• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

যেভাবে শুরু স্বাধীনতার সংগ্রাম

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২১

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে পারেনি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তাই প্রথম থেকেই তারা ক্ষমতা হস্তান্তরে  তালবাহানা শুরু করে দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর ৩ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশে পাকিস্তানের পিপল্স পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঢাকা আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি তা বাতিল করেন। অথচ পশ্চিম পাকিস্তান হতে বেশকিছু সংখ্যক নব-নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য ও পশ্চিম পাকিস্তানি আওয়ামী লীগ নেতা ৩ জানুয়ারি রমনা রেসকোর্সে আওয়ামী লীগের শপথ দিবসের সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকা পৌঁছেন। ওই দিন ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ সমাবেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনিবার্চিত আওয়ামী লীগ দলীয় ৪১৯ জন সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সমাবেশে তাঁর নীতি নির্ধারণী বক্তব্য দেন। সমাবেশে নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্যগণ দেশে শোষণ, অবিচার ও বৈষম্যমুক্ত এক নয়া সমাজ গড়ার জন্য ১১ দফা ও ৬ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের শপথ নেন।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান রমনা রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে সাবধান করে বলেন, ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। জনতাকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকবেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঘোষণা করেন যে, ৬ দফার শাসনতন্ত্র প্রণীত হবেই, কেউ এটা ঠেকাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রদত্ত নীতি নির্ধারণী বক্তৃতায় শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে ঘোষণা করেন যে, সংখ্যায় বেশি আছি বলে একথা বলবো না যে, কারো সহযোগিতা চাই না। আমরা সহযোগিতা চাই, তবে নীতির প্রশ্নে কোনো আপস নেই। তিনি বলেন, ৬ দফা ও ১১ দফা আওয়ামী লীগ বা মুজিবের সম্পত্তি না, জনতার সম্পত্তি। একে রদবদল করার অধিকার সদস্যদের নেই।

কিন্তু জনগণের রায়কে তোয়াক্কা না করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে ওই দিন দেশের সব জায়গায় হরতাল আহ্বান করেন এবং তিনি সংসদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত না মানার ঘোষণা দিয়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে গণজমায়েতের আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৩ মার্চ সারা দেশে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। এসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর গুলিতে বহু লোক মারা যায়। ফলে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে কার্ফ্যু জারি করা হলো।

অবস্থার বেগতিক পরিস্থিতি আঁচ করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। এরপর তিনি ঢাকায় এলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে। মূলত তাঁর এ আলোচনা ছিল কূটকৌশলের অংশ। বাঙালির বিজয় নস্যাৎ করতে আলোচনার আড়ালে চলছিল পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ৭ মার্চে রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

অন্যদিকে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য মওলানা ভাসানী উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি ১৪ দফার ভিত্তিতে রাজবন্দিদের মুক্ত করার জন্য ‘জেল ভাঙা’ নামে এক আন্দোলনের ডাক দেন। সামরিক আইন লঙ্ঘন করে মিছিল সভা চলতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতির দিশারি শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবিতে বাংলাদেশের শাসন নিজ হাতে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য ৩৫টি বিধি জারি করেন।

পরবর্তীতে ইয়াহিয়া কোনো সমঝোতায় পৌঁছার আগেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রহসনের আলোচনা ভেঙে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত যান। তাঁর বিদায়ের পরই ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা-সহ সারা দেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যায় নেমে পড়ে। শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র এবং সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনীর বাংলাদেশি সদস্যদের ওপর হামলা। আর ওই দিনই, ২৫ মার্চ, ১৯৭১, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হবার পূর্বে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এ ঘোষণা ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামে পাঠান। ২৬ মার্চ ১৯৭১, দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রচার করেন। আর এভাবেই শুরু হয়ে যায় বাঙালির স্বাধীনতার যুদ্ধ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads