অননুমোদিত) করতে হবে। লাইসেন্সের বাইরে অজস্র হাসপাতাল রয়েছে।  অননুমোদিত হাসপাতালে এ রকম মৃত্যু বন্ধ করতে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন-জানতে চাইলে বলেন, সবগুলো পরিদর্শন করতে আমরা জরুরি মিটিং করে একটা কমিটি করেছি। প্রত্যেক এলাকার সিভিল সার্জনদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে প্রশাসন। কারণ, আমরা একা এটা করতে পারব না, এটার সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সাহায্য লাগবে। তাদের নিয়ে আমরা এটা করতে পারব। আশা করছি এ মাসের মধ্যে শুরু করতে পারব। আপনারা-আমরা সবাই এ সমাজেরই মানুষ। আমরা যদি আমাদের সম্পৃক্ততাকে এসব হাসপাতাল থেকে সরিয়ে না আনি তাহলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরাই এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা বলতে শুধু চিকিৎসকদের বোঝাচ্ছি না, সমাজও। আমরা যদি নিজে থেকে বিরত না হই, অন্যায়কে প্রশয় দেই তাহলে এসব বন্ধ করতে পারব না। মাইন্ড এইডে যাওয়ার আগে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পাননি, সে জায়গায় দায় আছে কি না-জানতে চাইলে বলেন, এটা সম্পর্কে আমার কাছে তথ্য নেই। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এটা গুরুতর অন্যায় হয়েছে। এটার অবশ্যই বিচার হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads