• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

৯৫ শতাংশ পণ্যের মান তদারকি হয় না

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) নজরদারির অভাবে বাজারে আসছে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য। সারা  দেশে পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে সাড়ে ১৬ হাজার লাইসেন্স দিলেও এগুলোর কোনো তদারকি করছে না সংস্থাটি। এতে দেশের ৯৫ শতাংশ পণ্যের মানই তদারকির বাইরে রয়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

অভিযোগ রয়েছে, সংস্থার দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও উদাসীনতায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে মানহীন পণ্য বাজারজাত হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পণ্যের মান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তথ্যমতে, এ যাবৎ (চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত) সারা দেশে প্রায় ১৭ হাজার পণ্যের লাইসেন্স দিয়েছে বিএসটিআই। এই বিপুল পরিমাণ অনুমোদিত পণ্যের মান যাচাইয়ে বিগত তিন অর্থবছরে সংস্থাটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ৭৭৫টি।  এতে মামলা হয়েছে ৭৮৪টি এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৭ লাখ ৯ হাজার ২২৬ টাকা। এছাড়া বিগত তিন বছরে বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স দল ২ হাজার ৯৯০টি প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন চালিয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি দুদকের সাবেক  চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বিএসটিআই খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স দিয়ে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেগুলোয় ৬ মাস অথবা ১২ মাস অন্তর পরিদর্শন করা হয়। লাইসেন্স নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে মান বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন করছে কি না, সেখানে রসায়নবিদ কিংবা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে কি না, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে কি না, তা তদারকির দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। কিন্তু বিএসটিআই’র সার্বিক গতিবিধি দেখে মনে হয় অনুমোদিত পণ্যের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মান যাচাই করতে পারে বিএসটিআই। বাকি ৯৫ শতাংশ তদারকির বাইরে রয়ে যায়। খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো শক্তিশালী করার পরার্মশ দেন তিনি। এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক দেওয়ান আফছার উদ্দিন বলেন, বিএসটিআইয়ের জনবল সংকট রয়েছে। এত অল্প জনবল দিয়ে সকল পণ্যের মান তদারকি সম্ভব না। যে জনবল আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৫-৭% পণ্যের মান তদারকি সম্ভব। তবে এর মধ্যেও পণ্যের মান ঠিক রাখতে তাদের কাজ করে যেতে হবে। যারা মানহীন খাবার উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।

বিএসটিআইয়ের একজন পরিচালক জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স নেওয়ার সময় শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করে ঠিকই কিন্তু পরে পরিদর্শনে গিয়ে ৩০-৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেই এর গরমিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলোয়। সুপেয় পানির ক্ষেত্রে ১০-১২টি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক থাকে। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে এসব চোখে পড়ে না।

বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) নিলুফা হক বলেন, সার্ভিল্যান্স দল রুটিনমাফিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। কতগুলো প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করা হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার তালিকা করা হয়। তবে পরিদর্শনের পর যেসব প্রতিষ্ঠানে ত্রুটি পাওয়া যায়, তাদের সংশোধনের জন্য সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়। এরপরও সতর্ক না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়। 

আমরা যখন বিদেশে কোথাও খেতে যাই নিশ্চিন্তে খাই উল্লেখ করে বিএসটিআই মহাপরিচালক ড. নজরুল আনোয়ার বলেছেন, দেশের কোথাও খেতে গেলে দুশ্চিন্তা কাজ করে। এটা আমাদের জাতিগত দুর্ভাগ্য। আমরা সবকিছুর মধ্যেই একটু লাভ-লোকসানের হিসাব করি। আমরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে কোনো সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারিনি। তবে আশা করি ভবিষ্যতে আমরাও সিস্টেমের মধ্যে আসতে পারব।

পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএসটিআই শুধু কাজ করে ফিনিশড প্রোডাক্ট নিয়ে। কৃষকরা যেখানে উৎপাদন করে সেখানে কিন্তু আমরা কাজ করতে পারি না। কৃষকদের চাষ থেকে ফাইনাল যে প্রোডাক্ট হয় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করি। অনেকেই আমাদের বলেন, সবকিছু দেখার দায়িত্ব বিএসটিআই’র এটা সঠিক না। পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আছে। সবার কিন্তু দায়িত্ব ভাগ করে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। আমাদের দায়িত্ব ১৮১টি ধরন পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। হয়তো বলতে পারেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন হচ্ছে না। সেটা হতেও পারে। কারণ আমরা ৮টি বিভাগ মাত্র ৩০০-৪০০ কর্মকর্তা নিয়ে কাজ করি। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে সারা দেশে কাজ অনেক কঠিন। তবে আমরা বিএসটিআই’র জনবল বৃদ্ধিতে কাজ করছি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads