• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণায় সুফল মিলছে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণায় সুফল মিলছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর ২০২০

ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার আর মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম সার ব্যবস্থাপনায় সুফল পাচ্ছে দেশের কৃষকরা। সেই সাথে ভূমি জরিপে মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের অনাবদি জমি আসছে চাষাবাদের আওতায়। উৎপন্ন হচ্ছে অধিক ফসলও। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে নানাভাবে এই সহায়তা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। বছরে সংস্থাটির গবেষণাগারে ৪০ হাজার মৃত্তিকা পানি নমুনা বিশ্লেষণ করে সুষম সার দেয়ার সুপারিশ করছে। প্রকাশ করা হয়েছে ভূমি ব্যবহারের মানচিত্রও। নিত্য নতুন কৌশল হিসেবে অনলাইন সার সুপারিশ প্রযুক্তির মাধ্যমেও কৃষকদের সেবা দিচ্ছে।

বুধবার এসআরডিআই চলমান গবেষণা কার্যক্রম ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২০ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে এক অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার।

মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার বলেন, আমাদের কাজ হলো মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন করা। এতে করে আমাদের দেশের কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে। লবণাক্ত জমিতে অসময়ে তরমুজ হচ্ছে আমাদের মাটির গুণগতমান উন্নয়নের ফলে। কৃষকরা সেই অসময়ের তরজুম বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন। মহাপরিচালক আরো বলেন, মাটির গুণগন মান নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেশের পাহাড়ি এলাকা দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় চাষাবাদে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এক সময় চাষ হতো না এমন অনেক জমি ইতোমধ্যেই এসেছে চাষাবাদের আওতায়। সামনের দিনগুলোতে কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে আরো ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে জানান তিনি । জানা গেছে, সংস্থাটিতে সম্প্রতি নতুন অর্গানোগ্রাম অনুমোদন হওয়ার পর কাজে এসেছে নতুন গতি। এর ফলে আরো নুতন ১৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং নতুন করে ৬টি ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে এসআরডিআই মোট ৪০টি আঞ্চলিক অফিস ও ২৬টি ল্যাবের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে কৃষকদের।

ব্রিফিংয়ে আরো জানা গেছে, ১৯৭২ সাল ‘মৃত্তিকা জরিপ বিভাগ রূপে পরিচিতি লাভ করে এবং প্রাথমিক জরিপ কার্যক্রম চলমান থাকে। ১৯৭৫ সালের মধ্যে দেশের প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপ সম্পন্ন করা হয়। ১৯৮৩ সালে কৃষি পূনর্গঠন, সম্প্রসারণ এবং নতুন নামকরণ করে ‘মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ নামে দেশের কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

আগামী ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস নিয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, এবার বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘মাটিকে জীবিত রাখি, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি।’ থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলের জন্ম দিনে এই মৃত্তিকা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বিজ্ঞান ইউনিয়ন ২০০২ সালে মৃত্তিকা দিবস পালনের প্রস্তাব করে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করে। জাতিসংঘের ৬৮তম সভায় অনুমোদন লাভ করে এবং ২০১৩ সাল হতে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন শুরু হয়। কোভিড ১৯ কারণে দেশে সীমিত আকারে সেমিনার ও শো-কেজিং অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৭ সাল হতে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও একজন শিক্ষাবিদ, একজন মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও একজন কৃষককে সম্মানিত করছে।

দেশের ফসল উৎপাদনে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের ভূমিকা হিসেবে জানা গেছে, সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতিত সারা দেশের প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপ সম্পন্ন করে ৩৪ খন্ডে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব তথ্য-উপাত্ত প্রধানত কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা ছাড়াও স্থানভিত্তিক ফসল নির্বাচনসহ নুতন ফসল বা জাত প্রবর্তন বা সম্প্রসারণের জন্য স্থান নির্বাচন ও সার ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়েছে। দেশের সকল উপজেলার জন্য আলাদা আলাদাভাবে ‘ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা’ প্রকাশ হয়েছে। নির্দেশিকায়হ স্থান ভিত্তিক কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের অধিক সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন ভিত্তিক ৫৩০টি ইউনিয়নের ‘ইউনিয়ন ভূমি, মাটি সার সুপারিশ সহায়িকা’ প্রকাশ করে সেবা দিচ্ছে। সারের গুণগত মান নিশ্চিত করার স্বার্থে ৭টি বিভাগীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৩,০০০টি সার পরীক্ষা করা হয়। ১০টি ভ্রাম্যমান মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে প্রতি বছর ১১২টি উপজেলার প্রায় ৫,৬০০ কৃষকের মাটি পরীক্ষা করে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ফসলের জন্য সুষম সার সুপারিশ প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা ব্যবহার করে বছরে ৩০,০০০ কৃষককে সুষম সার সুপারিশ প্রদান করা হয়। ১৯৭৫, ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে সারা দেশের ভূমি ব্যবহার মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ‘অন-লাইন সার সুপারিশ’ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। যার মাধ্যমে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে কৃষক অন লাইনের মাধ্যমে কৃষক তার জমির জন্য প্রয়োজনীয় সারের মাত্রা নিরুপন করতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে ফসল চাষাবাদে ভূমি ক্ষয় একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাকে সামনে রেখে এসআরডিআই বান্দরবানে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি এলাকার ভূমি ক্ষয়রোধে কয়েকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের দক্ষিণোঞ্চলের লবণাক্ত মাটি ব্যবস্থাপার মাধ্যমে লবণাক্ত মাটিতে ফসল চাষের জন্য খুলনার বটিয়াঘাটাতে ‘লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও

গবেষণা কেন্দ্র’ গবেষণা০ করে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- খামার পুকুর প্রযুক্তি, কলস সেচ প্রযুক্তি, দ্বি-স্তর মালচিং, ভুট্টার ডিবলিং ও ট্রান্সপ্লানটিং পদ্ধতি, পলিব্যাগের চারা রোপন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ, পলিবেডে শাক জাতীয় ফসল চাষ ইত্যাদি। ইতোমধ্যে ডিবলিং পদ্ধতিতে ভূট্টা চাষ দক্ষিণাঞ্চল এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। মাটি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম অব্যহত রেখে আগামী দিনগুলোতে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষির উন্নয়নে আরো ভূমিকা রাখার কথা বলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads