• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
মধ্যবিত্ত

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মধ্যবিত্ত

  • সিনথিয়া সুমি
  • প্রকাশিত ০৫ ডিসেম্বর ২০২০

মধ্যবিত্ত পরিবার! এরা না গরিব, না ধনী। এই শ্রেণির লোকেরা পৃথিবীতে আসে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য। মধ্যবিত্ত পরিবারে মানুষ স্বপ্ন দেখে না বা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। কারন স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট খুবই মারাত্মক । তাঁদের জীবনটা হলো ঘরপোড়া গরুর মতো খুব অল্পতেই ভয় পায় । তাঁরা ইচ্ছা থাকলেই কোনো কিছু করতে পারে না। তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপে পা ফেলতে হয় চিন্তা ভাবনা করে।  তাঁরা চাইলেও আর দশজনের মতো জীবনটা কাটাতে পারে না। কারণ ছোটবেলা থেকেই তাঁদের নিয়তি ঠিক করা থাকে,পড়ালেখা করে তাঁদের কিছু করতে হবে। তাঁদের সংসারের হাল ধরতে হবে।

মধ্যবিত্তদের একটা গুণ আছে সেটি হচ্ছে নিজেদের কষ্টগুলোকে চাপিয়ে রাখা। এরা লেখাপড়াতেও মধ্যবিত্ত। কষ্ট করে, প্রাইভেট না পড়ে, টিউশনি করে স্কুল, কলেজের গণ্ডি পার করলেও ঠেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যবিত্তদের জীবনের কাহিনিগুলো নিয়ে মহাকাব্য লিখতে বসলে, কতগুলো ট্রাজিক মহাকাব্য লেখা যাবে তাঁর অন্ত নাই।

এদের টাকা আসে বাড়ি থেকে গুনে গুনে। মাসে ত্রিশ দিন, ত্রিশ দিনে নব্বইটা মিল। মিল গুনে গুনে টাকা পাঠায়। অবশ্য তাঁদের বাবা মায়ের ইচ্ছা থাকে বেশি দেবে কিন্তু উপায় থাকে না। এই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা সকালে খায় না। কেননা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে একটা মিলের টাকা চলে যায়। তাঁরা সকাল দুপুরের খাবার একসাথে খায়, এই খাবারটির নামও তাঁরা ভালোবেসে দিয়েছে (ইৎবধশষঁহপয=ইৎবধশভধংঃ + খঁহপয)। থাকা খরচ বাঁচাতে এরা এসে উঠে হলের গণরুমে।

চারজনের রুমে চব্বিশ জন। এদের থাকার কোনো অসুবিধা হয় না কারণ এরা সবাই মধ্যবিত্ত । বাড়িতে বলে তাঁরা অনেক ভালো আছে, গর্ব করে বলে সরকারি রুমে থাকে খরচ লাগে না। বছরের শুরুতে তাঁরা প্লান করে ভ্রমণে যাবে, প্লান শেষে যখন বাড়িতে টাকা চায় তখন বাবা বলে ভ্রমণে যাস না। ভ্রমণের গাড়িতে শুধু দুর্ঘটনা ঘটে, বলেই বাবা ফোনটা কেটে দেই, ফোনের এ পাশ থেকে তাঁদের সন্তানেরা বুঝতে পারে ব্যাপারটা। বুঝতে পারে বাবা দুর্ঘটনাটা বলতে অর্থসংকটের কথা বোঝাচ্ছে।

পরে বাবার মন খারাপের কথা ভেবে সন্তান, বাবাকে ফোন দিয়ে জানাই, বাবা আমিও ভেবে দেখলাম ভ্রমণের গাড়িতেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে তাই ভাবছি যাব না। সন্তানের এতোটা সহজে বাবার কথাটা বুঝে ফেলার ব্যাপারটা বাবাও উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু কোনো উপায় থাকে না কিছু করবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিন থেকেই বাবা-মা দিন গোনে আর কতদিন পর তাঁর সন্তান চাকরি করবে। একটা বছর যেতেই বলে, তুইতো আর তিন বছর পর চাকরি করবি স্বপ্ন দেখে বাবা-মা তাঁর সন্তান এটা-ওটা হবে। তাঁদের সন্তান কি চাকরি করবে সেটাও ঠিক করে দেয় তাঁদের বাবা-মা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা তাঁদের বাবা-মায়ের স্বপ্নটাকেই নিজের স্বপ্ন করে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপ দেয়।

পৃথিবীতে দুই শ্রেণির মানুষ থাকা উচিত। একটা উচ্চবিত্ত অন্যটা নিন্মবিত্ত। মধ্যবিত্ত নামে কোনো কিছু থাকা অনুচিত। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের আত্মসম্মান আর ইগো, দুইটাই খুব বেশি থাকে। সে জন্মের সময়েই একগাদা ইগো সাথে করে নিয়ে জন্মায়। সে স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয় এবং একপর্যায়ে সে বুঝতে পারে জীবনটা স্বপ্ন নয়, জীবনটা বাস্তব।      ...(চলবে)

 সে সব সময় সুখ খোঁজে, জীবনের মানে খুঁজে বেড়ানো তার স্বভাব ।

সে অল্পতে সন্তুষ্ট হতে পারে না। আবার অল্পতে অসন্তুষ্টুও থাকতে পারে না। সে সবার কাছে ভালোবাসা খোঁজে কিন্তু, এটা তার কাছে অপরাধ। উচ্চবিলাসী হওয়া তার জন্য গুনাহের পর্যায়ে পড়ে। তার আবেগ অত্যধিক বেশি থাকে । কিন্তু সে খুব ছোট থাকতেই আবেগকে গলা টিপে খুন করতে শিখে ফেলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই আবেগপ্রবণ, পাগলাটে, স্বপ্নবিলাসী সন্তানদের কেউ বুঝতে চায় না।

এত কিছু পরেও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানটি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে আমি সুখেই আছি। বলবে না কেন যে সুখে আছি? সুখ জিনিসটা কি তাতো তাদের উপলব্ধিও হয়নি কোনদিন। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে যখন দেখে প্রাইভেটকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, সে তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে যে তার যখন টাকা হবে সে কি রংয়ের কার কিনবে? তাতে কার পাশে বসে সে ড্রাইভ করবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে মুহূর্তেই স্বপ্নে হারিয়ে যায়।

স্বপ্নের ঘোর যখন ভাঙে,তখন মনে পড়ে এখনো অনেক পথ হাঁটতে হবে, ক্লাসরুম এখনো অনেক দূরে। আবার যখন মাথার ওপর দিয়ে বিমান চলে যায় তখন সে স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে পাইলট হবে আর তাঁর বাবা- মাকে তাতে চড়িয়ে ঘোরাবে। স্বপ্ন ভাঙতেই দেখে বাবা-মা তাঁর সামনে নানা জায়গায় সেলাই করা করা কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছে। তখন মনের ভিতর হু-হু করে কেঁদে ওঠে।

ছেলেমেয়েদের থেকে বেশি স্বপ্নবিভোর থাকে মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা। তাঁরা স্বপ্ন দেখে তাদের ছেলে অনেক বড় হবে। সমুদ্র তীরে তাঁদের একটা বাড়ি করে দেবে, সেখানে বসে তাঁরা সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করবে! স্বপ্ন ভাঙতেই মা দেখে সবজি কাটতে গিয়ে হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। হ্যাঁ এটাই মধ্যবিত্ত পরিবার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads