• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বিনামূল্যে টিকা

মাস্ক না পরলে হতে পারে জেল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ ডিসেম্বর ২০২০

অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কিনে মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে কোভিড-১৯ সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের সবশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হয়। গত ১৪ অক্টোবর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিন কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থনৈতিক ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মানুষকে এই ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেওয়া হবে। টাকা সরকার পে করে দিচ্ছে। তিন কোটি ভ্যাকসিন ফ্রি দেওয়া হবে।

ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে দুর্নীতি হলে ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, মেজর করাপশন কেউ করলে আমাদের জানাবেন, আমরা তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ভ্যাকসিন কিনতে সরকারের খরচ কত হবে জানতে চাইলে বলেন, ক্রয়ের চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা গাইডলাইন হচ্ছে, সেটা অনুসরণ হবে। প্রথম কারা পাবে, দ্বিতীয় ধাপে কারা পাবে সে অনুযায়ী তারা একটা প্রোগ্রাম ডেভেলপ করছে। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার-পুলিশ, প্রশাসনের লোক যারা মাঠে চাকরি করছে, তারপর বয়স্ক লোক, বাচ্চা- এরকম একটা প্রোটোকল আছে। প্রধানমন্ত্রী ১৪ অক্টোবর ভ্যাকসিন কেনার জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। বিষয়টি বুধবার অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসবে।

বৈঠকে আরো অনেকগুলো ভ্যাকসিনের বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা বলেছে যোগাযোগ রাখছে। এখনই বলা যাচ্ছে না কোনটা বেশি ইফেকটিভ হবে। আমাদের এক নম্বর কন্ডিশন হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মানতে হবে। যার সঙ্গে চুক্তি করবেন, যদি মেজর কোনো সমস্যা হয় তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকলের বাইরে গেলে ওই চুক্তির কোনো মূল্য থাকবে না। চীনের ভ্যাকসিন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রিজেক্ট করেনি। ওরা একটা টাকা চাচ্ছে। সরকার এখনো দেয়নি বা অ্যাগ্রি করেনি। আমরা ওটা এখনো বাতিলও করিনি। প্রথমে টাকা চায়নি, কিন্তু এখন চাচ্ছে।

করোনার বিস্তার রোধে বৈঠকে মাস্ক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ঘরের বাইরে মাস্ক ছাড়া বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারেও যেতে হতে পারে। সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সচিব বলেন, আগেই আমরা বলেছি, এ সপ্তাহ থেকে আরেকটু স্ট্রং অ্যাকশনে যাব। আমার মনে হয় ঢাকার বাইরে কিছুটা পজিটিভ, ডিসিরা বলছেন জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি কেয়ারফুল হচ্ছে।

ঢাকা শহরে এখনো পুরোপুরি কেয়ারফুল হয়নি, তবে মোটামুটি একটা বার্তা যাচ্ছে যে ফাইন হয়ে যাবে, ফাইন দিতে হবে ৫০০ টাকা। এখন থেকে ম্যাক্সিমাম ফাইন করা হবে। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে বলেছি সর্বোচ্চ জরিমানা করতে। তারপরও মাস্ক না পরলে কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জেলে যেতে হবে। এছাড়াতো আর কিছু করার নেই। আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না, আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে।

মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সারা দেশে যেভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে, সেভাবে আরও ৭-১০ দিন চালিয়ে এরপর থেকে তাদের আরো কঠোর শাস্তি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে বাসার বাইরে সব জায়গায় সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে প্রতিদিনই মানুষ মারা গেলেও নানা অজুহাতে এখনো অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সচেতনামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে  জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নীতিমালা-২০২০ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯- এ ফোন করে মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জনজীবনের সফলতা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনান্তে ইমার্জেন্সি সার্ভিস পলিসি ৯৯৯ তথা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা (৯৯৯ এর মাধ্যমে জরুরি সেবা দেওয়া) এখন আরো সুসংগঠিতভাবে হবে।

এনটিএমসি, বিটিআরসি- সবার সঙ্গে ইন্সট্যান্ট একটা কমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে। নীতিমালা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে- নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংকটাপন্ন মানুষকে যাতে সহায়তা করা যায়। দুর্ঘটনা ও অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়। অপরাধের শিকার কোনো ব্যক্তি বা সম্পদ উদ্ধার করা যেন সহজ হয়। দুর্ঘটনায় পতিত মানুষকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা এবং জানমাল উদ্ধারসহ দ্রুততম সময়ে দুর্গতদের যাতে হাসপাতালে প্রেরণ ও সেবা প্রদান করা যায়।

নীতিমালা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগে একটি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নামে একটি ইউনিট গঠিত হবে। কমপক্ষে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হবেন। নীতিমালায় বলা হয়েছে- কেউ যদি মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয় তবে সেটাও দেখা হবে। দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত হবে। বাচ্চা ছেলে বা কেউ যদি না বুঝে করে দ্যাট উইল বি কনসিডার। তবে যদি চিট করতে চায়, ইচ্ছা করে কেউ কিছু করতে চায় দ্যাট উইল বি পানিশ্যাবল। সেজন্য রেসপেক্টিভ আইন প্রযোজ্য হবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার শাস্তি পেনাল কোডে আছে।

‘কে কোথা থেকে ফোন করতেছে, সেটা টোটালি ডিটেক্টের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং কেউ সহজে ফলস রিং করতে যাবে না। ফোন করলে আরো যে নম্বরগুলো আছে যেমন- ৩৩৩, ১০৯- এগুলো সব ইন্টারঅপারেটিভিটি (আন্তঃসংযোগ) হয়ে যাবে। যে কোনোটায় ফোন করে যদি কেউ বলে এখানে ডাকাত পড়েছে, ওখানে অটোম্যাটিক্যালি কানেক্টেড হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এটা খুবই ইফেকটিভ করতে হবে। মেইনলি তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের গাইডলাইনে এটা (জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কার্যক্রম) হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads