• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মাত্র একজন

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

করোনায় শতাধিক চিকিৎসকের মৃত্যু

ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মাত্র একজন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১৩ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। অথচ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ পাননি সরকার প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএমএর হিসাব অনুযায়ী গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত করোনায় ৮ হাজার ১৩৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক দুই হাজার ৮৮১ জন, নার্স এক হাজার ৯৭৩ ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন তিন হাজার ২৮১ জন। করোনা মহামারীর এ সময়ে সম্মুখযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন গত ৭ এপ্রিল। অথচ আট মাসের বেশি সময় পার হলেও কোনো চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী কেউই সেই প্রণোদনা পাননি। গত ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। তার স্ত্রী চৌধুরী রিফাত জাহান গত ২৭ এপ্রিল সরকারের কাছে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ তার আবেদনের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায় এবং গত কোরবানির ঈদের পর তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়।

সবশেষে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাসপাতালটির সনোলজিস্ট ডা. সাইদুল ইসলাম। সরকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবাদানকারী চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে থাকা মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গত ২৩ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অণুবিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ-সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

সেখানে বলা হয়, করোনাভাইরাসে পজিটিভ হলে গ্রেড ১ থেকে ৯ পর্যন্তরা পাবেন ১০ লাখ টাকা; আর মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা, গ্রেড ১০ থেকে ১৪ পর্যন্তরা করোনায় আক্রান্ত হলে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা; আর মারা গেলে পাবেন ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর ১৫ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হলে পাবেন পাঁচ লাখ টাকা; আর মারা গেলে ২৫ লাখ টাকা।

পরিপত্রে আরো বলা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগ থেকে আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণকারীরা এই অর্থ পাবেন। অর্থ দেওয়া হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা করোনা-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ খাত থেকে। এজন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে। ৮০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি চাকরিরত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রণোদনা হিসেবে (ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, ইত্যাদি) দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই বিষয়ে একাধিক ‘অতীব জরুরি’ প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরও কেটে যায় কয়েক মাস।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ৯ জুলাই অবিলম্বে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বাজেট অণুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফের স্বাক্ষর করা ‘কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় সরাসরি নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের এককালীন বিশেষ সম্মানী’ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকার এককালীন বিশেষ সম্মানী দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

পরিপত্রে আরো বলা হয় ‘বিশেষ সম্মানীর আওতায় শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এককালীন দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকেও সেদিন থেকে তিন দিনের ভেতরে করোনারোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যদের নাম পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপরই অর্থমন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করে, এমনটা জানিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে চিকিৎসকরা এখন পর্যন্ত প্রাপ্য প্রণোদনা পাচ্ছেন না। অথচ অন্যান্য যারা ফ্রন্ট লাইনার কর্মী রয়েছেন তারা প্রণোদনা ঠিকই পেয়েছেন। গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৪ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অন্য ফ্রন্টলাইনাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ ও র্যাবের ৩৮ জন, প্রশাসনের চারজন আর কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারের সাবেক পরিচালক। তিনিও প্রণোদনা পেয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ থাকার পরও একজন মাত্র চিকিৎসক তার প্রণোদনা পেয়েছেন।’

ডা. ইহতেশামুল আরো বলেন, ‘এজন্য আমি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছি। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে, আমরা অর্থ ছাড় করে দিয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তালিকা না দিলে আমরা কীভাবে কার কাছে টাকা দেব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত তালিকা পারল না। অথচ আমাদের কাছে প্রতিদিনই হালনাগাদ তালিকা হচ্ছে।’

চিকিৎসকদের প্রণোদনার টাকা অনেক আগেই ছাড় করেছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার একটি সূত্র বলে, ‘টাকাতো আমাদের কাছে নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। তারা তালিকা করতে পারছে না।’

তালিকার বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘কাজ চলছে, হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads