• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অর্থনীতি ২০২০

নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

২০২০ সালে প্রথম প্রান্তিক না পেরোতেই করোনাভাইরাস সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। অথচ রাজনৈতিক স্থিতির সঙ্গে অর্থনীতিতে স্বস্তি নিয়ে বছরটি শুরু করেছিল বাংলাদেশ। শেষ প্রান্তিকে এসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ জাগিয়ে রেখেছে শঙ্কা। ওই উদ্বেগ সঙ্গী করেই ২০২১ সালে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।

আশার কথা হলো, এই মহামারী যতটা বিপদে বাংলাদেশকে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন পদক্ষেপে তা অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো গেছে। সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো এ বছরই পূর্ণ অবয়ব পেয়েছে। সেইসঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সরকারকে জোগাচ্ছে সাহস। পুরো বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল বলেন, এই মহামারীর প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর যে-কোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই মহামারীকালেও বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে চলেছেন আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা। এর ওপর ভর করে ৪২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে রিজার্ভ। রপ্তানি আয় এখনো ইতিবাচক। মূল্যস্ফীতি সহনীয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পূর্ণ অবয়ব দেশবাসীর মতো আমাদেরও (সরকার) সাহসী করে তুলেছে। এই সাহস দিয়েই আমরা কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ গড়ে তুলব।

করোনাভাইরাসের টিকা আসার খবর ও টিকে থাকার সাহস জোগাচ্ছে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের। পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। তবে দেশের অর্থনীতিকে আবার পথে ফেরানোই যে ২০২১ সালের মূল কথা হবে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত।

আর সেজন্য অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের দিকেও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যে ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন, সেগুলো করতে হবে। অর্থাৎ যে রিফর্মসগুলো (সংস্কার) জোরালোভাবে চালানো দরকার, সেগুলো করতেই হবে। বিশেষ করে, রজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেও জোরালো পদক্ষেপ দরকার।

ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্যও ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। কিন্তু মহামারীর মধ্যে দুই মাসের লকডাউন আর বিশ্ব বাজারের স্থবিরতায় তা বড় ধাক্কা খায়।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে আসে, যদিও এই অঙ্ক আরো কম হওয়ার কথা বলে অনেক বিশ্লেষকের ধারণা।

মহামারীর বাস্তবতার মধ্যেই চলতি  অর্থবছরে (২০২০-২১) ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে সরকার। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অতটা আশা দিতে পারছে না।

গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক বলেছে, মহামারীর ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আর আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে এই দাতা সংস্থাটি।

আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্ব ব্যাংক যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সব সূচকই এখন ভালো। আমার ধারণা, এবার আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে থাকবে।

করোনাভাইরাসের এই সংকটের মধ্যে খোলা রাখা হয়েছে পোশাক কারখানাগুলো। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য রাজধানীর মৌচাকে স্নোটেক্স নামের একটি গার্মেন্টে ঢোকার আগে শ্রমিকদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস ‘মোটামুটি’ গেছে। বাকি ছয় মাসে বড় ধরনের উন্নতি না হলে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একটা বিষয় আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি ৫ শতাংশও হয়, তাহলেও সেটা হবে খুবই ভালো হবে। পৃথিবীর অনেক দেশই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না।

এ বছরের একটি আলোচিত বিষয় ছিল মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে বাংলাদেশের পেছনে ফেলার পূর্বাভাস। আইএমএফের ওই পূর্বাভাস নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা হয়।

গত অক্টোবরে আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের হিসাব ধরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৪ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৮৮৮ ডলারে উন্নীত হতে পারে।

অন্যদিকে লকডাউনের কারণে সংকোচনের মুখে পড়া ভারতের মাথাপিছু জিডিপি সাড়ে ১০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৭৭ ডলারে নামতে পারে।

তবে আগামী বছর ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত হবে, তাতে মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে সামান্য ব্যবধানে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

মহামারীকালে চাকরি হারিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে অনেক প্রবাসী কর্মীকে।

মহামারীর অভিঘাতে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিই টালমাটাল। অনেক দেশেই কাজ হারিয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা। সরকারি হিসাবে গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে রপ্তানি বাণিজ্যের মতো প্রবাসী আয়েও বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তবে তা ঘটেনি। বরং প্রবাসীর পাঠানো অর্থই আশা বাঁচিয়ে রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ২৪ দিনেই ১৬৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স বাবদে দেশে এসেছে ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিট্যান্স আর কখনো আসেনি। ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এই মহামারীর বছরেই প্রবাসী আয়ে আরো একটি রেকর্ড হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।

রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মহামারীর মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৩ বিলিয়ন (৪ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের মাইলফলকে ছুঁতে চলেছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ ডিসেম্বর রোববার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ বছরের মধ্যেই রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে সাড়ে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ যে আয় করেছে, তার ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ যে আয় করেছে, তার ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।

মহামারীর ধাক্কায় রপ্তানি খাত যতটা পিছিয়ে পড়েছে, বড়দিনকে ঘিরে পোশাক রপ্তানির পালে হাওয়া লাগলে তা কিছুটা হলেও সামলে নেওয়া যাবে বলে আশা করছিলেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সেই আশায় বাদ সাধলেও এর মধ্যেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে রপ্তানি বাণিজ্য, আর তা সম্ভব হয়েছে নিট পোশাকে ভর করে।

মহামারীতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছিল; ওই মাসে সব মিলিয়ে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি ডলার।

বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে ও জুন মাসে রপ্তানি আয় বাড়তে শুরু করে। কিন্তু অক্টোবরে আবার হোঁচট লাগে রপ্তানি আয়ে। নভেম্বরে এসে ফের প্রবৃদ্ধির দেখা মেলে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এক হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি।

এই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ যে আয় করেছে, তার ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, কম দামের পোশাক, বিশেষ করে নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি থাকলেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন করে ‘লকডাউন’ শঙ্কাও জাগাচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক মাসে ভালো কিছুর আশা তারা করতে পারছেন না।

তবে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, এই দুঃসময়ে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি হওয়াটাই আশার কথা।

মহামারীতে লকডাউনেও সচল ছিল চট্টগ্রাম বন্দর, তবে আমদানি-রপ্তানি দুটোই কম হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছিল। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ভাগে তা আরো কমেছে। এর অর্থ হলো, দেশের মানুষের ভোগ ব্যয় কমেছে এবং নতুন শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম।

এই চার মাসে খাদ্য পণ্য ছাড়া সব পণ্যের আমদানিই কমেছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জ্বালনি তেল আমদানির এলসি কমেছে ৩৫ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামালের আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

মহামারীর মধ্যে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত বেড়েই চলেছে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৫ কোটি ৪০ লাখ (৪.০৫ বিলিয়ন) ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই সময়ে ১৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল।

আহসান এইচ মনসুর বলছেন, রেমিট্যান্স উল্লম্ফন এবং আমদানি ব্যয় কমার কারণেই লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত রয়েছে।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়েছিল। আশঙ্কা করা হয়েছিল, মহামারীর কারণে এবার রাজস্ব আদায় অনেক কমে যাবে। তবে পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সময়ে ৮৭ হাজার ৯২ কোটি ৭১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি।

তবে এই পাঁচ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে প্রণোদনায় ভর করে বাড়তে থাকা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ফের তলানিতে নেমে এসেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছিল। প্রণোদনা ঋণে ভর করে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়। কিন্তু অক্টোবরে তা এক শতাংশ পয়েন্ট কমে আবার সেই ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। চার মাস পার হয়ে গেলেও নিয়েছে মাত্র ৯৪৫ কোটি টাকা।

ধারণা করা হয়েছিল, মহামারীর এই কঠিন সময়ে সরকারকে ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ করে দেশ চালাতে হবে। তবে বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এবং মহামারী মোকাবিলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে প্রচুর ঋণ পাওয়ায় সরকারকে ব্যাংকের দারস্থ হতে হচ্ছে না। এ কারণেই ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে।

২০১০ সালের ধসের পর নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি। মাঝেমধ্যে এক-দুই মাসের জন্য বাজারে কিছুটা ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা গেলেও পরে আর সেটা স্থায়ী হয়নি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আরো একটি বড় ধসের মুখে পড়ে পুঁজিবাজার। বেশিরভাগ শেয়ারের দর তলানিতে নেমে যায়।

মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে লকডাউনের মধ্যে দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকে লেনদেন। ৩১ মে থেকে দেশের পুঁজিবাজারে ফের লেনদেন শুরু হয়।

মহামারী শুরুর পর গত জুনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স যেখানে ৪ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গিয়েছিল, সেই সূচক এখন সোয়া ৫ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। লেনদেনও ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকা।

গত মঙ্গলবার দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স  ৫ হাজার ৩৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads